তিনবার অকৃতকার্য হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি: মামুন হোসেন

3 hours ago 5

মো. মামুন হোসেন বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের ১৭তম বিজেএস পরীক্ষায় ‘সহকারী জজ’ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার গদাইপুর গ্রামে ১৯৯৫ সালের ১০ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মো. আব্দুল হাকিম মোল্ল্যা, মা সালেহা বেগম।

প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন গদাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। এরপর গদাইপুর জেহের আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, খান সাহেব কোমর উদ্দীন কলেজ থেকে এইচএসসি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (সম্মান) এবং এলএলএম (স্নাতকোত্তর) সম্পন্ন করেন। তিনি ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী সনদপ্রাপ্ত হোন।

তার সহকারী জজ হওয়ার গল্প ও নতুনদের পরামর্শ নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মমিন উদ্দিন

জাগো নিউজ: সহকারী জজ হওয়ার অনুভূতি কেমন?
মো. মামুন হোসেন: আলহামদুলিল্লাহ, মহান আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া। আল্লাহ আমার বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করেছেন। অনুভূতির কথা বলতে হয়, বাবা-মায়ের স্বপ্নের সাথে যখন নিজের স্বপ্ন মিলে যায় এবং নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে যখন সেই স্বপ্ন পূরণ হয়; তখন খুশির সীমা থাকে না। এ এক দারুণ অনুভূতি।

জাগো নিউজ: পড়াশেনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল?
মো. মামুন হোসেন: আমার শিক্ষাজীবন নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে গেছে। আর্থিক টানাপোড়েনের সংসারে, আমার বাবা ও একমাত্র বড় ভাই, তাদের রক্ত পানি করা কায়িক পরিশ্রমের টাকা দিয়ে জুগিয়েছেন আমার পড়াশোনার খরচ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমি ছাত্র পড়ানো শুরু করি। আমার পড়াশোনার খরচ মেটাতে বাবার কষ্ট কিছুটা কমানোর জন্য।

জাগো নিউজ: সহকারী জজ হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
মো. মামুন হোসেন: ২০১৬ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে যখন ভর্তি হই; তখন থেকেই বাবা-মা এবং একমাত্র ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল মামুন একদিন বিচারক হবে। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। তাদের এই তীব্র ইচ্ছা এবং অক্লান্ত পরিশ্রম ছাত্রজীবন থেকে আমাকে জজ হতে উৎসাহিত করেছে।

 মামুন হোসেন

জাগো নিউজ: সহকারী জজ হওয়ার এই যাত্রার গল্প শুনতে চাই—
মো. মামুন হোসেন: আমার সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার এই যাত্র শুরু হয়েছিল স্বপ্নের মতো। আমি ২০২১ সালে সদ্য এলএলবি অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার আগেই ১৪তম বিজেএস পরীক্ষার প্রাথমিক ধাপ ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভাইভাতে বসি। কিন্তু ভাইভাতে অকৃতকার্য হওয়ায় শুরু হয় আমার নতুন কষ্টের পথচলা। ১৫তম ও ১৬তম বিজেএস পরীক্ষার ভাইভাতে ও অকৃতকার্য হই। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। সেই সময়গুলোতে মা সব সময় বুঝিয়েছেন, সান্ত্বনা দিয়েছেন, ধৈর্য ধারণ করতে বলেছেন। মায়ের পরামর্শে ১৭তম বিজেএস পরীক্ষার জন্য আবার নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকি। নিজের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করতে থাকি। মোনাজাতে সাহায্য চাইতে থাকি মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে। অবশেষে ১৭তম বিজেএসে সুপারিশের মাধ্যমে শেষ হয় আমরা জুডিসিয়ারি পরীক্ষার যাত্রা।

জাগো নিউজ: কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন?
মো. মামুন হোসেন: আমাকে জজ হতে সর্বদা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন আমার বড় ভাই। ভাইয়ের অনুপ্রেরণা আর সীমাহীন ত্যাগের জন্যই আমার আজকের এই সাফল্য বলে আমি মনে করি।

জাগো নিউজ: এই পেশায় থেকে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মো. মামুন হোসেন: আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে—যথাযথ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশমাতৃকার সেবা করা।

এসইউ/এএসএম

Read Entire Article