তানিয়া রবের জন্য আসন ছেড়ে দিলে মানবেন না বিএনপির নিজান

3 hours ago 6

লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের মানুষের প্রধান সমস্যা নদীভাঙন। নির্বাচন আসে, নির্বাচন যায়, প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দেন। তবে কাজের কাজ কিছুই হয় না। এবারও ভোটাররা বলছেন, তারা তাকেই ভোট দেবেন যিনি শুধু প্রতিশ্রুতি দেবেন না, কাজও করে দেখাবেন। ফলে আবারও প্রতিশ্রুতির ঝুড়ি নিয়ে ভোটারদের সামনে যাচ্ছেন এই আসনের প্রার্থীরা।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নড়েচড়ে বসছেন। নেতাকর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের কাছে টানার কৌঁশল খুঁজছেন তারা। সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে দেখা যাচ্ছে তাদের।

ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নতুনভাবে জেগে উঠেছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। বিএনপির নেতাকর্মীরা তৃণমূলের প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে দল গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিন মাস ধরে সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি বাড়িয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)।

স্থানীয়রা বলছেন, এ আসনে এবার ফ্যাক্ট জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। জোটগত কারণে বিএনপি আসনটি জেএসডিকে ছাড়তে পারে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে আ স ম আবদুর রব বর্তমানে শারীরিকভাবে অসুস্থ। ফলে তার স্ত্রী তানিয়া রব বিএনপি জোটের প্রার্থী হতে পারেন সেটা অনেকটা নিশ্চিত।

তবে দলীয় এই সিদ্ধান্তে নাখোশ বিএনপির সহ-শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান। তিনি এই আসনে দলের দুইবারের সংসদ সদস্য (এমপি)। ফলে জেএসডিকে মাঠ ছেড়ে দিতে রাজি নন তিনি। বিএনপি জোট থেকে জেএসডির জন্য আসনটি ছেড়ে দিলেও নিজান ভোটের মাঠে থাকবেন বলে নেতাকর্মীদের আগাম বার্তা দিচ্ছেন। এ নিয়ে দলের একাধিক সভায় প্রকাশ্যে কথা বলেছেন বিএনপির এই মনোনয়নপ্রত্যাশী।

বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে যোগাযোগ রাখছেন আশরাফ উদ্দিন নিজান, তানিয়া রব, জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী এ আর হাফিজ উল্যা এবং ইসলামী আন্দোলনের বাংলাদেশের উপদেষ্টা খালেদ সাইফুল্লাহ।

কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি প্রয়াত শফিউল বারী বাবুর স্ত্রী বিথীকা বিনতে হোসাইন বিথীও দলের একাংশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সীমিতভাবে আলোচনা সভা করছেন। গণঅধিকার পরিষদের ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রেদোয়ান উল্যা খানও প্রার্থী হবে বলে শোনা যাচ্ছে। এবি পার্টির প্রার্থী হিসেবে মিয়া আরিফ সুলতানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

তানিয়া রবের জন্য আসন ছেড়ে দিলে মানবেন না বিএনপির নিজানজামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী এ আর হাফিজ উল্যা (বাঁ থেকে), ইসলামী আন্দোলনের খালেদ সাইফুল্লাহ এবং বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী বিথীকা বিনতে হোসাইন বিথী

রামগতি ও কমলনগর উপজেলা নিয়ে লক্ষ্মীপুর-৪ আসন। ভোটার চার লাখ ১৩ হাজার ৮৯২ জন। এই আসনে ১৯৮৬ সালে আ স ম আবদুর রব (জাতীয় পার্টি), ১৯৮৮ সালে মোশাররফ হোসেন (সম্মিলিত বিরোধী দল), ১৯৯১ ও ৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আবদুর রব চৌধুরী (বিএনপি) এবং ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে আ স ম আবদুর রব (জাসদ), ২০০১ ও ২০০৮ সালে এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান (বিএনপি), ২০১৪ সালে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (আওয়ামী লীগ), ২০১৮ সালে আবদুল মান্নান (বিকল্পধারা) এবং ২০২৪ সালে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (স্বতন্ত্র) এমপি নির্বাচিত হন।

ভোটারদের প্রত্যাশা

কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন গ্রামের স্কুলশিক্ষক ইসমাইল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘নদী আমাদের সব শেষ করে দিচ্ছে। একবার, দুইবার নয়; অনেকেই আছেন ৮-১০ বার করে ভাঙনের শিকার হয়েছেন। বারবার ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে হচ্ছে। এক সময়ের জমিদাররাও এখন রাস্তার পাশে থাকেন—এমন উদাহরণও আছে। নির্বাচনে যারাই জিতুক, আমরা এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ চাই।’

