তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল প্রক্রিয়া ছিল অবৈধ: শিশির মনির

3 hours ago 8

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল প্রক্রিয়া অবৈধ ছিল বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে তিনি এ কথা জানান।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চে এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

শুনানিতে শিশির মনির বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল প্রক্রিয়া ছিল অবৈধ। আমরা চাই এটি বাতিল করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় রিভিউ করা হোক। এই রায় বাতিল করা হোক। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ যে নতুন পথে ঢুকেছে, সংস্কার পথে; এটি যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। এখানে ব্যক্তির চেয়েও মানুষের মর্যাদা বেশি হবে।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরলে সব নাগরিক স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। আর এই আপিল মঞ্জুর না হলে আবার সেই আগের একই ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থা দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।

এই আইনজীবী বলেন, এতদিন পরে এসে আজও সবাই মনে করছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করলেই বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। যে প্রক্রিয়ায় এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দেওয়া হয়েছে, তা ছিল পূর্বপরিকল্পিত নকশার আলোকে। এ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দিতে চায়নি। এক ব্যক্তির ইচ্ছায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দিয়ে দেশে একনায়কতান্ত্রিক শাসন কায়েম করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, এর ফলে রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে বড় ধ্বংসের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ গেছে। আবার আমরা এখন আলোচনা করে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। যদি নির্বাচন ব্যবস্থাকে সঠিক নিয়মে দাঁড় করাতে হয়, তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলার মধ্যেই যদি আমরা যেতে পারি; এটি হবে আমাদের জন্য জাতিগতভাবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মাধ্যম।

শিশির মনির বলেন, এরই মধ্যে ঐকমত্য কমিশন ও সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান নিয়ে জুলাই সনদে একটি নতুন বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামীতে আদালত যে আদেশই দেন না কেন, তা যেন জুলাই সনদের সঙ্গে বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে জুলাই সনদে যে আলোচনা হয়েছে, তার সঙ্গে মিল রেখে হয়।

‘নইলে সংস্কার প্রক্রিয়া অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ১৪ বছর আগে, ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। আদালতের রায়ের পর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী এই সরকারব্যবস্থা বাদ দেওয়া হয়।’

গত বছর জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৭ আগস্ট ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি আবেদন করেন। এরপর ১৭ অক্টোবর আবেদন করেন বিএনপির মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছর আরেকটি আবেদন করেন। এছাড়া একটি সংগঠন ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়।

গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির এবং বিএনপির মহাসচিবের করা রিভিউ আবেদন থেকে উদ্ভূত আপিলের সঙ্গে রিভিউ আবেদনগুলো শুনানির জন্য যুক্ত হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন।

২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট রিট খারিজ করে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে। এ রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারীপক্ষ। এই আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেয়।

সেই রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বাতিলসহ বেশকিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ–সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।

এফএইচ/ইএ

Read Entire Article