ঢাকার ভূমিকম্পে আলোচনায় সিলেটের ঝুঁকিপূর্ণ ১৮ ভবন
* দু’বছরে সাতটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সিলেট*‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ চিহ্নিত ২৪ ভবনের ১৮টি এখনো বহাল* শহরে থাকা ৪২ হাজার ভবনের বেশিরভাগই পুরোনো ও দুর্বল ভূতাত্ত্বিক অবস্থানগত কারণে পুরো বাংলাদেশই ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। দেশের মধ্যে যেসব বড় মহানগরী ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে, তার মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরই সিলেটের অবস্থান। সিলেটের অবস্থান ডাউকি ফল্ট লাইনের খুব কাছে। যা শিলং প্লেটোর দক্ষিণ প্রান্ত। অত্যন্ত সক্রিয় এই ফল্টের কারণে অতিমাত্রায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সিলেট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো সময় এই অঞ্চলে সংঘটিত হতে পারে শক্তিশালী ভূমিকম্প। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অকল্পনীয়। গত দুইদিনের ব্যবধানে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এদের মধ্যে তিনটির উৎপত্তিস্থলই ছিল নরসিংদী এবং একটির ঢাকা। সবচেয়ে শক্তিশালি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী। যেটি শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে অনুভূত হয়। এতে অন্তত ১০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এই ভূমিকম্পের পর আলোচনায় আসছে সিলেটও। ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে সিলেট, এমন বার্তা বেশ আগে থেকেই দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। যতই দিন গড়াচ্ছে
* দু’বছরে সাতটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সিলেট
*‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ চিহ্নিত ২৪ ভবনের ১৮টি এখনো বহাল
* শহরে থাকা ৪২ হাজার ভবনের বেশিরভাগই পুরোনো ও দুর্বল
ভূতাত্ত্বিক অবস্থানগত কারণে পুরো বাংলাদেশই ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। দেশের মধ্যে যেসব বড় মহানগরী ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে, তার মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরই সিলেটের অবস্থান।
সিলেটের অবস্থান ডাউকি ফল্ট লাইনের খুব কাছে। যা শিলং প্লেটোর দক্ষিণ প্রান্ত। অত্যন্ত সক্রিয় এই ফল্টের কারণে অতিমাত্রায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সিলেট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো সময় এই অঞ্চলে সংঘটিত হতে পারে শক্তিশালী ভূমিকম্প। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অকল্পনীয়।
গত দুইদিনের ব্যবধানে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এদের মধ্যে তিনটির উৎপত্তিস্থলই ছিল নরসিংদী এবং একটির ঢাকা। সবচেয়ে শক্তিশালি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী। যেটি শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে অনুভূত হয়। এতে অন্তত ১০ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
এই ভূমিকম্পের পর আলোচনায় আসছে সিলেটও। ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে সিলেট, এমন বার্তা বেশ আগে থেকেই দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। যতই দিন গড়াচ্ছে ভূমিকম্পের জন্য আরও ঝুঁকি বাড়ছে সিলেটে।
আরও পড়ুন-
নরসিংদীজুড়ে ভূমিকম্পের চিহ্ন, ফেটে ৭-৮ ইঞ্চি ফাঁকা হয়ে গেছে মাটিhttps://www.jagonews24.com/country/news/1069981
খোলস পাল্টে বহাল তবিয়তে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, তালিকায় দায় সেরেছে সিসিকhttps://www.jagonews24.com/country/news/1041060
ভূমিকম্পে মেট্রোরেল স্থাপনার ক্ষতি হয়নি, তারপরও অনুসন্ধান চলছেhttps://www.jagonews24.com/national/news/1070043
ভূমিকম্পের পর ‘আফটারশক’ কেন হয়, কতবার হতে পারে?https://www.jagonews24.com/international/news/1070104
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত অন্তত সাতটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট বিভাগে। রিখটার স্কেলে এসব ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ২ দশমিক ৮ থেকে ৪ দশমিক ৫ পর্যন্ত। পাশাপাশি গত দুই বছরে সিলেট ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অন্তত দেড় শতাধিক ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে।
