ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে তেহরানে আটকাপড়া বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। এরই মধ্যে প্রায় ১০০ বাংলাদেশির একটি তালিকা করা হয়েছে। তাদের প্রথম দলটি আগামী সপ্তাহেই দেশে ফিরবে।
রোববার (২২ জুন) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক আসিফ শাহ রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন। ব্রিফিংয়ে ইরান পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
আসিফ শাহ বলেন, ইরানে উদ্ভূত যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে ফেরানোর প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সরকার শুরু করেছে। ইরানের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সহযোগিতায় এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
এক্ষেত্রে পাকিস্তান নাকি অন্য কোনো দেশকে ব্যবহার করে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা হবে, সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি এ মুখপাত্র।
আরও পড়ুন
- ফরদোসহ ইরানের ৩ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা যুক্তরাষ্ট্রের
- ইরান শান্তি স্থাপন না করলে আরও হামলা চালানো হবে: ট্রাম্প
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, তেহরান থেকে দেশে ফিরতে চান এমন ৯২ জন বাংলাদেশির একটি তালিকা পাকিস্তানের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাদের স্থলপথে ইরান থেকে পাকিস্তানে আনা হবে। সেখান থেকে দুবাই হয়ে আকাশপথে দেশে ফেরানো হবে। এ প্রক্রিয়ায় প্রথম ধাপে ২৫ বাংলাদেশি নাগরিকের ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রত্যাশা করছে প্রত্যাবাসনপ্রত্যাশীদের প্রথম দলটি আগামী সপ্তাহেই বাংলাদেশে পৌঁছাবে। পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও ফেরত আনা হবে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে ফিরতে আগ্রহী সব বাংলাদেশিদের নাম, ঠিকানা ও অন্য তথ্যাদিসহ তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিবন্ধনের জন্য অনুরোধ করেছে মন্ত্রণালয়।
ইরানে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকরা এবং বাংলাদেশে তাদের স্বজনরা জরুরি প্রয়োজনে দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিচের মোবাইল ফোন নম্বরগুলোতে (হোয়াটস অ্যাপসহ) সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। বাংলাদেশ দূতাবাস, তেহরান- হটলাইন নম্বর +৯৮৯৯০৮৫৭৭৩৬৮ ও +৯৮৯১২২০৬৫৭৪৫। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হটলাইন নম্বর +৮৮০১৭১২০১২৮৪৭।
ইরানে চলমান সংঘাতের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করে আসিফ শাহ বলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। এ ধরনের পরিস্থিতি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করার ঝুঁকি তৈরি করে এবং যা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতিও হুমকিস্বরূপ।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, যেকোনো সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানে সংলাপ ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পক্ষে বাংলাদেশ তার দীর্ঘদিনের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছে। বাংলাদেশ সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে। আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়তে পারে, এমন যেকোনো কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানাচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যের চলমান পরিস্থিতির নিরসন এবং এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে বাংলাদেশ জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাচ্ছে বলেও জানান এ মুখপাত্র।
আসিফ শাহ বলেন, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে গঠনমূলক আলোচনা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে চলাই দীর্ঘস্থায়ী শান্তি স্থাপনের একমাত্র টেকসই পথ ।
জেপি/এমকেআর/এমএস