তুরস্কে সুন্দর ক্যারিয়ার ছেড়ে এসেছি গাজীপুরকে সাজাতে

2 hours ago 4

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-৬ (টঙ্গী, গাছা ও পূবাইল) থেকে জামায়াতে ইসলামীর মনোনয়ন পেয়েছেন ড. হাফিজুর রহমান। সম্প্রতি তুরস্ক থেকে দেশে এনে তাকে দল থেকে এ মনোনয়ন দেওয়া হয়।

হাফিজুর রহমান ২০২১ সালে তুরস্কের তোকাত গাজি ওসমান পাশা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশে এসে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। দেশে এসেই তিনি বিশাল শোডাউনের মাধ্যমে তার প্রচারণায় প্রার্থিতার জানান দেন। প্রতিদিন নির্বাচনী এলাকা টঙ্গী, গাছা ও পূবাইল এলাকায় গণসংযোগ করছেন এই প্রার্থী।

সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন জামায়াত মনোনীত এই প্রার্থী। সাক্ষাৎকারে তিনি সংসদীয় আসন গাজীপুর-৬ নিয়ে তার ভাবনাসহ নানা বিষয় তুলে ধরেছেন।

জাগো নিউজ: প্রথমেই আপনার শিক্ষাজীবন ও রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে জানতে চাই।

হাফিজুর রহমান: আমি টঙ্গীর তা’মীরুল মিল্লাত মাদরাসা থেকে শিক্ষালাভ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগে পড়াশোনা করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময়ে টঙ্গীতেই বসবাস করতাম। আন্দোলন-সংগ্রামে টঙ্গীর মাটিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষে বড় একটি অংশের নেতৃত্বে ছিলাম।

ছোটবেলাতেই ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগ দেই। ইউনিট ও ওয়ার্ড পর্যায় থেকে ক্রমান্বয়ে তা’মীরুল মিল্লাত, টঙ্গী শাখার সভাপতি এবং টঙ্গী অঞ্চলের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। সবশেষ ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি থাকা অবস্থায় তুরস্কে পিএইচডি স্কলারশিপে মনোনীত হই। পরে তুরস্কে চলে যাই।

তুরস্কে যাওয়ার পর সেখানকার সংগঠন বাংলাদেশ ফোরাম অব তুর্কি’র প্রথমে সেক্রেটারি জেনারেল (২০১৫-২০২১) এবং পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি (২০২১ থেকে চলমান) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিভাগসহ বিভিন্ন কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।

তুরস্কে সুন্দর ক্যারিয়ার ছেড়ে এসেছি গাজীপুরকে সাজাতে

জাগো নিউজ: সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তটি কীভাবে নিলেন?

হাফিজুর রহমান: গাজীপুর-৬ আসন গঠন হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের আহ্বানে দেশে ছুটে আসি। মূলত জামায়াত আমিরের আহ্বানেই নির্বাচনে অংশ নিতে দেশে ছুটে আসি।

জাগো নিউজ: গাজীপুর-৬ আসন থেকে আপনাকেই কেন মনোনয়ন দেওয়া হলো?

হাফিজুর রহমান: বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবের পরে যে ফ্যাসিবাদের বিদায় হয়েছে, সেখানে ১২০০ শহীদ হয়েছেন। এ শহীদদের যে স্বপ্ন ছিল, এমন বাংলাদেশ গড়ার জন্য জামায়াতে ইসলামী সারাদেশে যোগ্য প্রার্থীকে বাছাই করেছেন। এরই অংশ হিসেবেই জামায়াতে ইসলামী আমাকে গাজীপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য চিন্তা করেছে।

জাগো নিউজ: আপনার নির্বাচনী এলাকা ও গাজীপুরকে নিয়ে কী ভাবছেন?

হাফিজুর রহমান: আমার পড়াশোনা পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে, লোক প্রশাসন নিয়ে। আমি তুরস্কে ১১ বছর ছিলাম। পড়াশোনা, ১১ বছরের অভিজ্ঞতা এবং বিভিন্ন দেশে গেছি, সেসব দেশ কীভাবে উন্নত হয়েছে তা দেখেছি। বিশেষ করে সিঙ্গাপুর, জার্মানি, ইউকে বা ইউরোপিয়ান দেশেগুলোর অভিজ্ঞতা নিয়েছি। এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষদের নিয়ে কাজ করতে চাই।

জাগো নিউজ: নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চালাতে গিয়ে টঙ্গীতে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

হাফিজুর রহমান: তরুণ প্রজন্ম আমাকে কাছে টেনে নিচ্ছে। তরুণরাই আগামীর নেতৃত্ব দেবে। আমি নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে গিয়ে অসম্ভব সাড়া পাচ্ছি। প্রত্যাশার চাইতেও বেশি সাড়া পাচ্ছি।

আরও পড়ুন
জিততে মরিয়া বিএনপি, মাঠে জামায়াত, প্রতীকের অপেক্ষায় এনসিপি
শহীদ জিয়ার জন্মস্থানে কে হবেন প্রার্থী—খালেদা জিয়া না তারেক রহমান
খালেদা জিয়ার আসনে বিএনপির ‘প্রেস্টিজের’ লড়াই
বিএনপির দুর্গে ফ্যাক্টর আওয়ামী লীগের ‌‘ভোটব্যাংক’

জাগো নিউজ: তরুণদের নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

হাফিজুর রহমান: জুলাই আন্দোলনে যে ১২০০ জন শহীদ হয়েছেন তার বেশিরভাগই হচ্ছে তরুণ। আগামীর বাংলাদেশ হবে তরুণদের বাংলাদেশ। জামায়াতে ইসলামী যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে, যে বাংলাদেশ আমরা করতে চাই, সেখানে তরুণ ও যুবকরা প্রাধান্য পাবে। তারা দেশ পরিচালনা করবেন। আমরা তরুণদের সামনে নিয়ে আসতে চাই।

