যে কোনো খেলার উন্নয়নের অন্যতম শর্ত হচ্ছে মাঠ। খেলার জায়গা না থাকলে অনেক সময় পরিকল্পনা তৈরি করেও তা বাস্তায়ন সম্ভব হয় না। এ বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন ঢাকার বাইরে কয়েকটি জেলায় ভেন্যু পাওয়ার চেষ্টা করছে। ফেডারেশনের নতুন অ্যাডহক কমিটি মাঠ সংকট নিয়ে আলোচনা করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সাথে। কোন কোন জেলায় হকি খেলার মতো মাঠ আছে সেই খোঁজ নিয়ে জানালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছে ফেডারেশনকে।
বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল রিয়াজুল হাসান (অব.) বলেছেন, ‘কয়েকটি জেলায় ভেন্যু পাওয়ার জন্য আমি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছে, ফেডারেশনের অর্থায়নের ব্যবস্থা থাকলে কোন জেলায় কোন মাঠ চাই সেটা জানাতে এবং সেটা যদি সরকারি জায়গা হয় তাহলে তারা দেওয়ার উদ্যোগ নেবে। তখন ওই মাঠটা হকি ফেডারেশনের অধীনে দেওয়া হবে। এক কথায় পছন্দ করে মাঠ আমরা ফেডারেশনের অধীনে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
যেসব জেলায় হকি খেলা হয় সেই জেলাগুলো ধরেই ফেডারেশন মাঠ খুঁজবে। ‘আমরা বেশ কয়েকটি জেলার সাথে আলাপ করেছি। কোথায় মাঠ আছে, কেমন অবস্থা। আমরা ঈদের পর কয়েকটি জেলা পরিদর্শন করবো। প্রথম ধাপে আমরা রাজশাহী, দিনাজপুর ও চট্টগ্রামে যাবে মাঠ দেখতে। তারপর অন্যান্য জেলায়। আমরা মাঠ খুঁজে পেলে সেই নামগুলো জমা দেবো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে’-বলেছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক।
মাঠ খুঁজে পেলে সেগুলো আপনারা কীভাবে পেতে চান? রিয়াজুল হাসান বলেন,‘আমরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লিজ হিসেবে ওই মাঠগুলো পেতে চাইবো। যেমন ১০ বছর, ১৫ বছর তা তার চেয়ে বেশি। এভাবে ৫ জেলায়ও যদি পাঁচটি মাঠ পাওয়া যায় তাহলে হকির উন্নয়নে কাজে লাগানো যাবে।’
এখন দেশের কোন কোন জেলায় হকি খেলা সচল আছে? ‘এখন চট্টগ্রাম, রাজশাহী, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা খেলে। আবার মেয়েদের ল আছে যেমন-নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ আছে এবং নেত্রকোনায়। দিনাজপুর ও রংপুরেও মেয়েদের খেলা আছে কিছু। আমরা জেলা পর্যায়ে হকি খেলা বাড়াতে চাই। এ জন্যই জেলায় মাঠ দরকার। আবার হকির জন্য যে কোনো মাঠ হলেই হবে না, খেলা হয় এমন মাঠ প্রয়োজন’-জানান ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাক।
এক সময় ফরিদপুরে হকি জমজমাট ছিল। এখন ওই জেলায় কি অবস্থা? ‘ফরিদপুরে বলতে গেলে টিম নেই। যশোরেও একই অবস্থা। এক সময় এই জেলাগুলো থেকে খেলোয়াড় আসতো। জেনেছি যে, ফরিদপুর চেষ্টা করছে। তারা তাদের অবস্থান থেকে চেষ্টা করুক। তারপর তো আসবে আমাদের সহায়তার কথা’-বলেছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক।
হকির উন্নয়নের জন্য মাঠ একটা অন্যতম ফ্যাক্টর। আরো কি কিছু আছে যে ঘাটতিগুলো পূরণের জন্য সরকারের কাছে সহযোগিতা চাইবেন? জবাবে সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন কি কি লাগবে। আমরা এই জেলাগুলোকে মাথায় রেখে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে একটা চাহিদাপত্র দিয়েছি। সেগুলো পেলে আমরা সব জেলায় ব্যয় করবো, ফেডারেশনে কিছুই রাখবো না। সরকার থেকে আমরা যাই পাবো তা সমানভাবে জেলাগুলোকে দেবো।’
নারী হকি উন্নয়নের জন্য কোনো পরিকল্পনা আছে? ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের জবাব,‘আমাদের লক্ষ্য ছিল এ মাসেই উইমেন্স ডেভেলপমেন্ট কাপ করার। এ মাসে করতে পারছি না তার কারণ হলো সকল শিক্ষা বোর্ড একটা টুর্নামেন্ট করছে। সেখানে হকিও আছে। যে মেয়েরা হকি খেলে তাদের অনেকেই স্কুলের। তাই এই ডেভেলপমেন্ট কাপ মার্চে করবো। ওই সময় রোজা থাকবে। অনেকে রমজানের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তবে মেয়েদের খেলা বলে আমরা সকাল থেকে শুরু করে ২টার মধ্যে শেষ করে দিতে পারবো। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের খেলায় তুলনামূলক চাপ কম থাকে।’
দেশের হকি তো আগের মতো নেই। আপনি কি সেটা অনুভব করেন? ‘অবশ্যই করি। দেখেন হকি দেশে এমন একটা খেলা ছিল যেটা বাংলাদেশে নাম্বার টু ছিল। আমরা যখন খেলতাম তখন গ্যালারি ভরা থাকতো। পুরোনো ছবি দেখলে অনেকে অবাক হয়ে যান-এত মানুষ হতো? যদি বলি হকিকে দ্রুত সে পর্যায়ে নিয়ে যাবো, সেটা ভুল। আমাদের প্রসেসটা শুরু করতে হবে। একটা পুরোনো ঘরের খুঁটি আগে মজবুত করতে হয়। আমরা সেটাই করার চেষ্টা করছি। খুঁটি মজবুত হলো অন্যসব রিপয়ারিং করা সহজ হবে। হকি খেলার খুঁটি হলো জেলা ও ক্লাবগুলো’-বলেন সাধারণ সম্পাদক।
ফেডারেশনের দায়িত্ব নিয়ে অনেক সমস্যা নিশ্চয়ই খেতে পাচ্ছেন। কখনো কি মনে হয় যে, হকিতে এসে ভুল করেছেন? জবাবে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এ কথা আমি কখনো বলবো না যে, এসে ভুল করেছি। এটা একটা চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই এসেছি।’
আরআই/এমএমআর/জেআইএম