তফসিল ডিসেম্বরের দ্বিতীয় নাকি তৃতীয় সপ্তাহে

1 week ago 3

ডিসেম্বরের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় সপ্তাহে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল হতে পারে, এমন আভাস ইসির রোডম্যাপে রয়েছে। তফসিল ঘোষণার একমাস আগে আইন শৃঙ্খলার খাতওয়ারি বিষয়ে বাহিনী প্রতিনিধিদের সঙ্গে ১৬-২০ নভেম্বর বৈঠকের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ‘রোডম্যাপে’ ফেব্রুয়ারির ভোটের তারিখ ও ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণার তারিখ না দিলেও ডিসেম্বরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার আভাস রয়েছে।

ইসির কর্মপরিকল্পনায় রয়েছে, ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটির প্রশিক্ষণ শেষের পরিকল্পনা রয়েছে ২৫ ডিসেম্বর; এ কমিটির বিচারিক হামিকরা তফসিল ঘোষণার পরপরই আইন-বিধি প্রতিপালনে কাজ করবে।

আর দফাওয়ারি বাজেট প্রস্তাবনা প্রণয়নে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর প্রতিনিধিদের বৈঠক তফসিল ঘোষণার এক মাস আগে ১৬ নভেম্বর থেকে ২০ নভেম্বরে করার কর্মপরিকল্পনা সূচি রয়েছে।

বৃহস্পতিবার ‘ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে কর্মপরিকল্পনা’ প্রকাশ করে ইসি সচিবালয়। ইসির অনুমোদনের পর রোডম্যাপের সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন ইসি সচিব আখতার আহমেদ।

স্বভাবতই সচিবের কাছে প্রশ্ন ভোট কবে, তফসিল কবে দেবে নির্বাচন কমিশন? কিন্তু ভোটের সম্ভাব্য তারিখ ও তফসিলের সম্ভাব্য মাস, সপ্তাহ উল্লেখ করেননি তিনি।

তফসিল কবে, ভোট কবে- এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ভোট গ্রহণের ৬০ দিন আগে তফসিল দেওয়া হবে। আমাদেরকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলেছে আগামী রমজানের আগে ভোট করার জন্য। আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে ১৭ বা ১৮ ফেব্রুয়ারি রমজান শুরু। আবার রমজান তো চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল।

অবশ্য আগেই ইসি ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিলের কথা জানিয়েছিলেন।

চিঠি পেয়ে ইসি যা বলেছিলেন

রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট হবে। ভোটের দিনক্ষণ ঠিক করে মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময়, যাচাই-বাছাই, প্রত্যাহারে উপযুক্ত সময় রেখে তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারির ভোটের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে। ভোটের দিন থেকে প্রায় ৬০ দিন আগে সময়সূচি (তফসিল) দেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন।

৬ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার চিঠি দেওয়ার পরদিন সিইসির সভাপতিত্বে ইসির নবম কমিশন সভা হয়। ৭ আগস্ট সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছিলেন, ফেব্রুয়ারিতে ভোট করতে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো চিঠি পৌঁছেছে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার আপনাদেরকে যেটা বলেছেন, আমাদের পক্ষ থেকে ঘোষণাটা আসবে দুই মাস আগে। ধরেই নিতে পারেন, এই শিডিউল ঘোষণার কাজটা আমাদের ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধে (করবো)।

তফসিল ডিসেম্বরের দ্বিতীয়-তৃতীয় সপ্তাহের আভাস

সম্ভাব্য কাজের বিবরণ, কার্যক্রম গ্রহণের তারিখ, বাস্তবায়ন শাখা, সম্পন্নের তারিখ/সময় (সম্ভাব্য) এবং মন্তব্য, এভাবে একগুচ্ছ বিষয়ে ২১ পৃষ্ঠার কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।

