বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে রাজকীয় চেয়ার বানিয়েছেন ময়মনসিংহের ভালুকার হবিরবাড়ীর কৃষক মো. আব্দুল মোতালেব। এ উদ্যোগ নিয়ে কেউ ইতিবাচক মন্তব্য করলেও কেউ কেউ নেতিবাচক দৃষ্টিতেও দেখছেন। মোতালেবের দাবি, কোনো প্রতিদানের আশায় নয়, শুধু ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা থেকে তিনি এ চেয়ার তৈরি করেছেন।
এ অঞ্চলের মানুষ তাকে ‘খেজুর মোতালেব’ নামে চেনেন। দারিদ্র্য ঘোচাতে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ১৯৯৮ সালে সৌদি আরবে শ্রমিক ভিসায় পাড়ি জমান তিনি। সেখানকার খেজুর বাগানে ২০০১ সাল পর্যন্ত কাজ করার সময় জানতে পারেন, মরুভূমির দেশে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিমগাছ লাগিয়েছিলেন, যা আজও হাজিদের ছায়া দিচ্ছে। সেই অনুপ্রেরণায় তিনি মনে করেন, মরুর দেশে নিম গাছ জন্মালে, বাংলাদেশের মাটিতেও সৌদি খেজুর ফলানো সম্ভব।
এ বিশ্বাস থেকেই সৌদি আরব থেকে ৩৫ কেজি খেজুরের বীজ নিয়ে এসে দেশে চাষ শুরু করেন তিনি। পরে পত্রিকা ও টেলিভিশনে তার খেজুর বাগানের খবর প্রকাশিত হয়। তা দেখে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০০৪ সালের ১৬ জুন ভালুকার খেজুর বাগান পরিদর্শনে আসেন। প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করে বাগান ঘুরে দেখেন তিনি। তবে তখন মোতালেব তাকে ভালো কোনো চেয়ারে বসাতে না পারায় আক্ষেপ থেকে যায়।
সেই অনুপ্রেরণা ও ভালোবাসা থেকেই তিনি রাজকীয় চেয়ার বানানোর উদ্যোগ নেন। বর্তমানে সফল খেজুর চাষি হিসেবে পরিচিত মোতালেব আশা করছেন, একদিন তারেক রহমান দেশে ফিরবেন এবং আবারও তার খেজুর বাগান পরিদর্শনে আসবেন।
জানা গেছে, তারেক রহমানের জন্য বানানো চেয়ারের পাশাপাশি মোতালেব আরও একটি ময়ূর সিংহাসন, বিশাল খাট, ডাইনিং টেবিল এবং দুটি রাজকীয় কাঠের পাখা তৈরি করেছেন। এর মধ্যে তারেক রহমানের জন্য বানানো চেয়ারটি ৯৫ কিউবিক ফিট কাঁঠাল কাঠ দিয়ে নির্মিত। আরেকটি চেয়ার তৈরি হয়েছে ৯০ কিউবিক ফিট কাঠ দিয়ে। এসব আসবাব এখন মোতালেবের বাড়িতে সংরক্ষিত রয়েছে।
আরও জানা গেছে, ২০০৮ সাল থেকে এ আসবাব তৈরির কাজ শুরু হয়। স্থানীয় সুজন নামের এক কাঠমিস্ত্রি খেজুর বাগানে কাজ করার পাশাপাশি প্রতিদিন সন্ধ্যায় আসবাব তৈরির কাজ করেন। মাসিক ১২ হাজার টাকার চুক্তিতে তিনি এ কাজ সম্পন্ন করেন।
আব্দুল মোতালেব বলেন, চেয়ারের নকশা তিনি নিজেই করেছিলেন। কাজ শেষ হওয়ার পর তিনি নকশার কাগজ ছিঁড়ে ফেলেন যাতে এ ধরনের চেয়ার আর কেউ বানাতে না পারে। কোনো প্রতিদানের আশায় নয়, শুধু ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা থেকে তিনি এ চেয়ার তৈরি করেছেন।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য ও ভালুকা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মামুন বলেন, ২০০৪ সালে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখানে এসেছিলেন। বিএনপি একটি কর্মী ও সমর্থকবান্ধব দল। যেখানে এই দলটি তাদের কর্মী ও সমর্থকদের ভালোবাসায় দীর্ঘদিনের গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে ভালোবেসে আমাদের জাতীয়তাবাদী দলের অনেক লোকজন বিভিন্নভাবে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি উনি যে ধারণা পোষণ করেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলছেন, কেউ যদি আমাকে ভালোবাসে তাহলে সে যেন জনগণের কাছে যায়। জনগণের খেতমতে নিজেকে ব্যয় করেন। আমার মনে হয়, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে ভাষায় বলেছেন উনাদের সেই ভাষায় কাজ করা উচিত।
ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার রোকন বলেন, ২০০৪ সালে আমাদের নেতা তারেক রহমান পত্রিকায় খবর দেখে মোতালেবের খেজুর বাগান দেখতে আসেন। বাগান পরিদর্শন করে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। সেই স্মৃতি মনে রেখে একজন সচ্ছল কৃষক মোতালেব ভালোবেসে শ্রদ্ধাভরে যদি তারেক রহমানের জন্য চেয়ার বানিয়ে থাকেন, এটা তার ভালোবাসার নির্দশন।
তিনি আরও বলেন, প্রিয় নবীর (সা.) পছন্দের ফল ছিল খেজুর। পবিত্র মাটির সেই খেজুর সফলভাবে দেশের মাটিতে ফলিয়ে কৃষক মোতালেব সারা দেশে এর প্রসার ঘটিয়েছেন। এটি ভালো কাজ বলেই ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।