আরও পড়ুন
বিএনপির দিকে তাকিয়ে এলডিপির শাহাদাত, আলোচনায় উপদেষ্টা মাহফুজ
ভোটের লড়াইয়ে দুই ‘ভূঁইয়া’, তৎপরতা নেই এনসিপির
এ্যানির আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের সাবেক সভাপতি রেজাউল
পলাতক ওসমান পরিবার, খেলায় এগিয়ে বিএনপি
মির্জা আব্বাস-ড. হেলালের লড়াইয়ের আভাস, আলোচনায় ওসমান হাদী

রামগতির চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান দিদার উদ্দিন বলেন, ‘এমপি প্রার্থীরা নির্বাচন এলে ভাঙনরোধে শুধু প্রতিশ্রুতি দেন, কাজ করেন না। আমরা কাজ দেখতে চাই।’

হাজীরহাট উপকূল কলেজের শিক্ষার্থী পারুল পারভিনের ভাষ্য, ‘আমি নতুন ভোটার হয়েছি। যে প্রার্থী নদীভাঙন রোধে ভালো ভূমিকা রাখবেন, তাকেই আমরা ভোট দেবো। আমরা জম্মভূমির ঘরভিটা রক্ষার দাবি জানাই।’

যা বললেন প্রার্থীরা

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী বিথীকা বিনতে হোসাইন বিথী জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘জনগণ রাজনৈতিক পরিবর্তন চায়। বিগত দিনে অনেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েও বাস্তবায়ন করেনি। আমার স্বামীকে দলমত নির্বিশেষে মানুষ স্মরণে রেখেছে। আমিও তাদের কল্যাণে কাজ করছি। দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে বিশ্বাস করছি।’

সার্বিক বিষয়ে বক্তব্য জানতে বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে আ স ম আবদুর রবের মোবাইল ফোনে কল করা হয়। এসময় তার স্ত্রী জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব কল রিসিভ করে বলেন, ‘রব সাহেব অসুস্থ বিধায় আমিই নির্বাচনে অংশ নেবো। বিএনপির সঙ্গে আমরা জোটগতভাবে আন্দোলনে মাঠে ছিলাম। এখন নির্বাচন হবে, তা নিয়ে বোঝাপড়া হচ্ছে। মাঠে আমরা নারীদের নিয়ে কাজ করছি। আ স ম আবদুর রবের উন্নয়নমূলক কাজগুলোই আমার শক্তি হিসেবে কাজ করছে।’

‘দলের বাইরে জেএসডির কাউকে মনোয়নন দিলে বিএনপির নেতাকর্মীরা মানবেন না’—এ বি এম আশরাফ উদ্দিন নিজানের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে তানিয়া রব বলেন, ‘আমাদের বিষয়ে তারেক রহমান চিঠি দিয়েছেন। তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। যিনি এসব কথা বলেন, তিনি কি তারেক রহমানের চেয়ে বড় কিছু?’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘এখনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়নি। তারপরও আমাদের ওয়ার্ড ও কেন্দ্র কমিটি করা হচ্ছে। গ্রামগঞ্জে মানুষের কাছে অনেক সাড়া পাচ্ছি।’

বিএনপি নেতা এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান জাগো নিউজকে বলেন, ‘তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নে প্রান্তিক পর্যায়ে আমরা যাচ্ছি, নিয়মিত নারী সমাবেশ করছি। বিগত দিনে আমাদের ১৩ হাজার নেতাকর্মীকে মামলার আসামি করা হয়েছিল। তারা আমার সঙ্গেই আছেন। এরশাদ ও শেখ হাসিনার দালাল আ স ম রবকে বিএনপির নেতাকর্মীরা মেনে নেবে না।’

কমলনগর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আকরাম হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী মাসে অন্তত ২০ দিন কমলনগর, রামগতিতে সফর করেন। আমরাও একদিন এক ইউনিয়নে যাচ্ছি। ভোটাররাও পজিটিভ। বিশেষ করে ডাকসু নির্বাচনের পর আমাদের প্রত্যশা বেড়ে গেছে।’

কাজল কায়েস/এসআর/এমএমএআর/জিকেএস

Read Entire Article