ভারতের পেটের ভেতর থাকা চিরচেনা বাংলাদেশ রাতারাতি বদলে গেছে দিল্লির জন্য। আর সে জায়গাটা দখলে নিচ্ছে পাকিস্তান। সীমান্ত লাগোয়া প্রতিবেশী দেশের ওপর নিজের প্রভাব কমে যাওয়ায়, এবার ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে ভারত। পাকিস্তানের নতুন শত্রু হয়ে ওঠা দেশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইরানকে ঘিরে সুদূর প্রসারী ছক কষছে দিল্লি। অথচ তিন বছর ধরে আফগানিস্তানের সঙ্গে রীতিমতো মুখ দেখাদেখি বন্ধ ছিল ভারতের।
যুক্তরাষ্ট্রের পুতুল সরকারকে হটিয়ে তিন বছর আগে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলে নেয় তালিবানরা। এরপরই পুরো বিশ্ব আফগানিস্তান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তবে রাশিয়া ও চীন তালিবানদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো ভারত।
দিল্লি সম্প্রতি দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে মনোযোগী হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। আফগানিস্তানে তালিবানরা আসায় কৌশলগত ও কূটনৈতিক দিক থেকে বড় ধাক্কা খেয়েছিল ভারত। এতে আফগানিস্তানকে সামরিক প্রশিক্ষণ, বৃত্তি এবং নতুন সংসদ নির্মাণ করে দেওয়ার মতো প্রকল্পগুলোতে ভারতের ব্যাপক বিনিয়োগ মুহূর্তে শেষ হয়ে যায়।
কাবুল পতনের সেই ঘটনা ওই অঞ্চলে পাকিস্তান ও চীনের বৃহত্তর প্রভাবের পথও প্রশস্ত করে দেয়। এর ফলে সেখানে ভারতের কৌশলগত ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সুরক্ষা সংক্রান্ত উদ্বেগও তৈরি হয়। তবে গেল সপ্তাহে সেই পরিস্থিতি বদলের একটা ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
দুবাইয়ে ভারতের শীর্ষ কূটনীতিক বিক্রম মিশ্রি তালেবানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আশরাফ ঘানির পতনের পর এই সাক্ষাৎকে দুই পক্ষের সর্বোচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। বৈঠকে ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক শক্তি উল্লেখ করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের আগ্রহ প্রকাশ করে তালেবান।
জানা গেছে, ওই বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল চাবাহার বন্দর, যা পাকিস্তানের করাচি ও গোয়াদর বন্দরকে পাশ কাটানোর জন্য তৈরি করছে ভারত। বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতায় ফেরার পর তালেবান যে আন্তর্জাতিক বৈধতা চেয়ে এসেছিল, দিল্লি এখন তা দিয়ে দিয়েছে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না থাকা একটি দেশের কাছ থেকে এমন পদক্ষেপ আসায় তা আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এটা তালেবানের জন্য কূটনৈতিক বিজয়ও বটে।
এখনো পর্যন্ত কোনো দেশই তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে ৪০টি দেশ কোনো না কোনোভাবে তালেবান সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ বা অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক রেখেছে। গেল বছর ভারতের পার্লামেন্টে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, আফগানিস্তানের সঙ্গে তার দেশের বন্ধন ঐতিহাসিক এবং সভ্যতার বন্ধন। এমনকি আফগানিস্তান জুড়ে ৫০০টিরও বেশি প্রকল্পে ৩০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেছিল ভারত।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণেই দিল্লির সঙ্গে তালেবানের সম্পর্ক স্বাভাবিক হচ্ছে। পাকিস্তানের দাবি, কট্টরপন্থি পাকিস্তানি তালেবান (টিটিপি) আফগানিস্তান থেকে তৎপরতা চালায়। গেল জুলাই মাসে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানিয়েছিলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার লক্ষ্যে তার দেশ আফগানিস্তানে হামলা অব্যাহত রাখবে। দুই বন্ধুর সম্পর্কের এই ফাটলের সুযোগটাই এখন নিজের স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছে ভারত।