তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপ করলে মৃত্যুহার কমবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের 

3 months ago 11

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপমুক্ত থেকে বাজেটে তামাকের ওপর কার্যকর কর ও মূল্য বৃদ্ধি করলে তামাকজনিত মৃত্যুর হার কমবে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি এই খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় আরও বাড়বে বলেও জানান তারা।  

শনিবার (২৪ মে) ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের অডিটরিয়ামে ‘আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তামাক কর প্রস্তাবন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন তথ্য জানান তারা।

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সহসভাপতি ডা. মোহাম্মদ খলিলউল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের উপ-পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান। সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন এবং আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, গ্লোবাল টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক ফেরদৌস মামুন, বাংলা টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক এমএম বাদশাহ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি এবং বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান মাহমুদ। 

আলোচনা সভায় আসন্ন বাজেটের জন্য তামাক কর ও মূল্য কাঠামো প্রস্তাব করা হয়, যা হলো- নিম্ন ও মধ্যম স্তর একত্রিত করে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ; উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকা অপরিবর্তিত রাখা; প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকার খুচরা মূল্য ১৯০ টাকা নির্ধারণ। একই সঙ্গে সিগারেটের খুচরা মূল্যের ওপর ৬৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা। এ ছাড়াও ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ প্রস্তাব করা হয়। 

প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা ও প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপেরও প্রস্তাব রাখা হয়। 
এ সময় মূল প্রবন্ধে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী শরিফুল ইসলাম জানান, সুপারিশ অনুযায়ী আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তামাকপণ্যের বিদ্যমান কর ব্যবস্থা সংস্কার করলে সিগারেটের ব্যবহার ১৫.১ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ১৩.০৩ শতাংশ হবে। প্রায় ২৪ লাখ প্রাপ্ত বয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে এবং প্রায় ১৭ লাখ তরুণ ধূমপান শুরু করতে  নিরুৎসাহিত হবে। দীর্ঘ মেয়াদে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫৮ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৮ লাখ ৬৯ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠীর অকাল মৃত্যুরোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়াও প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে অর্থাৎ ২০ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি। 

প্রস্তাবনার পক্ষে সমর্থন জানিয়ে সিগারেট বা তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণের চেয়ে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার বলেও জানান বক্তারা। এছাড়াও আগামী প্রজন্মকে তামাকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে এবং নতুন তামাকসেবী সংখ্যা হ্রাস করতে আসন্ন বাজেটে তামাক পণ্যের কর ও মূল্যবৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।

Read Entire Article