তদন্ত করতে ১১৪ ছাপাখানা মালিককে তলব, প্রক্রিয়া নিয়ে ‘প্রশ্ন’

পাঠ্যবই ছাপার কাজে ছাপাখানা মালিকদের জামানতের অর্থছাড়ে ‘বকশিশ বাণিজ্য’ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। প্রথমেই তারা ১১৪টি ছাপাখানার মালিককে তলব করেছেন। তবে তদন্ত কমিটি যে প্রক্রিয়ায় কাজ করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ছাপাখানার মালিকরা। তারা এটিকে ‘হয়রানিমূলক’ ও ‘লোক দেখানো’ তদন্ত বলে অভিযোগ করেছেন। আর এ ধরনের তদন্তকে ‘দায় থেকে পরিত্রাণের কৌশল’ বলে মনে করছেন খোদ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা। জাগো নিউজে প্রকাশিত সংবাদে ‘তোলপাড়’ গত ২৯ নভেম্বর জাগো নিউজে ‘বই ছাপার জামানতের অর্থছাড়েও এনসিটিবিতে বকশিশ বাণিজ্য’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে কীভাবে বই ছাপার কাজ নিতে জমা রাখা জামানতের অর্থছাড়ে ছাপাখানা মালিকদের কাছ থেকে বকশিশের নামে লটপ্রতি ২০ হাজার টাকা নেওয়া হয়, তা তুলে ধরা হয়। শুধু ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৭০০ লট বইয়ের জামানতের প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। ছাপাখানা মালিক ও এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এমন কৌশলী অনিয়মে প্রতিষ্ঠানটির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ

তদন্ত করতে ১১৪ ছাপাখানা মালিককে তলব, প্রক্রিয়া নিয়ে ‘প্রশ্ন’

পাঠ্যবই ছাপার কাজে ছাপাখানা মালিকদের জামানতের অর্থছাড়ে ‘বকশিশ বাণিজ্য’ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। প্রথমেই তারা ১১৪টি ছাপাখানার মালিককে তলব করেছেন।

তবে তদন্ত কমিটি যে প্রক্রিয়ায় কাজ করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ছাপাখানার মালিকরা। তারা এটিকে ‘হয়রানিমূলক’ ও ‘লোক দেখানো’ তদন্ত বলে অভিযোগ করেছেন। আর এ ধরনের তদন্তকে ‘দায় থেকে পরিত্রাণের কৌশল’ বলে মনে করছেন খোদ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা।

জাগো নিউজে প্রকাশিত সংবাদে ‘তোলপাড়’

গত ২৯ নভেম্বর জাগো নিউজে ‘বই ছাপার জামানতের অর্থছাড়েও এনসিটিবিতে বকশিশ বাণিজ্য’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে কীভাবে বই ছাপার কাজ নিতে জমা রাখা জামানতের অর্থছাড়ে ছাপাখানা মালিকদের কাছ থেকে বকশিশের নামে লটপ্রতি ২০ হাজার টাকা নেওয়া হয়, তা তুলে ধরা হয়।

শুধু ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৭০০ লট বইয়ের জামানতের প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। ছাপাখানা মালিক ও এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এমন কৌশলী অনিয়মে প্রতিষ্ঠানটির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরীর দিকে সন্দেহের তীর ছুড়েছেন।

সংবাদ প্রকাশের পর এনসিটিবিতে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন এনসিটিবির চেয়রম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুল হক পাটওয়ারী।

এনসিটিবির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে জানান, রোববার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান এনসিটিবিতে এসেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর তিনি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।

আরও পড়ুন
পাঠ্যবইয়ে নিম্নমানের কাগজ আর নয়, বাধ্যতামূলক হচ্ছে জলছাপ
তিন ছাপাখানার ৮০ হাজার পাঠ্যবই বাতিল করলো এনসিটিবি
পাঠ্যবই নিয়ে দুর্নীতি: এনসিটিবিতে অভিযানে দুদকের টিম

কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে এনসিটিবির সচিব অধ্যাপক সাহাতাব উদ্দিনকে। সদস্য হিসেবে আছেন বিশেষজ্ঞ সদস্য আবুল খায়ের। আর সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উপসচিব সিরাজুল ইসলাম।

