এশিয়া কাপে প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার ওমানের বিপক্ষে মাঠে নামছে ভারত। টুর্নামেন্টে ‘এ’ গ্রুপের এই ম্যাচের আগে দুদলের অবস্থান দুই মেরুতে। ভারত আগেই সুপার ফোরে নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে টানা দুই হারে টুর্নামেন্ট থেকে ইতিমধ্যেই ছিটকে গেছে ওমান। যে কারণে আজ রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হতে যাওয়া ম্যাচটি শুধুই নিয়মরক্ষার; মানে উত্তেজনার পারদ একেবারেই নিচে।
তবে ওমান দলে সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার বিনায়ক শুক্লার উপস্থিতি ও ম্যাচের আগে তার দেওয়া সাক্ষাৎকার বাড়তি গুরুত্ব যোগাচ্ছে আবু ধাবির জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আজকের লড়াইয়ের।
এক সময় ভারতের জাতীয় দলের খেলার জন্য কঠিন লড়াই করেছেন বিনায়ক। তবে উত্তর প্রদেশের এই ক্রিকেটারের আশা পূরণ হয়নি। নীল জার্সি গায়ে দেওয়ার সুযোগ পাননি তিনি। ব্যর্থতার বোঝা ঘাড়ে নিয়ে ২০২১ সালে ভারতীয় ক্রিকেটই ছেড়ে দেন বিনায়ক। এরপর ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে। সেখানে গিয়ে কাজ নেন ডেটা অপাটরের।
ওমান গিয়েও ক্রিকেটকে আকড়ে ধরে রাখেন বিনায়ক। লক্ষ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা। তিন বছরের প্রচেষ্টার পর অবশেষে ২০২৪ সালে স্বপ্ন পূরণ হয় তার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওমানের হয়ে অভিষেক হয় বিনায়কের।
মাতৃভূমি ভারতের বিপক্ষে নামার আগে ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে নিজের সংগ্রামের গল্প ও আবেগ প্রকাশ করেন ওমানের উইকেটরক্ষক এই ব্যাটার। যে ম্যাচে তিনি মুখোমুখি হবেন বাল্যবন্ধু কুলদীপ যাদব ও রিংকু সিংয়ের।
শুরুতেই ভারতীয় ক্রিকেট ছেড়ে ওমানে যাওয়ার প্রসঙ্গে বিনায়ক বলেন, ‘এটা ছিল খুব কঠিন একটি সিদ্ধান্ত। আমি ২০২১ সালের নভেম্বরে ভারতীয় ক্রিকেট ছেড়ে দিই এবং ওমানে চলে আসি স্বপ্ন পূরণের আশায়। এখানে আমি ন্যাশনাল মেটাল ক্যানসে ডেটা অপারেটর হিসেবে কাজ করি। কানপুরে থাকাকালীন স্থানীয় ক্লাবে খেলতাম, যেমন পিএসি ক্রিকেট গ্রাউন্ড, পরে বিভিন্ন শহরে ঘুরেছি। কিন্তু সমস্যা ছিল, রাজ্য দলে সুযোগই পাচ্ছিলাম না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে আমি অনেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে খেলেছি, যেমন অশোক দিন্ডা আর মনোজ তিওয়ারি। তারা আমাকে অনেক দিকনির্দেশনা করেছেন, বিশেষ করে উইকেটকিপিংয়ে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের অনুশীলন সেশনে দিনেশ কার্তিকের সাথেও দেখা হয়েছিল। মায়াঙ্ক আগারওয়াল, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের মতো (কেরালার) রঞ্জি ট্রফি ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধেও খেলেছি। উত্তর প্রদেশে উপেন্দ্র যাদব, শিবম মাভির সঙ্গে ট্রেনিং করেছি, আর পরে পশ্চিমবঙ্গে রণজোৎ সিং খেরা ও করণ লালের সঙ্গে খেলেছি।’
উইকেটকিপার-ব্যাটার বিনায়কের আদর্শ মহেন্দ্র সিং ধোনি। ধোনিকেই নিজের গুরু বলে মানেন তিনি। যদিও এখনো তার সঙ্গে দেখা হয়নি।
বিনায়ক বলেন, ‘আমি কয়েকজন সিনিয়রের সঙ্গে কথা বলি, এরপর আমার কোচ প্রকাশ পালান্দে স্যার আমাকে সুযোগ দেন মুসকাটে (ওমানের রাজধানী) যেতে। তিনি বলেন, অন্তত দুই বছর থাকতে হবে, আর ভালো পারফর্ম করলে তিন বছরের মধ্যে দেশের হয়ে খেলার সুযোগ পেতে পারি। উইকেটকিপার-ব্যাটার হিসেবে আমার অনুপ্রেরণা সবসময় ধোনি। যেভাবে তিনি ম্যাচ শেষ করেন আর দলকে নেতৃত্ব দেন, তা অতুলনীয়। আমি কখনো তাকে দেখিনি, তবে একদিন দেখা করার আশা রাখি।’
কুলদীপ যাদবের সঙ্গেও একাধিকবার খেলেছেন বিনায়ক। বলেন, ‘ভারতে কুলদীপের সঙ্গে অনেক ম্যাচ খেলেছি। আশা করি এবার দেখা হবে। আমাদের জন্য পাকিস্তান-ভারতের মতো দলের বিপক্ষে খেলা অনেক বড় সুযোগ। ছোটবেলায় সবসময় টিভিতে এদের ম্যাচ দেখেছি। তাই নার্ভাস লাগছে, তবে উচ্ছ্বসিতও আছি। মনে আছে, একবার কানপুরে বন্ধুত্বপূর্ণ ম্যাচে কুলদীপ ভাই বল করছিল, আমি চার মেরেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘ওহ, ভালো শট!’ সেসব স্মৃতি আমি সবসময় মনে রাখব।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের বিপক্ষে খেলা খুবই বিশেষ হতে যাচ্ছে। আমি একসময় ভারতে খেলতাম, আর এখন খেলছি ওমানের হয়ে—এর চেয়ে বেশি কিছু চাইতে পারি না। বুমরাহ, সূর্যকুমার যাদব, কুলদীপ আর শুবমান গিলের মতো খেলোয়াড়দের বিপক্ষে নামা শুধু আমাদের জাতীয় দলের জন্যই নয়, আমার জন্যও বিরাট ব্যাপার। বিশেষ করে কুলদীপের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করার অপেক্ষায় আছি।’
এমএইচ/এমএস