তৃতীয় দিনের মতো শহীদ মিনারে প্রাথমিক শিক্ষকদের অবস্থান

5 hours ago 6

দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি আদায়ে টানা তৃতীয় দিনের মতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি করছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। একই সঙ্গে সারাদেশের সব বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলছে। দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত তাদের এ কর্মসূচি চলবে। প্রয়োজনে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে সব শিক্ষক ঢাকা চলে আসবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।

সোমবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষকরা পুরো শহীদ মিনার চত্বরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান করছেন। রোদ থেকে বাঁচতে অনেকে গাছের ছায়ায় মাদুর বিছিয়ে শুয়ে-বসে আছেন। শিক্ষক নেতারা শহীদ মিনারের বেদিতে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। মাঝে মাঝে মাইকে ভেসে আসছে দেশাত্মবোধক ও দাবি আদায়ের কথা-সংবলিত বিভিন্ন গান-কবিতা।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’র ব্যানারে প্রাথমিক শিক্ষকদের চারটি সংগঠন একসঙ্গে এ কর্মসূচি পরিচালনা করছেন। পরিষদের অন্যতম নেতা মু. মাহবুবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা এবার বিদ্যালয়ে ফিরবে না। দশম গ্রেড আমাদের মর্যাদার প্রশ্ন। প্রাথমিক শিক্ষকরা এ মর্যাদার হকদার। তাদের প্রাপ্য তাদের বুঝিয়ে দিলে শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরবেন।’

এদিকে, আজ (সোমবার) বিকেলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে গণশিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা থাকবেন। এ বৈঠকে শিক্ষকদের পক্ষ থেকেও একটি প্রতিনিধিদল থাকবে। সেখানে দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হতে পারে।

তৃতীয় দিনের মতো শহীদ মিনারে প্রাথমিক শিক্ষকদের অবস্থান

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম নেতা আবুল কাশেম বলেন, ‘দুই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হবে। সেখানে আমরা কেন দশম গ্রেড চেয়েছি, সেই যুক্তি তুলে ধরবো। যদি মন্ত্রণালয় দাবি মেনে নেয়, তাহলে আমরা ক্লাসে ফিরে যাবো। অন্যথায় আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’

কর্মবিরতি চলছে, আজও ক্লাস বন্ধ
রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার পর মধ্যরাতে সিদ্ধান্ত বদল করেন আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ সোমবারও সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলছে। এতে সাড়ে ৬৫ হাজারেরও বেশি বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ রয়েছে।

রাজধানীর কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এলেও ক্লাস হয়নি। ফলে দুপুর পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করে বাড়ি ফিরে গেছেন।

কতদিন কর্মবিরতি চলবে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের নেতা মু. মাহবুবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি দুইটাই চলছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা সোমবার সকালে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দেওয়ার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেটা বিবেচনাধীন। তবে সহকারী শিক্ষকরা এখন দশম গ্রেড চাইছেন। সেটা কতটা বাস্তবসম্মত; সরকারের পক্ষে তা বাস্তবায়ন সম্ভব কি না, তা নিয়ে সরাসরি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা শিক্ষকদের জানাবেন।’

শিক্ষকরা ফের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন কর্মবিরতি স্থগিত রাখবেন। এখন যদি কথা দিয়ে কথা না রাখেন, তাহলে সেটা দুঃখজনক। আশা করি, শিক্ষকরা কর্মবিরতি স্থগিত রেখে আলোচনা চালিয়ে যাবেন। আমরাতো দ্রুত সাড়া দিয়েছি, আলোচনার পথ খোলা রেখেছি। তাহলে কর্মবিরতি কেন?’

বার্ষিক ও বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কা
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৯টি। এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন ৩ লাখ ৮৪ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষক। তাদের অধিকাংশই সহকারী শিক্ষক। আর এসব বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে প্রায় ৯৬ লাখ শিশুশিক্ষার্থী। শিক্ষকরা কর্মবিরতির ডাক দিলে এ শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়।

তৃতীয় দিনের মতো শহীদ মিনারে প্রাথমিক শিক্ষকদের অবস্থান

আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় প্রান্তিক বা বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। সেই হিসেবে মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি রয়েছে বার্ষিক পরীক্ষার। এমন সময়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ও বিদ্যালয়ে ছেড়ে ঢাকায় এসে অবস্থান কর্মসূচি করায় শিখন ঘাটতিতে পড়বে শিক্ষার্থীরা।

তাছাড়া দীর্ঘ ১৬ বছর পর এবার ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ পরীক্ষার প্রস্তুতিতেও ভাটা পড়েছে শিক্ষার্থীদের।

ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রজব আলী। তার সন্তান মোহাম্মদপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। এবার বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে সে। কিন্তু শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণায় সন্তানের লেখাপড়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তিনি।

রজব আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘১৫-১৬ বছর পর এবার বৃত্তি পরীক্ষা চালু হচ্ছে। আমার মেয়েটা বৃত্তি দেবে। কিন্তু শিক্ষকরা কর্মবিরতি ডাকায় গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা তো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমন চলতে থাকলে প্রস্তুতি নিতে পারবে না। এমন হলে তো বৃত্তি পরীক্ষায় ভালো করা মেয়েটার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়বে।’

এএএইচ/এমআইএইচএস/এএসএম

Read Entire Article