একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে কাজের সময়সীমা। এরসঙ্গে বেড়েছে বাজেট। এভাবেই কেটে গেছে এক যুগ। অথচ আজও চালু হয়নি পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এতে সরকারের ব্যয় যেমন বাড়ছে, তেমনি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলাবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে একনেক সভায় ৫৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন পায়। ওই বছরই পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সিসিইউ ভবনে সীমিত পরিসরে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্পের মূল নির্মাণ কাজ শুরু হয় জমি অধিগ্রহণ জটিলতা কাটিয়ে ২০১৬ সালে। নির্ধারিত ছিল ২০২০ সালের মধ্যে কাজ শেষ করে চালু হবে হাসপাতালটি। কিন্তু করোনা মহামারি, নির্মাণ ত্রুটি, উপকেন্দ্র সংকটসহ একের পর এক কারণে পিছিয়ে যায় কাজের গতি। পরবর্তী সময়ে ২০২৩ এবং পরে আরও এক দফা বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত কাজের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়। বাজেটও বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫১ কোটি টাকা।
‘একটা বেডে একাধিক বাচ্চা ভর্তি থাকে। মেয়েকে নিয়ে এসেছি। সঙ্গে আছে আরও দুজন মা ও তাদের সন্তান। তিনটা বাচ্চা আর তিনটা মা একটা বেডে কি থাকা সম্ভব? জায়গা হয় না, বাচ্চারা কষ্ট পায়। আমরাও বসার বা ঘুমানোর সুযোগ পাই না।’
বর্তমানে হাসপাতাল ভবনের প্রায় ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হলেও এখনো স্থাপন হয়নি বিদ্যুৎ সংযোগ এবং অক্সিজেন পাইপলাইন বসানোর কাজ। তাই জুলাই মাস পেরিয়ে গেলেও ভবনটি স্বাস্থ্য বিভাগে হস্তান্তর হয়নি।
এদিকে পুরাতন ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন ধারণক্ষমতার প্রায় তিনগুণ রোগী ভর্তি থাকছে হাসপাতালে। শয্যা সংকটের কারণে অনেক রোগীকেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে হাসপাতালের মেঝেতে।
- আরও পড়ুন
- ‘রোগী দেখি, ওষুধ দেই, হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নও করি’-
- পল্লিচিকিৎসকের ‘জ্বরের ওষুধ’ খেয়ে উঠে যাচ্ছে শিশুর চামড়া-
- নির্দলীয়, সৎ ও দক্ষ লোক পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে-
- হাসপাতালের মালিকদের জন্য ডাক্তাররা ব্যবসায়ী হয়ে যান : সোহেল রানা-
শিশু ওয়ার্ডে কথা হয় রোগীর স্বজন নিলুফা বেগমের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটা বেডে একাধিক বাচ্চা ভর্তি থাকে। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে এসেছি। সঙ্গে আছে আরও দুজন মা ও তাদের সন্তান। তিনটা বাচ্চা আর তিনটা মা একটা বেডে কি থাকা সম্ভব? জায়গা হয় না, বাচ্চারা কষ্ট পায়। আমরাও বসার বা ঘুমানোর সুযোগ পাই না।’
‘আমরা আগেও শুনেছিলাম, জুন মাসে ভবনটি হস্তান্তর হবে। কিন্তু জুলাইয়েও হয়নি। প্রতি মাসেই শুনছি দুই সপ্তাহ বা একমাসের মধ্যে হস্তান্তর হবে। বাস্তবে ভেতরের অবকাঠামো ৯৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সাবস্টেশন ও অক্সিজেনের লাইন স্থাপনের কাজ এখনো চলছে। আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভবনটি বুঝে পাবো।’
মাদারবুনিয়া ইউনিয়ন থেকে আসা রোগীর স্বজন শেফালী বেগম বলেন, ‘ছোট্ট শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। একটা বেডে তিন-চারজন মানুষ থাকে। ঘুমানোর তো প্রশ্নই উঠে না। নতুন ভবনটা চালু হলে এত দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।’
অসুস্থ ভাইকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন সিরাজ মিয়া। তবে বেডে জায়গা পাননি। মেঝেতে চিকিৎসা চলছে। সিরাজ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘জায়গা নেই, তাই ফ্লোরে বিছানা করে থাকতে হচ্ছে। অথচ পাশেই দৃষ্টিনন্দন একটা নতুন বিল্ডিং দাঁড়িয়ে আছে। সেটা এখনো চালু হলো না। ভবনটি চালু হলে আমাদের অনেক উপকার হতো।’
পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা বলেন, ‘নতুন ভবনটি চালু হলে আমরা ৫০০ শয্যার সুবিধা দিতে পারবো। এতে রোগীদের চাপ অনেকটাই কমে আসবে।’
- আরও পড়ুন
- পরিবারের সদস্যদের মতো আহতদের পাশে ছিলেন চিকিৎসকরা
- পাঁচ বছরেই মুমূর্ষু হাসপাতাল, ‘কিছুই জানেন না’ পরিচালক
- বন্ধের একদিন পর সচল সদর হাসপাতালের আইসিইউ
- তিন চিকিৎসকে চলছে লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা
তিনি বলেন, ‘আমরা আগেও শুনেছিলাম, জুন মাসে ভবনটি হস্তান্তর হবে। কিন্তু জুলাইয়েও হয়নি। প্রতি মাসেই শুনছি দুই সপ্তাহ বা একমাসের মধ্যে হস্তান্তর হবে। বাস্তবে ভেতরের অবকাঠামো ৯৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সাবস্টেশন ও অক্সিজেনের লাইন স্থাপনের কাজ এখনো চলছে। আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভবনটি বুঝে পাবো।’
এ বিষয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক ডা. এসএম কবির হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঠিকাদারি জটিলতা, করোনা ও বিভিন্ন কারিগরি সমস্যার কারণে আমরা ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় নিয়েছি। তবে আগামী দু-এক মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পেলে হাসপাতালের কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হবে। আশা করছি ২০২৬ সালের মধ্যে পুরোপুরি কাজ শেষ হয়ে যাবে।’
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘হাসপাতালের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছি। বড় বাধা হচ্ছে বিদ্যুৎ সংযোগ। এজন্য আমাদের সাবস্টেশন দরকার ছিল, সেটিও এনে ফেলেছি। বিদ্যুৎ অফিস বিষয়টি তাদের খুলনার প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছে। অনুমোদন পেলেই ১৫-২০ দিনের মধ্যে চালু করা সম্ভব হবে। আমরা প্রস্তুত আছি।’
এসআর/জিকেএস