দাখিল করা আবেদন-অভিযোগের বিষয়ে অবস্থান জানালো ঢাবি কর্তৃপক্ষ

2 hours ago 4

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন পরবর্তী বিভিন্ন আবেদনপত্র ও অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত অবস্থান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানানো হয়।

এতে বলা হয়, প্রাপ্ত সব আবেদনপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে আইনগত মতামতও নেওয়া হয়েছে। যথাসময়ে প্রতিটি আবেদনকারীকেই আলাদাভাবে জবাব দেওয়া হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে মোট চারটি বিষয় উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়েছে-

১. ডাকসু ও হল সংসদ সমূহের নির্বাচন পরবর্তীতে আমাদের কাছে দাখিল করা আবেদনপত্র বা দরখাস্তগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করছি। বিশুদ্ধতার জন্য যে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সে ক্ষেত্রে আইনগত মতামতও নেওয়া হয়েছে। আমাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রত্যেক দরখাস্ত/আবেদনপত্র বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রত্যেককে আলাদা আলাদাভাবে জবাব দেবো।

কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো ২২ সেপ্টেম্বর একটি ছাত্রসংগঠন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে (মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি) উচ্চারিত কিছু অভিযোগের জবাব এই মুহূর্তে দেওয়া সমীচীন বলে মনে কছে কর্তৃপক্ষ। সে ক্ষেত্রে দুটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য। একটি হলো কয়েকজন দরখাস্তকারী/আবেদনকারী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নির্বাচনের দিন ধারণকৃত ও পরবর্তীতে সংরক্ষণকৃত সিসিটিভি ফুটেজের পুরোটাই চেয়েছেন। বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করেছি এবং আইনজীবীদের মতামতও নেওয়া হয়েছে।

সিসিটিভি ফুটেজ কোনো পাবলিক ডকুমেন্ট নয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ধারণকৃত এবং সংরক্ষণকৃত সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সংরক্ষিত আমানত যা নির্বাচন সংক্রান্ত যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাহায্যকারী সাক্ষ্য হিসেবে বা ডকুমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। আবেদনপত্রগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেছি। আবেদনপত্রগুলো অনেকটাই অস্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট কি কারণে, কোন সময়ের, কোন বিষয়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে হবে তা দরখাস্তে উল্লেখ করা হয়নি।

এমতাবস্থায় কতিপয় দরখাস্তে কতগুলো সাধারণ প্রশ্নমালা কিংবা কতগুলো অত্যন্ত ব্যাপকতর বিষয়ে প্রশ্নের অবতারণা করা হয়েছে যেগুলোতে তেমন কোনো সারবত্তা নেই এবং আবেদনকারীদের সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগও নেই।

তথাপি কোনো প্রার্থী যদি সুনির্দিষ্ট কোনো সময়ের/কোনো একটি প্রাসঙ্গিক ঘটনা পর্যালোচনা করার জন্য সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চান তারা যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনীত বিশেষজ্ঞ বা মনোনীত ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত কোনো স্থানে তা দেখতে বা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।

২. দ্বিতীয়ত যে বিষয়টি বলা হয়েছে সেটি হলো ভোট প্রদানকারী ভোটারদের স্বাক্ষরিত তালিকা দেওয়ার অনুরোধ। এই ক্ষেত্রেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ/নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ মনে করে এটি একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও গোপনীয় তালিকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর নির্বাচন সংক্রান্ত বিধিতে এটির কপি দেওয়ার কোনো বিধান নেই। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভোটকেন্দ্রে এসে, প্রাথমিক তথ্যাদি দিয়ে, ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে যে তালিকায় সই করেছেন সে তালিকা একটি গোপনীয় তালিকা। এটিও কোনো পাবলিক ডকুমেন্ট না।

সুতরাং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা সংরক্ষণের স্বার্থে এটি দেওয়া কর্তৃপক্ষ যথাযথ মনে করে না। অধিকন্তু দরখাস্ত/আবেদনপত্রে উক্ত স্বাক্ষরিত তালিকা কেন দরকার, কি কারণে প্রয়োজন, কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সে তালিকার দরকার হয়েছে সেটিও সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। অতএব কতগুলো অস্পষ্ট আবেদনের প্রেক্ষিতে এ গুরুত্বপূর্ণ তালিকার কপি দেওয়া কর্তৃপক্ষ সবিনয়ে অপারগতা প্রকাশ করছে।

৩. ব্যালট পেপার ছাপানোর প্রতিষ্ঠান/ভেন্ডরদের পরিচয় সচেতনভাবে গোপন রাখা হয়েছে। এই গোপনীয়তা রক্ষা একটি স্বীকৃত পদ্ধতি। এখানে নিশ্চিত করা যাচ্ছে যে, সমস্ত নিয়ম মেনে একটি প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া/দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে একটি পরীক্ষিত ও দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যালট পেপার ছাপানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ব্যালট পেপার ছাপানোর পর নির্দিষ্ট পরিমাপে কার্টিং করে তা ওএমআর মেশিনে প্রি-স্ক্যানিংপূর্বক মেশিনের পাঠযোগ্যতা নিশ্চিত করে সিলগালাকৃত প্যাকেটে সরবরাহ করে। যে ওএমআর মেশিনে স্ক্যানিং করে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ সম্পন্ন করা হয় তা নীলক্ষেতের কোনো দোকানে সম্ভব নয়।

সুতরাং যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা করে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ করা হয়েছে তাতে এটি অরক্ষিত থাকার সুযোগ নেই।

এখানে উল্লেখ্য যে, ব্যালট পেপার মুদ্রণ একটি বিশেষায়িত প্রক্রিয়া। এর প্রতিটি পর্যায়ে নিবিড় তত্ত্বাবধান ও নির্বাচন কমিশনে কঠোর তদারকি ছিল। মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যালট পেপার পাওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা/কেন্দ্র প্রধান সিগনেচার করেন। পরে ভোটারদের তা সরবরাহ করা হয়।

এছাড়া নির্বাচনের আগে-পরে বা গণনার সময়ও সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট, পর্যবেক্ষক, সাংবাদিকসহ কেউই এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ উত্থাপন করেননি।

ভোট গ্রহণ শুরুর আগেই ব্যালট বাক্স পরীক্ষা করা হয়েছে, খালি বাক্স নিশ্চিত করার পর তা সিলগালা করা হয়। তাছাড়া বণ্টিত ব্যালট পেপার ও প্রদত্ত ভোটের সংখ্যার কোনো গরমিল পরিলক্ষিত হয়নি। ভোটার কর্তৃক গৃহীত ব্যালট পেপার ও প্রদত্ত ভোটের মধ্যে অসামঞ্জস্য থাকলে বা কোনরকম অভিযোগ থাকলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতাম। এ রকম কিছুই ঘটেনি।

অতএব নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর ব্যালট পেপারের মুদ্রণ নিয়ে এহেন অভিযোগের কোনো ভিত্তি আছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে না।

৪. বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে সব আবেদন/দরখাস্ত/অভিযোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। যথাসময়ে প্রত্যেককে জবাব/সিদ্ধান্ত প্রেরণ করা হবে।

এফএআর/এমআইএইচএস/জিকেএস

Read Entire Article