গত ১০০ বছরে যে দেশগুলো দাঁড়িয়েছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, তুরস্ক—এ তিনটি দেশ এক সময়ে আমাদের কাছাকাছি ছিল। গত ২০-৩০ বছরে তারা অনেক উন্নত হয়েছে। উন্নত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে তরুণরা কাজ করেছেন। আমাদের দলের আমির সবসময় তরুণদের কথা বলেন। গাজীপুরেও তিনি তরুণ কেউ প্রার্থী হোক তেমনটা চেয়েছেন, যেজন্য তরুণদের নিয়ে এসেছেন। আমি বিশ্বাস করি, তরুণদেরসহ সবাইকে নিয়ে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে পারবো।

জাগো নিউজ: আপনার নির্বাচনী এলাকায় জামায়াতে ইসলামী কতটা শক্তিশালী?

হাফিজুর রহমান: আমার নির্বাচনী এলাকা টঙ্গী, গাছা ও পূবাইলে জামায়াতে ইসলামী সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী। এখানে প্রতিটি পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড ও থানা কমিটি রয়েছে। আমাদের কেন্দ্র কমিটিগুলোও হয়ে গেছে। দাঁড়িপাল্লা ও প্রার্থীর প্রক্ষে প্রতিদিন কাজ হচ্ছে। যখন প্রার্থী ঘোষণা হয়নি, তখনো দাঁড়িপাল্লার পক্ষে কাজ হয়েছে। আমি গাজীপুরের মানুষের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। সামনে নির্বাচনের যে সময়টুকু রয়েছে, সে সময়ে আসনের সব ভোটারের কাছে পৌঁছাতে পারবো বলে আশা করছি।

তুরস্কে সুন্দর ক্যারিয়ার ছেড়ে এসেছি গাজীপুরকে সাজাতে

জাগো নিউজ: নির্বাচনী এলাকা টঙ্গীতে কী কী সমস্যা রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

হাফিজুর রহমান: টঙ্গী একটি শিল্পনগরী। এখানে অনেক সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশ যে কারণে বিশ্বে পরিচিত, গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি। এর রাজধানী হচ্ছে গাজীপুর টঙ্গী। টঙ্গীতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাটের সমস্যা রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিআরটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এখানে আমরা অনেক মানুষকে হারিয়েছি। সাধারণ মানুষ এখান দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হন। নির্বাচিত হলে যোগাযোগ সমস্যার সমাধান করা হবে সবার আগে। টঙ্গীর আরেক বড় সমস্যা হচ্ছে নিরাপত্তা সমস্যা।

সকালে গার্মেন্টস শ্রমিক মা-বোনেরা যখন কর্মক্ষেত্রে যান, তারা নিরাপদে কর্মস্থলে যেতে পারবেন কি-না অথবা নিরাপদে বাসায় ফিরে আসতে পারবেন কি-না তার নিশ্চয়তা নেই। এমনকী স্কুল-কলেজগামী ছেলেমেয়েরা বাসা থেকে বের হলে নিরাপদে ফিরতে পারবেন কি-না তারও চিন্তায় থাকেন অভিভাবকরা। সবাই আতঙ্কে থাকেন তার মোবাইলটি ছিনিয়ে নিচ্ছে কি-না, ব্যাগ ধরে কেউ টান দিচ্ছে কি-না, ব্যবসায়ীরা সারাদিন ব্যবসা করে রাতে টাকাগুলো নিয়ে বাসায় রাখতে পারবেন কি-না...আমাদের কাজ হচ্ছে নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য গাজীপুর গড়া।

জাগো নিউজ: টঙ্গী থেকে মাদক ও সন্ত্রাস কীভাবে দূর করবেন?

হাফিজুর রহমান: টঙ্গীতে তরুণ এবং স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী অথবা যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করেছেন, তারা মাদকের সংস্পর্শে গিয়ে জীবনটা নষ্ট করে দিচ্ছেন। যারা মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাদক-সংক্রান্ত বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে বসবো। সবার সঙ্গে পরামর্শ করে কীভাবে মাদক নির্মূল করা যায় তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সবাই মিলে চেষ্টা করলে টঙ্গীকে মাদকমুক্ত করা সম্ভব হবে।

জাগো নিউজ: দেশের বাইরে সুন্দর একটা জীবন ছেড়ে দেশে এসে কি সফল হতে পারবেন?

হাফিজুর রহমান: দেশের বাইরে সুন্দর একটা ক্যারিয়ার ছিল, অনেক সুন্দর একটা জীবন ছিল। সে জীবনটা ছেড়ে এসেছি গাজীপুরটাকে সুন্দর করে সাজানোর জন্য। আমরা দেশটাকে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইউরোপ, আমেরিকার মতো করে গড়ে তুলতে চাই। যদি আমাদের তরুণরা আমাদের সঙ্গে থাকে, আমি বিশ্বাস করি তরুণদের শক্তি হচ্ছে মূল শক্তি, জুলাইয়ের শক্তি হচ্ছে মূল শক্তি। জুলাইয়ের স্পিড হচ্ছে আমাদের স্পিড। আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করবো। আশা করছি, সবার সহযোগিতায় সফল হবে পারবো।

জাগো নিউজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

হাফিজুর রহমান: আপনাকে এবং জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ।

এসআর/জিকেএস

Read Entire Article