ঢাকার সাত কলেজ নিয়ে গঠিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আগামী বছর যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে চলতি বছরের শেষ দিকে নতুন আইন করা হবে। সেই পর্যন্ত সাত কলেজের কার্যক্রম একটি স্বতন্ত্র কাঠামোর অধীনে চলবে।
আগামী সপ্তাহে একজন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হতে পারে, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ভর্তি, রেজিস্ট্রার ও হিসাব) প্রতিনিধিদের নিয়ে অন্তর্বর্তী কাঠামো পরিচালনা করবেন। এই কাঠামোর অধীনে বর্তমান শিক্ষার্থীরা তাদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ পাবেন। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষাও এই কাঠামোর অধীনে অনুষ্ঠিত হবে।
ইউজিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের কমিটির সদস্য সচিব ও ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অতিরিক্ত পরিচালক জামাল উদ্দিন কালবেলাকে জানান, কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বিদেশে থাকায় তার দেশে ফেরার পর নিয়োগ সম্পন্ন হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রশাসক নিয়োগের জন্য ইতোমধ্যে মৌখিক পরীক্ষা নিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রশাসক সাত কলেজের একজন অধ্যক্ষ হবেন, এবং যেই কলেজের অধ্যক্ষ প্রশাসক হবেন, সেটি অন্তর্বর্তী প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। সাত কলেজেই অধ্যক্ষদের নেতৃত্বে কো-অর্ডিনেশন ডেস্ক থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন ২০২৬-এর খসড়া ডিসেম্বরের মধ্যে প্রস্তুত করা হবে। এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হতে পারে অথবা সংসদ নির্বাচন হলে, সংসদে পাসের জন্য উত্থাপন করা হবে।
সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর টিমের অন্যতম সদস্য, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্তে আমরা খুশি। এটি আমাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। এখন আমাদের দাবি, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ দিতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর টিমের অন্যতম সদস্য, কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বারি বলেন, ‘২০২৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হবে বলে আমরা শুনেছি। তবে, আমরা শিক্ষার্থীরা চাচ্ছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়ে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করবেন। যেহেতু ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে, তাই এর আগেই আমরা এই কাজটি সম্পন্ন করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন,‘শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়ে ইউজিসি যেভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তার জন্য আমরা ইউজিসিকে সাধুবাদ জানাই। আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি হওয়ার পর দ্রুত সময়ে কার্যক্রম শুরু হবে। ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে।’
বর্তমানে ঢাবির অধীনে সাত কলেজের ৪টি ব্যাচ আছে-
১. ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ : চতুর্থ বর্ষ
২. ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ : তৃতীয় বর্ষ
৩. ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ : দ্বিতীয় বর্ষ
৪. ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ : প্রথম বর্ষ
৫. ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শেষ হতে ২০৩১ সাল পার হয়ে যাবে। তবে গণমাধ্যমে প্রচারিত ২০৩১ সালের পরে বিশ্ববিদ্যালয় চালুর তথ্য ভুল বলে নিশ্চিত করেছে বিশেষজ্ঞ কমিটি।
বিশেষ মডেলে পরিচালনার পরিকল্পনা
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি হবে দেশের প্রথম ভিন্ন ধারার বিশ্ববিদ্যালয়। ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের কমিটি এ নিয়ে কাজ করছে। প্রস্তাবিত ‘হাইব্রিড মডেল’ অনুযায়ী—
১. ৪০% ক্লাস হবে অনলাইনে, ৬০% সশরীরে।
২. সাতটি কলেজে সব বিষয়ে পড়াশোনা হবে না।
৩. অনুষদভিত্তিক পাঠদান হবে, যেমন: সরকারি তিতুমীর কলেজে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত বিষয়গুলোর ক্লাস হতে পারে। অন্যান্য কলেজে অন্যান্য অনুষদের ক্লাস হবে।
ইডেন মহিলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ ছাড়া অন্যান্য কলেজগুলোতে এখন উচ্চ মাধ্যমিক স্তর চালু আছে। বিশেষজ্ঞ কমিটি মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কলেজগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নও জরুরি।
সাত কলেজের জমির পরিমাণ
১. ঢাকা কলেজ : ১৮ একর
২. ইডেন মহিলা কলেজ : ১৮.৩ একর
৩. সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ : ১ একর
৪. কবি নজরুল সরকারি কলেজ : ৩ একর
৫. বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ : ৩ একর
৬. সরকারি বাঙলা কলেজ : ২৫ একর
৭. সরকারি তিতুমীর কলেজ : ১১ একর
৮. সাত কলেজে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা : ১,৬৫,০০০+
৯. শিক্ষক সংখ্যা : ১,২০০
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিনের একটি সমস্যার সমাধান পেতে যাচ্ছেন। নতুন কাঠামো বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার মান বাড়বে, প্রশাসনিক জটিলতা কমবে এবং শিক্ষার্থীরা আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ পাবেন।