>>ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটির প্রশিক্ষণ/ব্রিফিং এর প্রস্তাবনা প্রেরণ- কার্যক্রম গ্রহণের তারিখ ১ ডিসেম্বর এবং সম্পন্নের তারিখ হচ্ছে ২৫ ডিসেম্বর। মন্তব্যে বলা হয়েছে- তফসিল ঘোষণার পর তালিকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে (ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি আচরণবিধি ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ প্রতিপালনের কাজ করবে)।

>>নির্বাচনী বাজেট প্রস্তুত ও বাজেট বরাদ্দের বরাদ্দ সংক্রান্ত কার্যক্রম বিষয়ে কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে- খাতভিত্তিক হারসহ দফাওয়ারি বিভাজনের আলোকে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর অনুকূলে অর্থ বরাদ্দের জন্য প্রস্তাবনা প্রণয়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর প্রতিনিধিদের সাথে সভা অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য তারিখ ১৬ নভেম্বর, শেষ করার সম্ভাব্য সময় ২০ নভেম্বর ২০২৫। মন্তব্য তফসিল ঘোষণার এক মাস পূর্বে।

বিটিভি-বেতারে প্রচারণা ও দলীয় প্রধানের বক্তৃতা

রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচারণায় সহায়তা করবে নির্বাচন কমিশন ইসি। আর এটা করবে ডিসেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে।

কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে- তফসিল ঘোষণার পরে বাংলাদেশ বেতার এবং বিটিভিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচারণা এবং দলীয় প্রধানের বক্তব্য দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠাবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধন্ত অনুসারে বিটিভি এবং বাংলাদেশ বেতারের সম্প্রচার বিভিন্ন ইলেট্রনিক মিডিয়া প্রচার করতে পারবে।

আসনভিত্তিক সব প্রার্থীকে এক মঞ্চে ইশতেহার ঘোষণা

সংসদ নির্বাচনে কোনো একটি সংসদীয় আসনের সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে একই মঞ্চ বা প্ল্যাটফর্মে এবং একই দিনে নির্বাচনী ইশতেহার বা ঘোষণাপত্র পাঠ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা এই প্ল্যাটফর্মের ব্যবস্থা করবেন।

ইসির কর্মপরিকল্পনায় রয়েছে- প্রতীক বরাদ্দের পর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনী আসন ভিক্তিক রিটার্নিং অফিসারের তত্ত্বাবধানে একই প্লাটফর্মে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিয়ে ভোটার ও অংশীজনদের উপস্থিতে নির্বাচনী ইশতেহার পাঠের সুযোগ করে দেবে ইসি। যেখানে সম্পৃক্ত থাকবে জেলা নির্বাচন অফিস।

ইসির ঘোষিত জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপে উল্লেখযোগ্য দিক

• রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ শুরু সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে

• চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন ৩০ নভেম্বর

• নির্বাচনী আইন বিধি সংস্কার ৩০ সেপ্টেম্বর এর মধ্যে

• নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে

• ৩০০ আসনের সীমান চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে

• দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন করে চূড়ান্ত সার্টিফিকেট প্রদান ১৫ নভেম্বরের মধ্যে

• নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ম্যানুয়েল , নির্দেশিকা , পোস্টার, পরিচয়পত্র ইত্যাদি মুদ্রণ ১৫ নভেম্বরের মধ্যে

• স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও নির্বাচনী দ্রব্যাদি ব্যবহার উপযোগী করা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে

• নির্বাচন ভবনে বেসরকারি ফলাফল প্রদর্শনের জন্য ডিজিটাল মনিটর স্থাপন ও যন্ত্রপাতি সংযোজন ডিসেম্বরের মধ্যে

• ১৫ নভেম্বরে মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খাত ও দফাওয়ারী অর্থ বরাদ্দের হার নির্ধারণ করে প্রস্তবাবনা প্রণয়ন

• পোস্টার ব্যালট প্রবাসীদের কাছে প্রেরণ ও ভোটারদের নিকট পৌছানো ৫ জানুয়ারির (২০২৬) মধ্যে।

এমওএস/এসএনআর/জিকেএস

Read Entire Article