মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো অর্থ-বিত্ত এবং সামরিক দিক দিয়ে অনেক শক্তিশালী হলেও তাদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই। পারষ্পারিক দ্বন্দ্ব এবং অবিশ্বাস সৌদি আরব, ইরান, ইরাক ও তুরষ্কের মতো দেশগুলোকে কাছে আসতে দেয়নি। আর এর সুযোগ নিয়েছে আমেরিকা-ইসরায়েলসহ পশ্চিমারা। মুসলিম দেশগুলোর মতভেদের সুযোগ নিয়ে এ অঞ্চলে বিভিন্নভাবে আগ্রাসন চালিয়েছে তারা।
ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসন থেকে শুরু করে সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, সুদান ও লেবাননে সংঘাত। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসন এবং লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু। মুসলিম দেশগুলোতে এই অশান্তি এবং সংঘাত চলে আসছে শুধু অনৈক্যের কারণে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে বিরাজমান এই অনৈক্যের বিষয়ে এবার কথা বলেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজশকিয়ান। তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি পরিষ্কার করে দিয়েছে, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যকার দ্বিধা-বিভক্তির সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দেশে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইহুদিবাদী ইসরায়েল। তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী ওমর বেলাতের সঙ্গে এক বৈঠকে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) তেহরান সফরে যান তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী। তুর্কি সমর্থিত হায়াতে তাহরির আশ শাম বা এইচটিএস নাটকীয়ভাবে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার পর দুদেশের মন্ত্রী পর্যায়ের এই বৈঠককে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি উল্লেখ করে ইরানি প্রেসিডেন্ট বলেন, মুসলমানদের মধ্যকার মতভেদের সুযোগ নিয়ে ইহুদিবাদী ইসরায়েল ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা, লেবানন এবং সিরিয়ায় আগ্রাসন চালাচ্ছে এবং মুসলমানদের হত্যা করছে।
তিনি বলেন, আমরা যদি আমাদের মতপার্থক্য বাদ দিতে পারি তাহলে আমরা অনেক বেশি শক্তিশালী হবো এবং সারা বিশ্ব আমাদের সাথে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মানের ভিত্তিতে যোগাযোগ রাখবে। মুসলমানদের সমস্যাগুলোকে তিনি ভ্রাতৃপ্রতিম আচরণের মাধ্যমে সমাধান এবং শুধু কথায় নয়, প্রকৃতপক্ষেই মুসলিম বিশ্বকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।
ইরানি প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের প্রয়োজন ঐক্য, যদি মুসলিম দেশগুলো তাদের বাণিজ্য বাজার থেকে শুরু করে পরিবহন রুট এবং অন্যান্য সম্ভাবনাকে একে অপরের সাথে ভাগাভাগি করে নেয় তাহলে সেটি নিশ্চিতভাবে সমস্ত মুসলিম জাতির জন্য লাভজনক হবে এবং ইহুদিবাদী ইসরায়েল কিংবা অন্যরা মুসলিমদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার বা অপরাধমূলক তৎপরতা চালানোর সাহস পাবে না।
বৈঠকে ইরানি প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তায়েব এরদোয়ানের সাথে যতবারই তার বৈঠক হয়েছে ততবার তিনি মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, মুসলিম দেশগুলোর সম্পর্ক ও যোগাযোগ আরো বাড়ানো উচিত। তিনি বলেন, তুরস্কর সঙ্গে সব ক্ষেত্রে সম্পর্ক উন্নত করতে ইরান প্রস্তুত রয়েছে।
সূত্র : পার্সটুডে