এনসিটিবির উপসচিব ও তদন্ত কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পাওয়া সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অভিযোগটি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন চেয়ারম্যান। আমরা কাজ শুরু করেছি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’

তদন্তের প্রক্রিয়া নিয়ে ‘প্রশ্ন’

জামানতের অর্থছাড়ে অনিয়মের ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হলেও তাদের কাজের ধরন বা প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ছাপাখানা মালিক ও এনসিটিবির কয়েকজন কর্মকর্তা। তারা এটিকে শুধুই দায়মুক্তির কৌশল হিসেবে দেখছেন।

জানা গেছে, তদন্ত কমিটি ২০২৫ সালে বই ছাপার কাজ করা ১১৪টি ছাপাখানার মালিককে তলব করেছে। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে তাদের এনসিটিবি ভবনের দ্বিতীয় তলার হলরুমে ডাকা হয়েছে। মৌখিকভাবে তাদের ডাকা হলেও আজই চিঠি ইস্যুও করা হবে।

নাম প্রকাশ না করে এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি হয়েছে ভালো কথা। কিন্তু যার বিরুদ্ধে অভিযোগটা এসেছে, তিনি তো স্বপদে বহাল। তার সামনে কেউ তো তার বিরুদ্ধে কোনো স্বাক্ষ্য দেবে না। ব্যবসায়ীরা কখনই এটা সবার সামনে বলবে না। ফলে এটি নামকাওয়াস্তে একটি তদন্ত করা। অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিরা এর মাধ্যমে স্থায়ী দায়মুক্তি পাবে। যদি প্রকৃত অপরাধী ধরতে চাইতো, তাহলে অভ্যন্তরীণ তদন্ত জরুরি ছিল। ব্যক্তিগতভাবে ছাপাখানা মালিকদের সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল। হলরুমে সবার সামনে নয়।’

এদিকে, বিষয়টিকে ‘হয়রানি’ হিসেবে দেখছেন ছাপাখানা মালিকরা। তারা বলছেন, বই ছাপার কাজের ব্যস্ততার মধ্যে হঠাৎ তাদের ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করাটা হয়রানিমূলক ও বিব্রতকর।

এনসিটিবিতে ডাক পাওয়া একজন ছাপাখানা মালিক নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘হলরুমে শতাধিক প্রেসের মালিক বা প্রতিনিধি থাকবে, সেখানে কেউই বলবে না যে, অধ্যাপক রিয়াদ চৌধুরীর নির্দেশে আমাদের কাছ থেকে লটপ্রতি ২০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এনসিটিবি ঘিরেই তাদের কাজ। এবারও তারা বই ছাপার কাজ করছেন। সামনের দিনেও রিয়াদ চৌধুরীর সইয়ে তাদের বিল উঠবে। ফলে সেখানকার বর্তমান কর্মকর্তা, যিনি চেয়ারম্যানের পরই ক্ষমতাশালী; তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে স্বাক্ষ্য দেওয়ার সাহস কেউই দেখাবে না।’

মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক একজন নেতা জাগো নিউজকে বলেন, ‘অভিযুক্তকে বহাল রেখে তদন্ত হলে সেটা স্পষ্টত প্রভাবিত হয়। তদন্ত কমিটির যারা কাজ করছেন, তারা সবাই অধ্যাপক রিয়াদ চৌধুরীর অধীন। ফলে কেউ তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেবেন না। আর ছাপাখানা মালিকরা ব্যবসা করেন, তারা সিটিং মেম্বার টেক্সটকে (দায়িত্বরত সদস্য, পাঠ্যপুস্তক) কীভাবে দায়ী করে স্বাক্ষ্য দেবেন! এটা হাস্যকর।’

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে যারা অংশীজনদের তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলবো। কেউ চাইলে আমাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবেও কথা বলতে পারেন। সাংবাদিক, প্রেস মালিক বা প্রতিনিধি সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমরা প্রতিবেদন দেবো।’

এএএইচ/ইএ/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow