মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পের তাণ্ডবের দুই দিন পেরিয়ে গেছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৮ মার্চ) ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে মিয়ানমারে ১,৬০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর দেশটি তীব্র মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে। ভূমিকম্পের পর পরই দেশটির রেড ক্রস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজন প্রতি ঘণ্টায় বাড়ছে।
এই ভূমিকম্পটি ছিল মিয়ানমারে শতাব্দীর অন্যতম শক্তিশালী কম্পন, যা সেতু, মহাসড়ক, বিমানবন্দর এবং রেলপথসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি দীর্ঘকাল ধরে গৃহযুদ্ধের মধ্যে রয়েছে, ফলে ভূমিকম্পের পর উদ্ধার প্রচেষ্টা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট ফেডারেশনের (আইএফআরসি) এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক আলেকজান্ডার ম্যাথিউ এক বিবৃতিতে বলেছেন, এটি কেবল একটি দুর্যোগ নয়, এটি একটি জটিল মানবিক সংকট, যা পূর্ববর্তী দুর্বলতাগুলোর ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করেছে। খবর রয়টার্স।
ভূমিকম্পের পর স্থানীয় সময় রোববার, বিদেশি উদ্ধারকারী দলগুলো মিয়ানমারে পৌঁছেছে, যাতে দেশের ত্রাণ এবং উদ্ধারকাজে সহায়তা করা যায়। মিয়ানমার রেড ক্রস জানায়, স্বেচ্ছাসেবকরা প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করছে এবং জরুরি সহায়তা হিসেবে কম্বল, ত্রিপল ও স্বাস্থ্য সামগ্রী বিতরণ করছে।
আইএফআরসি প্রায় ১১৩.৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জরুরি তহবিল সংগ্রহের আবেদন জানিয়েছে, যাতে ১ লাখ মানুষের জীবন রক্ষাকারী সহায়তা ও প্রাথমিক পুনরুদ্ধার সহায়তা প্রদান করা যায়।
তবে, ভূমিকম্পের পর দুটি দিন পার হলেও উদ্ধার কাজ এখনো কঠিন। অধিকাংশ উদ্ধারকর্মীকে খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরাতে হচ্ছে। ভারী যন্ত্রপাতির অভাবে উদ্ধারকাজের গতি মন্থর হয়ে পড়েছে এবং মিয়ানমারের যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা এ ধরনের বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার মতো সক্ষমতা দিতে পারেনি।
ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চল, যার কাছাকাছি প্রাচীন শহর মান্দালয় অবস্থিত। শহরটির প্রায় ১৫ লাখ বাসিন্দা রয়েছে এবং এখানে অনেক ঐতিহাসিক মন্দির ও প্রাসাদও রয়েছে।
মান্দালয়ে একটি ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া পরিবারের সদস্যদের উদ্ধারের জন্য খালি হাতে কাজ করছেন ২৫ বছর বয়সী হতেত মিন। তিনি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সেখানে অনেক ধ্বংসস্তূপ পড়েছে। কোনো উদ্ধারকারী দল এখানে আসেনি।
এক উদ্ধারকর্মী জানান, আমরা ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ১৪০ বৌদ্ধভিক্ষুকে উদ্ধারের চেষ্টা করছি, তবে আমাদের কাছে যথেষ্ট লোকবল এবং যন্ত্রপাতি নেই। কিন্তু আমরা কাজ বন্ধ করব না।
এই অবস্থায়, চীন, ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ প্রতিবেশী দেশগুলো উদ্ধার কার্যক্রমে সহায়তা করতে মিয়ানমারে উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে, যাতে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা যায়।