গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি সর্বশক্তি দিয়ে ছাত্রদের সামাজিক আন্দোলনকে রাজনীতিকরণ করে হাসিনা পতন আন্দোলন ত্বরান্বিত করেন। কেউ স্বীকার না করলেও আমি নিজে সাক্ষ্য দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, দিল্লির তাঁবেদারি ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দেশের মনুষকে সাহসী করার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার পতন ঘটানো হয়েছে। আর এই কাজটি করেছিল গণ অধিকার পরিষদ।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারে সরকারকে আমরা সহায়তা করছি। আমাদের অগ্রযাত্রা থামার জন্য নয়। দেশের মঙ্গলে যেমন আমরা সোচ্চার, তেমনি ভারতের আগ্রাসন রুখতে গণ অধিকার পরিষদ সর্বদা প্রস্তুত।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে ঝিনাইদহ জেলা শিশু একাডেমি মিলনায়তনে ‘দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, হানাহানিমুক্ত সম্প্রীতির বাংলাদেশ গঠন ও রাষ্ট্র সংস্কারে করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
গণ অধিকার পরিষদ ঝিনাইদহ জেলার সভাপতি প্রভাষক সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম আশিকুর রহমান, বিল্লাল হোসেন, গণ অধিকার পরিষদের ঝিনাইদহ জেলার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল জাহিদ রাজন, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন কবির, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আশিক ইকবাল ও রিহান উদ্দীন রায়হান। সভা পরিচালনা করেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এ সময় রাশেদ খাঁন বলেন, যারা ভারতে বসে নাটাই ঘোরায়, বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে নাক গলায়, দিল্লিতে বসে বাংলাদেশে কে ক্ষমতায় আসবে সিদ্ধান্ত নেয় তাদের ষড়যন্ত্র আর কুট পরিকল্পনা রুখে দিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। বাংলাদেশে মোদির আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলন আমরাই করেছিলাম। দিল্লির কসাই মোদির হাতে মুসলমানদের রক্ত লেগে আছে। তাকে প্রতিহত করতে সেদিন গণ অধিকার পরিষদ মাঠে নেমেছিল এবং জেল-জুলুমের শিকার হয়েছিল।
রাশেদ খাঁন বলেন, খুনি হাসিনা ও তার দলকে বিচারের মুখোমুখি না করা পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। শুধু আওয়ামী লীগই নয়, জাতীয় পার্টিসহ ফ্যাসিস্ট হাসিনার আশীর্বাদপুষ্ট ১৪ দলের কোনো নেতাকর্মীকে দাদি, মামি ও স্বতন্ত্র পদে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। খুনি হাসিনাকে গণহত্যা ও গণতন্ত্র হত্যার দায়ে ভারত থেকে ফিরিয়ে তাকে ফাঁসির দড়িতে ঝোলাতে হবে। আর সরকার যদি হাসিনার দলের সঙ্গে সমঝোতা করে তাদের নির্বাচনের মাঠে নামায় তবে সরকারের বিরুদ্ধেও মাঠে নামার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
তিনি বলেন, হাসিনা তার দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে ঘন ঘন অডিও ফাঁসের নাটক করছেন। এই নাটক বন্ধ করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমে পতিত স্বৈরাচার হাসিনার অডিও প্রচার বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
রাশেদ খাঁন বলেন, তারেক রহমান একটি ইতিবাচক চিন্তার জায়গা থেকে আমাকে (রাশেদ খাঁন) সহায়তা করতে ঝিনাইদহ বিএনপি নেতাদের চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা হাইকমান্ডের এই চিঠির মর্মার্থ বুঝতে ভুল করে আমাকে অসহযোগিতা করে যাচ্ছেন। ঝিনাইদহ বিএনপি হাইকমান্ডের নির্দেশ মানছেন না। কার্যত তারা তারেক রহমানকেই মানেন না। তাহলে তারা কীসের দল করেন?
তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, আমি এমপি-মন্ত্রী হওয়ার জন্য রাজনীতি করি না। আমরা এমপি-মন্ত্রী তৈরি করি, এমপি-মন্ত্রী বানাই। গণ অধিকার পরিষদ ছাত্র আন্দোলনের কারখানা। আমরা ক্ষমতায় যেতে রাজনীতি করি না, পরিবর্তনের জন্য আমরা রাজনীতি করি।
রাশেদ খাঁন বলেন, আমাকে সহায়তা করতে তারেক রহমানের এই চিঠি নিয়ে যারা নোংরা খেলায় মেতেছেন তারা ছাত্র-জনতার বিপ্লবে বিশ্বাস করে না। এমনটি করলে বিপ্লব ব্যর্থ হবে। ফ্যাসিবাদী শক্তির উত্থান ঘটবে। তখন কেউ রেহাই পাবেন না। এ থেকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
রাশেদ খাঁন অভিযোগ করে বলেন, ঝিনাইদহে দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিসহ নানা অপরাধ চলছে। আমরা তো এসব করার জন্য বিপ্লব করিনি। এসব কর্মকাণ্ড চলতে দেওয়া হবে না।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লিখুন। কেউ হুমকি দিলে আমি রাশেদ খাঁন আপনাদের জন্য বুক পেতে দেব।