এতো ঝুঁকিপূর্ণ ও বার বার আলোচনায় আসার পরও সিলেট রক্ষায় নগর কর্তৃপক্ষের নেই কোনো তৎপরতা। ২০১৯ সালে নগরীর ২৪টি ভবনকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে একটি তালিকা তৈরি করে সিসিক। প্রায় ছয় বছর পার হলেও তালিকায় থাকা ৪টি ভবন অপসারণ এবং আরও দুইটি ভবন বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পুনঃসংস্কার করা ছাড়া বাকি ১৮টি ভবনের বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
নগর প্রশাসনের এমন অবহেলা ও গাফিলতির সুযোগে খোলস পাল্টে ফেলা হয়েছে সেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর। সম্পূর্ণ নতুন রং দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরোনো জরাজীর্ণ পরিবেশ। দূর থেকে দেখলে বোঝার কোনো উপায়ই নেই যে এটি ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। উল্টো এসব ভবনে দিব্যি চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বসবাস।
সিসিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সিলেট নগরে ২৭টি ওয়ার্ডে ১৫ হাজার বাণিজ্যিক এবং ২২ হাজার আবাসিক ভবন রয়েছে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ২৪টি ভবনকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে তালিকা তৈরি করে সিসিক, তার মধ্যে এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ১৮টি ভবন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কালেক্টরেট ভবন-৩, সমবায় ব্যাংক ভবন মার্কেট, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাবেক কার্যালয় ভবন, সুরমা মার্কেট, বন্দর বাজার এলাকার সিটি সুপার মার্কেট, মিতালী ম্যানশন, দরগা গেটের আজমীর হোটেল, মধুবন মার্কেট, কালাশীল এলাকার মান্নান ভিউ, শেখঘাটের শুভেচ্ছা-২২৬, চৌকিদেখী এলাকার ৫১/৩ সরকার ভবন, যতরপুরের নবপুষ্প-২৬/এ, জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশন, পুরানলেনের ৪/এ কিবরিয়া লজ, খারপাড়ার মিতালী-৭৪, মির্জা জাঙ্গালের মেঘনা-এ-৩৯/২, পাঠানটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর বাগবাড়ীর ওয়ারিছ মঞ্জিল একতা-৩৭৭/৭, হোসেইন মঞ্জিল একতা-৩৭৭/৮, শাহনাজ রিয়াজ ভিলা একতা-৩৭৭/৯, বনকলাপাড়ার নূরানী-১৪, ধোপাদিঘী দক্ষিণপাড়ার পৌর বিপণি ও পৌর শপিং সেন্টার এবং পূর্ব পীরমহল্লার লেচুবাগান এলাকার ৬২/বি-প্রভাতী, শ্রীধরা হাউস।
জানা যায়, ১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প ওলটপালট করে দিয়েছিল তৎকালীন আসামের সিলেটকে। নদীর গতি পরিবর্তন, পাহাড় টিলার ভূপ্রকৃতি সব কিছুতেই পড়েছিল বিরাট ছাপ। এরপর ১৯৮০ সালের ভূমিকম্প ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছিল সিলেটকে। ২০২১ সালে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সাতবার ভূমিকম্প হলে কিছুটা নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্টরা। গত দুই বছরে এই অঞ্চলে অন্তত ১৫ বারেরও বেশি ভূকম্পন হয়েছে। এসব ভূমিকম্প ছিল ৫.৯ ও ৫.৫ মাত্রার। এই ভূমিকম্পগুলো ডাউকি ও কপিলি ফল্টকে সক্রিয় থাকার ইঙ্গিত বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা। অথচ সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে অনেকটাই উদাসীন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ও এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমেদ বলেন, বর্তমানে সিলেটের অধিকাংশ স্থাপনাই উচ্চ মাত্রার ভূ-কম্পন সহ্য করতে সক্ষম নয়। সিলেট শহরে প্রায় ৪২ হাজার ভবন রয়েছে। এসবের বেশিরভাগই পুরোনো ও দুর্বল। যেগুলো মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেই ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘সিলেট শহরে গড়ে ওঠা প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ভবন নির্মাণে যথাযথ বিধিমালা মানা হয়নি। ফলে ভূমিকম্প হলে এ অঞ্চলে বিপুল প্রাণহানি ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।’
সিলেটে দ্রুত একটি ভূমিকম্পের সতর্কীকরণ কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাই রাফিন সরকার বলেন, ‘তালিকার কিছু ভবনকে অপসারণ করা হয়েছে। আরও কিছু ভবনের প্রাথমিক মূল্যায়ন শেষে শাবিপ্রবির বিশেষজ্ঞ দ্বারা সংস্কার করা হয়েছে। অবশিষ্ট ভবনগুলো অপসারণে জরুরি নোটিশ জারি করা হয়েছে।’
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর খোলস পাল্টে ফেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এসব ভবনের প্রিলিমিনারি অ্যাসেসমেন্ট শাবিপ্রবির বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে বিস্তারিত অ্যাসেসমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় স্ট্রাকচারাল ডিজাইন ও সয়েল টেস্ট রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট ভবনের মালিকগণ জমা না দেওয়ায় পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।’
এফএ/জেআইএম
What's Your Reaction?