রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে নতুন কিছু শর্ত সামনে এনেছেন। রয়টার্সকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি চান ইউক্রেন পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চল সম্পূর্ণ ছেড়ে দিক, ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করুক ও দেশটিতে কোনো পশ্চিমা সেনা মোতায়েন না হোক।
গত শুক্রবার (১৫ আগস্ট) আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে চার বছরের মধ্যে প্রথম শীর্ষ বৈঠকে বসেন পুতিন। প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধান কেমন হতে পারে। বৈঠকের পর ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে পুতিন বলেন, এটি শান্তির পথ খুলে দিতে পারে- যদিও নির্দিষ্ট কোনো সমঝোতার কথা দুই নেতা প্রকাশ্যে জানাননি।
২০২৪ সালের জুনে দেওয়া প্রস্তাবে রাশিয়া দাবি করেছিল, ইউক্রেনকে চারটি প্রদেশ পুরোপুরি ছাড়তে হবে- দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক (দনবাস), এছাড়া দক্ষিণের খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া। কিয়েভ তখন তা একপ্রকার আত্মসমর্পণ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে।
কিন্তু এবার পুতিন দনবাস নিয়ে কঠোর অবস্থান ধরে রাখলেও খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ায় সামনের লাইনেই যুদ্ধ থামাতে রাজি হয়েছেন বলে জানিয়েছে তিনটি রুশ সূত্র।
মার্কিন ও উন্মুক্ত তথ্যসূত্র অনুযায়ী, রাশিয়া বর্তমানে দনবাসের প্রায় ৮৮ শতাংশ, আর খেরসন-জাপোরিঝঝিয়ার ৭৩ শতাংশ এলাকা দখলে রেখেছে। তবে খারকিভ, সুমি ও দ্নিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের দখলকৃত ছোট অংশ ছেড়ে দিতে রাজি পুতিন।
তবে ন্যাটো নিয়ে অবস্থান বদলাননি রুশ প্রেসিডেন্ট। তিনি চান, ইউক্রেন যেন সংবিধান থেকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার লক্ষ্য বাদ দেয় ও জোটটি যাতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিশ্রুতি দেয় যে, তাদের বিস্তৃতি পূর্বদিকে আর সম্প্রসারিত হবে না। এছাড়া, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর সীমাবদ্ধতা ও শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে কোনো পশ্চিমা সেনা মোতায়েন না করার নিশ্চয়তা চান তিনি।
কিয়েভ বারবার স্পষ্ট করেছে, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভূখণ্ড ছাড়ার প্রশ্নই আসে না। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, দনবাসই ইউক্রেনের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষার অংশ, এটি ছেড়ে দিলে দেশ টিকে থাকা কঠিন হবে। ন্যাটোতে যোগ দেওয়াও তাদের সাংবিধানিক কৌশলগত লক্ষ্য, যা রাশিয়ার সিদ্ধান্তে পরিবর্তন হবে না।
এদিকে, ট্রাম্প নিজেকে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে তুলে ধরছেন। তিনি বলেছেন যুদ্ধের ‘রক্তক্ষয়ী হত্যাযজ্ঞ’ বন্ধ করতে চান এবং পুতিন-জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠক আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এরপর সম্ভাব্য তিনপক্ষীয় (যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া-ইউক্রেন) শীর্ষ বৈঠকের কথাও বলছেন তিনি।
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির নেতারা সন্দেহ প্রকাশ করেছে যে পুতিন আদৌ যুদ্ধ শেষ করতে চান কি না। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, পুতিন জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করতে রাজি, তবে আগে সব শর্ত নিয়ে কাজ করতে হবে।
রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, আলাস্কার বৈঠক যুদ্ধ শুরুর পর থেকে শান্তির সবচেয়ে বড় সুযোগ এনে দিয়েছে। তবে যদি কিয়েভ দনবাস ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে যুদ্ধ চলতেই থাকবে। আর যুক্তরাষ্ট্র রুশ দখলকৃত অঞ্চলকে বৈধতা দেবে কি না, সেটিও এখনো অজানা।
একজন সূত্রের ভাষায়, শান্তি বা যুদ্ধ- এই দুই পথ ছাড়া আর কিছু নেই। যদি শান্তি না হয়, তবে যুদ্ধ আরও গভীর হবে।
সূত্র: রয়টার্স
এসএএইচ