গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত মওলানা ভাসানী সেতুটি উদ্বোধনের ঠিক একদিন পরেই ল্যাম্পপোস্টের ৩১০ মিটার বিদ্যুতের তার চুরির রেশ কাটতে না কাটতেই এবার সেতুর রিফ্লেক্টর লাইট চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবারও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ৯২৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও, দীর্ঘ এই সেতু ও সড়ক পারাপারে ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ও যানবাহন সেতু দিয়ে চলাচল করছে। হাজার হাজার দর্শনার্থী আসছে। অথচ সন্ধ্যা হলেই অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে দুই পারের কয়েক কিলোমিটার সংযোগ সড়কসহ পুরো সেতুটি।
গত ২০ আগস্ট সেতু উদ্বোধনের পর রাতে লাইট জ্বলে না ওঠায় তার চুরির বিষয়টি সবার নজরে আসে। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই এবার সেতুর রিফ্লেক্টর লাইট চুরি হয়ে গেছে। এসব ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক।
তারা আরও যোগ করেন, দুই পারে কোন পুলিশ নেই। দুই একজন পুলিশ দুই পারে শৃঙ্খলার চেষ্টা করলেও রাতে তাদের কেউ থাকেন না। এ কারণে সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি চুরি, ছিনতাই ছাড়াও ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এই নিরাপত্তাহীনতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতি আছে বলেও দাবি তাদের।
সেতুর হরিপুর অংশের বাসিন্দা আরমান ইসলাম। তিনি জানালেন চাঞ্চল্যকর তথ্য। তিনি জানান, সেতুটি উদ্বোধনের আগেই তার চুরি হয়েছে। সেদিন (২০ আগস্ট উদ্বোধনের দিন) সন্ধ্যায় কর্তৃপক্ষ ল্যাম্পপোস্টের লাইট চেক করতে গিয়ে দেখেন ওই সেতুর ওই পাড়ের (চিলমারী অংশ) কিছু লাইট জ্বললেও সেতু থেকে এপারের ৪০ থেকে ৫০টি ল্যাম্পপোস্টে কোনো লাইটে আলো ছিল না।
তিনি আরও জানান, পরদিন সকালে সেতু সংলগ্ন সংযোগ সড়কের দুটি ল্যাম্পপোস্টের গোড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহের সংযোগ স্থান থেকে মাটি খুড়ে তার কেটে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসে। এক ব্যক্তি তার চুরির সেই ছবি তুলে ফেসবুকে দিলে ভাইরাল হয়ে যায়। এবার সেতুর প্রায় সবগুলো রিফ্লেক্টর লাইট চুরি হয়ে গেল।
সেতু পারের চিলমারীর স্থানীয় বাসিন্দা জনি। তার ভাষ্য, নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় এসব চুরির ঘটনা ঘটছে। তবে, এসব ঘটনার পিছনে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রিফ্লেক্টর লাইট চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশল উজ্জ্বল চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, রিফ্লেক্টর লাইট চুরির বিষয়টি তিনি আজ দুপুরে লোক মুখে জানতে পারি। স্থানীয় পুলিশকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সেতুর ল্যাম্পপোস্টের বিদ্যুৎ সংযোগের তার চুরির বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। সেতুর সিকিউরিটি ইনচার্জ নুর আলম বাদী হয়ে গত শুক্রবার রাতে মামলা দায়ের করেছেন। দুষ্কৃতকারীদের ধরতে পুলিশ চেষ্টা করছে। ৩১০ মিটার বৈদ্যুতিক তারের আনুমানিক মূল্য প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ারও কাজ চলছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, গত বুধবার ২০ আগস্ট দুপুরে মওলানা ভাসানী সেতুটির উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। এক হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ ও ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের এই সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওফিড) অর্থায়নে এলজিইডির বাস্তবায়নে সেতুটি নির্মিত হয়েছে। সেতুতে মোট ৩১টি স্প্যান রয়েছে। সংযোগ সড়ক ও নদীশাসনসহ প্রকল্পে প্রায় ১৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেতুর উভয় পাশে সংযোগ সড়ক করা হয়েছে ৮৬ কিলোমিটার।
সেতুটি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ঘাট থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে। এতে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার এবং সাড়ে তিন ঘণ্টা থেকে চার ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হবে। এছাড়া সেতুটির কারণে দুই জেলার জীবনমানের উন্নয়ন ছাড়াও উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির চিত্র বদলে যাবে।