তিন চিকিৎসক দিয়ে চলছে হাসপাতালের ‘পুরো’ চিকিৎসাসেবা
জনবল সংকটে মুখ থুবড়ে পড়েছে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন প্রায় কয়েক হাজার মানুষ। যথাযথ ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল টেকনিশিয়ান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এবং কর্মচারী না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার প্রায় দুই লাখ সাধারণ মানুষ।
জানা গেছে, ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০১৭ সালে হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হয়। দীর্ঘদিনেও অবকাঠামো উন্নয়ন ও সেবার মানে উন্নতি হয়নি হাসপাতালটিতে।
হাসপাতাল সূত্র বলছে, সরকারি বিধি মোতাবেক অনুমোদিত ডাক্তার ১৯ জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৩ জন। এ ছাড়া অভাব রয়েছে নার্স, এক্সরে টেকনিশিয়ান, রেডিও টেকনিশিয়ান আল্ট্রাসাউন্ড ডাক্তার, দাঁতের ডাক্তার, হেড এসিস্ট্যান্ট, ওয়ার্ড বয়, ক্লিনারসহ একাধিক পদ।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কৃষ্ণ জানান, হাসপাতালে ভালো ডাক্তার নাই, ভালো ডাক্তার থাকলে কিশোরগঞ্জ শহরে যেতে হতো না। এই হাসপাতালে ওষুধও ঠিকমতো পাওয়া যায় না, একটা পাওয়া গেলে আর একটা পাওয়া যায় না।
শিক্ষার্থী সাকার হোসেন বলেন, হাসপাতালে এমনিতেই জনবল সংকট তারপর আবার বড় কর্মকর্তা তিনি নিজেও নিয়মিত হাসপাতালে থাকেন না। হাসপাতালে মানুষ আসে সুস্থ হওয়ার জন্য কিন্তু এইখানে চিকিৎসা না পেয়ে অসুস্থ হয়েই বাড়িতে ফিরতে হয়। আমরা কবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাব?
সাব রেজিস্ট্রার অফিসের স্টাফ শারমিন জানান, হাসপাতালে আসলে ডাক্তারের অভাবে সঠিকভাবে সেবা পাওয়া যায় না। উপজেলায় হাসপাতাল থাকার পরও চিকিৎসার জন্য শহরে যেতে হয়। ওষুধসহ জনবল সংকট মেটানো দরকার।
উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আবুল কালাম বলেন, সেবার মান ভালো দিতে হলে সঠিক জনবল দরকার। আমি যে পোস্টে কাজ করি এই পোস্টে ১১ জন লোক থাকার কথা কিন্তু মাত্র আছে ৩ জন। ছুটিতে গেলে চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকে যার জন্য কেউ ছুটিতে যাওয়া হয় না। এই হাসপাতালে অতিদ্রুত জনবল বৃদ্ধি করা দরকার।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মোহাম্মদ শাকিল আহমেদ বলেন, এই হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরেই তিনজন স্টাফ নার্স দিয়ে জরুরি বিভাগ চালাচ্ছি যা আমাদের জন্য কষ্টকর। আমরা কোনো সরকারি ছুটি কাটাতে পারি না। ছুটিতে গেলে জরুরি বিভাগে মানুষ চিকিৎসা পাবে না।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, আধুনিক মেশিন থাকার পরও মেডিকেল টেকনোলজিস্টের অভাবে এক্সরে মেশিনের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অতিশ দাস রাজীব বলেন, হাসপাতালে জনবল বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনেকবার চিঠি লেখা হয়েছে কিন্তু এখনো কোনো সমাধান মেলেনি। দীর্ঘদিন ধরে অপারেশন থিয়েটারটি জনবলের অভাবে বন্ধ থাকায় অন্তঃসত্ত্বা রোগীদের নিয়ে বাধ্য হয়ে শহরে ছুটেছে সাধারণ মানুষ। জনবল সংকট মেটানো সম্ভব হলে সেবার মান আরও বৃদ্ধি হবে।
কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, মায়ের অসুস্থতার জন্য ছুটিতে ছিলাম।