তরুণ প্রজন্ম প্রমাণ করেছে তারা সমাজ পরিবর্তনের চালিকাশক্তি

1 hour ago 4

তরুণ প্রজন্ম প্রমাণ করেছে তারা সমাজ পরিবর্তনের চালিকাশক্তি বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‌‘বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম এরইমধ্যেই প্রমাণ করেছে যে, তারা সমাজ পরিবর্তনের চালিকাশক্তি। আমরা তাদের দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করছি। তথ্যপ্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, নবায়নযোগ্য শক্তি, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হলো—প্রত্যেক তরুণকে শুধুমাত্র চাকরিপ্রার্থীর পরিবর্তে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা।’

তিনি বলেন, ‘এই উদ্দেশ্যে আমরা জাতিসংঘের সঙ্গে অংশীদারত্বে মাঠ পর্যায়ের তরুণদের সঙ্গে সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের যুক্ত করার একটি স্থায়ী মাধ্যম চালু করছি। এরইমধ্যে এ বিষয়ে সারাদেশে একাধিক পরামর্শ সভার আয়োজন করা হয়েছে। আজকের তরুণরা স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনলাইন ও অফলাইন ফোরাম, জরিপ এবং প্রচারণার মাধ্যমে তাদের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকতে চায়। তারা নেতৃত্ব বিকাশ, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল সক্ষমতা উন্নয়নের জন্য আরও বেশি সুযোগ চায়। তারা চায় এই প্রক্রিয়ায় জবাবদিহিতা অন্তর্ভুক্ত থাকুক। নিয়মিত অগ্রগতি প্রতিবেদন এবং অব্যাহত সংলাপের প্রতিশ্রুতি থাকুক। সর্বোপরি, প্রক্রিয়াটি হোক অন্তর্ভুক্তিমূলক, যাতে নারী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, প্রতিবন্ধী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবার অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বের সমান সুযোগ থাকবে।’

শুধু বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের চ্যালেঞ্জ নয়, ভবিষ্যতেও তারা যে সংকট ও সমস্যার মুখোমুখী হবেন, তা অনুধাবন করে তার সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করারও সুযোগ এনে দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, ‘দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির এই যুগে উন্নয়নশীল বিশ্বের তরুণদের জন্য আরও গভীর এক ডিজিটাল বিভাজন তৈরি হওয়ার ঝুঁকি আজ আমাদের একটি বড় উদ্বেগ। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভাষা-ভিত্তিক বৃহৎ মডেল কিংবা আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা—এসব প্রযুক্তি যেন তাই পক্ষপাতদুষ্ট না হয়, এবং এর সুফল যেন ন্যায্যভাবে সবার কাছে পৌঁছায় তা আজ আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় বিশ্বব্যাপী এমন একটি প্রজন্ম তৈরি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যারা নিজেদের বঞ্চিত, প্রান্তিক, অন্যায় ও অবিচারের শিকার হিসেবে বিবেচনা করবে। তারা সবাই সব ধরনের ক্ষতিকারক প্রলোভনের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে।’

প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সুফল বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে তরুণদের ঝুঁকিমুক্ত রাখার জন্য শুধু প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন সামাজিক উদ্ভাবন উল্লেখ করে প্রধান ইউদেষ্টা বলেন, প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে আমরা ক্ষুদ্রঋণের ধারণা নিয়ে এসেছিলাম। তখন সেটি ছিল প্রথাগত ধারণার বিরুদ্ধে এক বৈপ্লবিক নিরীক্ষা। কিন্তু আজ বিশ্বব্যাপী তা মূলধারার হাতিয়ার হিসেবে স্বীকৃত। ক্ষুদ্রঋণ, লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করেছে।’

‘সামাজিক ব্যবসা’ প্রমাণ করছে যে প্রতি মানুষের উদ্যোক্তা সত্ত্বা সামাজিক কল্যাণে ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে কাজে লাগানো সম্ভব। এর ফলে পৃথিবীর যাবতীয় সমস্যার সমাধানের একটি সৃজনশীল পদ্ধতি সবার হাতে এসে যায়— যেটি পরিবেশের সমস্যা হোক, সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার সমস্যা হোক, স্বাস্থ্যের সমস্যা হোক, বেকারত্ব দূরীকরণের সমস্যা হোক, দারিদ্র্য দূরীকরণের সমস্যা হোক— সব কিছুতে এই পদ্ধতি টেকসই বা কাজে লাগানো যায় বলে উল্লেখ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এরআগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস স্থানীয় সময় সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে পৌঁছান। প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

এবছর প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছয় রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা ঢাকা থেকে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগ দেন। এছাড়া জামায়াত নেতা নকিবুর রহমান তারেক যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধি দলে যুক্ত হন।

আগামী ২ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

আইএইচআর/এসআর

 

Read Entire Article