থামছে না বিদেশিদের শেয়ারবাজার ছাড়ার প্রবণতা, এক মাসে বন্ধ ৭৮১ বিও

4 hours ago 6

দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে দেশের শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের দেশের শেয়ারবাজার ছাড়ার প্রবণতা থামেনি। প্রতিনিয়তি বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার ছাড়ছেন। গত এক মাসে তাদের ৭৮১টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব কমেছে। বিদেশি ও প্রবাসীরা শেয়ারবাজার ছাড়লেও এ সময়ে বেড়েছে স্থানীয় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা।

দীর্ঘদিন ধরেই ধারাবাহিকভাবে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমছিল। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা ধারাবাহিকভাবে শেয়ারবাজার ছাড়তে থাকেন। যা অব্যাহত থাকে চলতি বছরের ২০ মে পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাবে কমে ৯ হাজার ১৭৬টি।

তবে ২০ মে থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত শেয়ারবাজারে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বাড়তে দেখা যায়। এই সময়ের মধ্যে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বাড়ে ৭৪টি। তবে এরপর থেকে আবার তাদের বিও হিসাব কমতে শুরু করে। যা সদ্য সমাপ্ত আগস্ট মাসজুড়েও অব্যাহত ছিল। অথচ আগস্ট মাসজুড়ে শেয়ারবাজার ছিল বেশি ইতিবাচক। এ সময়ে মূল্যসূচকে যেমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে, তেমনি লেনদেনের গতিও বেড়েছে।

বিও হল শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্রোকারেজ হাউস অথবা মার্চেন্ট ব্যাংকে একজন বিনিয়োগকারীর খোলা হিসাব। এই বিও হিসাবের মাধ্যমেই বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে লেনদেন করেন। বিও হিসাব ছাড়া শেয়ারবাজারে লেনদেন করা সম্ভব না। বিও হিসাবের তথ্য রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)।

এই সিডিবিএল’র তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে (৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ২১১টি। যা গত ৩১ জুলাই ছিল ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ২৪৮টি। এ হিসাবে গত এক মাসে শেয়ারবাজারে বিও হিসাব কমেছে ৩৭টি। এই বিও হিসাব কমার মূল কারণ বিদেশি ও প্রবাসীদের শেয়ারবাজার ছেড়ে চলে যাওয়া।

বর্তমানে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ৪৩ হাজার ৭৭২টি। গত ৩১ জুলাই বিদেশি ও প্রবাসীদের নামে বিও হিসাব ছিল ৪৪ হাজার ৫৫৩টি। অর্থাৎ গত এক মাসে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ৭৮১টি।

বিদেশিদের বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ছাড়ার প্রবণতা শুরু হয় ২০২৩ নভেম্বর থেকে। ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব ছিল ৫৫ হাজার ৫১২টি। এ হিসাবে ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবরের পর দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি ও প্রবাসীদের নামে বিও হিসাব কমেছে ১১ হাজার ৭৪০টি।

বাড়ছে স্থানীয় বিনিয়োগকারী
বিদেশি ও প্রবাসীরা দেশের শেয়ারবাজার ছাড়লেও স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। সিডিবিএল’র তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশি বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮৭টি, যা গত ৩১ জুলাই ছিল ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ২০০টি। অর্থাৎ গত এক মাসে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ৬৮৭টি।

এখন শেয়ারবাজারে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও এর আগে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছেড়েছেন। ২০২৪ সালের শুরুতে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫১টি। আর বর্তমানে বিও হিসাব আছে ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ২১১টি। অর্থাৎ ২০২৪ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিও হিসাব কমেছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৪০টি।

বাড়ছে পুরুষ, কমছে নারী বিনিয়োগকারী
এদিকে বর্তমানে শেয়ারবাজারে যে বিনিয়োগকারীরা আছেন, তার মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১২ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬৫টি। গত ৩১ জুলাই এই সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৩৭ হাজার ১৫টি। অর্থাৎ গত এক মাসে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের হিসাব বেড়েছে ৩৫০টি।

অন্যদিকে বর্তমানে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব দাঁড়িছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ২৯৪টি। গত ৩১ জুলাই এই সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৯২ হাজার ৭৩৮টি। এ হিসাবে গত এক মাসে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ৪৪৪টি।

পুরুষ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি গত এক মাসে কোম্পানির বিও হিসাবও বেড়েছে। বর্তমানে কোম্পানি বিও হিসাব রয়েছে ১৭ হাজার ৫৫২টি। গত ৩১ জুলাই এই সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৪৯৫টি। এ হিসাবে এক মাসে কোম্পানি বিও হিসাব বেড়েছে ৫৭টি।

বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের যে বিও হিসাব আছে তার মধ্যে একক নামে আছে ১১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৮৩টি, যা গত ৩১ জুলাই ছিল ১১ লাখ ৮১ হাজার ৬৬৭টি। অর্থাৎ গত এক মাসে একক নামে বিও হিসাবে বেড়েছে ১ হাজার ৭১৬টি।

অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের যৌথ নামে বিও হিসাব আছে ৪ লাখ ৪৬ হাজার ২৭৬টি। গত ৩১ জুলাই যৌথ বিও হিসাব ছিল ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৮৬টি। অর্থাৎ গত এক মাসে যৌথ বিও হিসাব কমেছে ১ হাজার ৮১০টি।

বাজারের চিত্র
বাজারের চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ৩১ জুলাই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৪৪৩ পয়েন্ট। সেখান থেকে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে এখন ডিএসইএক্স ৫ হাজার ৬১৪ পয়েন্ট উঠে এসেছে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে ১৭১ পয়েন্ট।

অন্যদিকে ৩১ জুলাই ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ১২ হাজার ২২৩ কোটি টাকা। এখন ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২৭ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাজার মূলধন বেড়েছে ১৫ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। এদিকে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে যাওয়া লেনদেন এখন হাজার কোটি টাকার ওপরে উঠে এসেছে। শেষ ছয় কার্যদিবসের প্রতি কার্যদিবসেই ডিএসইতে হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেষ দুই কার্যদিবসে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে।

এমএএস/এমআইএইচএস/এএসএম

Read Entire Article