অভিবাসন নীতিতে আবারও পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে নিউজিল্যান্ড, যার ফলে দক্ষ কর্মীদের জন্য দেশটিতে প্রবেশ করা আরও সহজ হবে। ২০২৬ সালের মাঝামাঝি থেকে দেশটিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বসবাসের সুযোগ পেতে দুটি নিয়ম চালু হবে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।
প্রথম নিয়মটি দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মীদের জন্য, যারা বেতন ও অভিজ্ঞতার নির্দিষ্ট মান পূরণ করবেন। আর দ্বিতীয়টি বাণিজ্য ও কারিগরি খাতের (টেকনিশিয়ান, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বারসহ অন্যান্য) কর্মীদের জন্য, যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে অর্জিত বাস্তব অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
দক্ষ কর্মীদের যে নিয়ম ও শর্ত পূরণ করতে হবে:
কাজের অভিজ্ঞতা: কমপক্ষে পাঁচ বছরের প্রাসঙ্গিক কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এর মধ্যে অন্তত দুই বছর নিউজিল্যান্ডে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। নিউজিল্যান্ডে কাজ করার সময় প্রতি ঘণ্টায় দেশটির গড় বেতনের চেয়ে ১ দশমিক ১ গুণ বেশি বেতন পেতে হবে।
কারিগরি খাতের কর্মীদের জন্য যে নিয়ম ও শর্ত পূরণ করতে হবে:
একটি লেভেল ৪ বা তার বেশি যোগ্যতার সার্টিফিকেট এবং কমপক্ষে চার বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এর মধ্যে অন্তত ১৮ মাস নিউজিল্যান্ডে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। নিউজিল্যান্ডে কাজ করার সময় প্রতি ঘণ্টায় দেশের গড় বেতনের সমান বা তার বেশি বেতন পেতে হবে।
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের নাগরিকরা ব্যাপকহারে নিজ দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। এতে দেশটির অর্থনীতি ও কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক সংকট তৈরি হয়েছে, আর সেটি দূর করতেই নতুন এই পদক্ষেপ নিয়েছে নিউজিল্যান্ড সরকার।
২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ৭৩ হাজার ৪০০ জন নিজ দেশ ছেড়েছেন, আর ফিরে এসেছেন মাত্র ২৫ হাজার ৮০০ জন।
নিউজিল্যান্ডের অর্থনৈতিক উন্নয়নমন্ত্রী নিকোলা উইলিস মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের বারবার বলছে যে, যোগ্য ও দক্ষ বিদেশি কর্মীদের নিউজিল্যান্ডে বসবাসের সুযোগ পাচ্ছেন না। তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে বসবাসের অনুমোদন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অথচ দক্ষ কর্মী আমাদের অনেক বেশি প্রয়োজন।
নিউজিল্যান্ডের অভিবাসনমন্ত্রী এরিকা স্ট্যানফোর্ড বলেন, এই নতুন নিয়মগুলো এমন অভিজ্ঞ কর্মীদের ধরে রাখতে সাহায্য করবে, যারা এরই মধ্যে নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।
তিনি আরও বলেন, কারিগরি পেশার কর্মীদের জন্য নতুন নিয়মটি এমন সব ব্যবহারিক দক্ষতার স্বীকৃতি দেবে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির মতো গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এই নিয়মগুলোর বিরোধিতা করেছে দেশটির অন্যতম বিরোধী দল ‘নিউজিল্যান্ড ফার্স্ট’। দলের নেতা উইনস্টন পিটার্স বলেন, নিউজিল্যান্ডকে এখন অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার পথ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা বিদেশি অভিবাসীদের প্রশিক্ষণ দিই, দক্ষ করে তুলি, তাদের পরিবারের যত্ন নিই, আর তারপর তারা অস্ট্রেলিয়ায় চলে যায়।
তিনি আরও জানান, ২০২৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাওয়া নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের মধ্যে ৩৫ শতাংশেরই জন্ম নিউজিল্যান্ডের বাইরে। পিটার্স বলেন, আমাদের এমন অভিবাসন নীতি দরকার যা দেশের ব্যবসা ও কর্মীদের জন্য উপকারী হবে, এমন নয় যা শুধু অভিবাসীর সংখ্যা বাড়াবে।
এর আগেও দেশটি অভিবাসীদের জন্য কিছু নিয়ম শিথিল করেছে। জানুয়ারিতে ভিসা সহজ করে আনা হয় ডিজিটাল নোম্যাডদের জন্য, যারা ভ্রমণের পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করেন। ফেব্রুয়ারিতে ধনাঢ্য বিদেশিদের জন্য চালু হওয়া ‘গোল্ডেন ভিসা’ আরও সহজ করা হয়।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
এসএএইচ