চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. দুরুল ইসলামের অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী। নিজ এলাকা মহারাজপুরে গড়ে তুলেছেন ১৫-২০ জনের কিশোর গ্যাং। ককটেল, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা তার এখন নিত্যদিনের কাজ। তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলা তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. দুরুল ইসলামের নেতৃত্বে মো. নাইরুল ইসলাম, মো. মাসুদ রানা, মো. রুবেলসহ অন্তত ২০ জন সদস্যের তাদের একটি গ্রুপ রয়েছে। এলাকায় চাঁদাবাজি, বিস্ফোরক, জমি দখল করাই যাদের কাজ। তাদের বিরুদ্ধে খুন, বিস্ফোরক, জমি দখল মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায় এমন কয়েকটি মামলাও রয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তাদেরকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ। স্থানীয়দের দাবি পুলিশকে টাকা দিয়ে তারা এলাকায় কার্যক্রম করে আসছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আলি হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার নির্বাচনে আমাদের এলাকার অনেক মানুষ ভোট দিতে যায়নি। তাই তাঁতী লীগ নেতা দুরুল আর তার সহযোগী নাইরুল এলাকাবাসীকে অনেক অত্যাচার করেছে। কাউকে আবার জোর করে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে গেছে। ১৫ বছর ধরে চলছে তাদের অত্যাচার। এই এলাকায় অল্প কিছুতেই ককটেল ফোটে। এসবের মূল হোতা এই তাঁতি লীগ নেতা।
মিনটোলা গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল হক জাগো নিউজকে বলেন, আমার বাড়ি প্রধান সড়ক থেকে কিছুটা ভেতরে। কারণ প্রধান সড়কের পাশে আছে মসজিদ আর কমিউনিটি ক্লিনিক। কিন্তু কিছুদিন আগে আমার বাড়ির পেছনে জমি কিনেছেন তাঁতি লীগ নেতা ও তার লোকজন। এখন আমার বাড়ি, মসজিদ ও কমিউনিটি ক্লিনিক ভেঙে রাস্তা নিতে চাচ্ছেন। দিনে-দুপুরে আমার বাড়িতে এসে হুমকি দিচ্ছেন তারা। কয়েকদিন আগে আমার বাড়ির সামনে ককটেল ফাটিয়েছেন, আমার স্ত্রীর গলায় দেশীয় অস্ত্র ধরেছেন। কথা বললেই সেদিন মারা যেতাম। তাই ভয়ে কাউকে বলিনি।
শিউলি বেগল নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, দুরুল ইসলাম ও নাইরুল এরা সবাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদের লোক। সব সময় এমপির সঙ্গেই তারা থাকত। ৫ আগস্টের পর আব্দুল ওদুদ এমপি পালিয়ে গেছেন। কিন্তু কমেনি এদের অত্যাচার। এখনো তারা আওয়ামী লীগের দাপট দেখাচ্ছেন।
শাহিনূর নামে এক কলেজছাত্র বলেন, ৫ আগস্টের আগে আমাদের আন্দোলনে যেতে বাধা দিয়েছেন দুরুল ও নাইরুল। এমনকি বলেছেন আন্দোলনে গেলে আমাদের সর্বস্বান্ত করে দিবেন। ভেবেছিলাম ৫ আগস্টের পরে তাদের অত্যাচার কিছুটা কমবে। কিন্তু আরও বেড়েছে।
মহারাজপুর জোড়া বকুল তলা এলাকার বাসিন্দা জুয়েল রানা। কাজ করেন স্থানীয় একটি আইপি টেলিভিশনে।
তিনি জাগো নিউজকে জানান, এলাকাবাসীর ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদ করায় তাঁতী লীগ নেতার লোকজন কয়েকদিন আগে আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালি-গালাজ করতে করতে টেনে আমবাগানে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজন আমাকে তাদের হাত থেকে উদ্ধার করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমি থানায় অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা হয়নি।
তিনি বলেন, এখনো আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে খুঁজে বেড়াচ্ছে এই সন্ত্রাসী বাহিনী। তাই যন্ত্রণা সইতে না পেরে তাঁতী লীগ নেতার লোকজনের পায়ে ধরে আমার প্রাণভিক্ষা নিয়েছেন আমার বাবা। যা ছেলে হিসেবে আমার কাছে লজ্জাজনক।
স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য সাত্তার হোসেন বলেন, তাঁতী লীগ নেতার নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এরা কেউ খুনের মামলার আসামি, কেউ আবার মাদক মামলার আসামি। ১৫ দিন আগেও স্থানীয় একটি জমি তারা দখল করে নিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারে না।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. দুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমাদের এলাকায় কখনো ককটেলবাজি হয়নি। আর আমি কারো জমি দখল করিনি। ওই জমি আমার বংশীয় সম্পত্তি। তবে মসজিদ ও কমিউনিটি ক্লিনিক ভেঙে রাস্তা চাওয়ার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রইচ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমার নজরে ছিল না। আপনি বললেন ব্যবস্থা নেবো।
সোহান মাহমুদ/এফএ/জেআইএম