আজকের দিনে আমাদের জীবনের অনেকটাই চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। খবর, বিনোদন, আড্ডা—সবই এখানে। কিন্তু আমরা হয়তো খেয়াল করি না, এই মাধ্যমগুলো আমাদের চিন্তাভাবনা ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পর্যন্ত পাল্টে দিচ্ছে।
কেন পশ্চিমা প্রভাব বেশি?
যেসব প্ল্যাটফর্ম আমরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি—ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম—সবই তৈরি আর নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে মূলত পশ্চিমা দেশগুলো থেকে। তাই স্বাভাবিকভাবেই সেখানে যে ধরনের কনটেন্ট সবচেয়ে বেশি প্রচারিত হয়, তা পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সাজানো।
আমাদের মতো দেশে তরুণ প্রজন্ম—মানে জেনারেশন জেড ( জেন জি)—এই প্ল্যাটফর্মগুলোর সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী। তাই যে কোনো বার্তা তাদের কাছে খুব দ্রুত পৌঁছায়, আর তারা খুব সহজেই প্রভাবিত হয়ে যায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে দোষারোপ করলে হবে না কিংবা শুধু পশ্চিমকে দোষ দিলেও হবে না। আসল সমাধান হলো নিজের ভিত মজবুত করা। যদি আমরা সুশিক্ষা, সুশাসন আর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে বাইরের কোনো প্রভাবই তরুণদের সহজে টার্গেট বানাতে পারবে না।
কেন বাংলাদেশে প্রভাব বেশি পড়ে?
যেসব দেশে দুর্নীতি বেশি, বেকারত্ব বেশি, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা বেশি, সেখানে বাইরের বার্তা সহজেই মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ, মানুষ যখন স্থানীয় নেতাদের প্রতি আস্থা হারায়, তখন তারা নতুন কোনো বয়ান বা আইডিয়া সহজে গ্রহণ করে নেয়।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এখানে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দুর্বলতা, দেশপ্রেমের অভাব আর স্বচ্ছতার ঘাটতি মানুষকে হতাশ করেছে। ফলে বাইরের প্রভাব ঢোকার জায়গা তৈরি হয়েছে।
সব দোষ কি কেবল পশ্চিমের?
না। শুধু পশ্চিমা ষড়যন্ত্র বললে পুরো বিষয়টা বোঝা যাবে না। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরাও অনেক সময় বাইরের বয়ানকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেন। আর জনগণের জন্য টেকসই সমাধান দেন না। ফলে তরুণরা আরও বিভ্রান্ত হয়।
তাহলে করণীয় কী?
মিডিয়া লিটারেসি শেখানো দরকার—যাতে আমরা অনলাইনে যা দেখি, তার সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে পারি।
স্বাধীন সাংবাদিকতাকে শক্তিশালী করতে হবে, যাতে বিকল্প তথ্যের উৎস থাকে।
সুশাসন আর জবাবদিহিতা দরকার—যাতে জনগণ আবার আস্থা ফিরে পায়।
আর সবচেয়ে জরুরি হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি। তরুণরা যদি ব্যস্ত থাকে কাজে ও স্বপ্ন গড়ায়, তবে ফাঁকা সময় দিয়ে বিভ্রান্ত হবে না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে দোষারোপ করলে হবে না, কিংবা শুধু পশ্চিমকে দোষ দিলেও হবে না। আসল সমাধান হলো নিজের ভিত মজবুত করা। যদি আমরা সুশিক্ষা, সুশাসন আর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে বাইরের কোনো প্রভাবই তরুণদের সহজে টার্গেট বানাতে পারবে না।
এইচআর/এমএফএ/এএসএম