বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের সাবরুল বড় হিন্দুপাড়া গ্রামের মাদক বিক্রেতা হরিদাস চন্দ্র দেবনাথ (৪২)। তার অত্যাচারে পুরো হিন্দুপাড়া গ্রাম অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এমনকি তার বাবা ও ছেলের বিরুদ্ধেও এলাকার নারী ও মেয়েদের যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে।
আসছে দুর্গা পূজায় মণ্ডপে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে মাদক সেবনে নিষেধ করায় শনিবার (২৩ আগস্ট) দিবাগত রাত ৯টার দিকে হিন্দু পাড়ার অরবিন্দু সহা এবং তার পরিবারের নারী-পুরুষসহ অন্তত ৪ জনকে মেরে আহত করেছেন হরিদাস এবং তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা।
এই ঘটনায় ওই রাত ১১টার দিকে থানায় এসে হারিদাস চন্দ্র দেবনাথ, তার ছেলে হীরা চন্দ্র দেবনাথসহ মোট ৩ জনের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়রি করেছেন অরবিন্দু সাহা। রোববার (২৪ আগস্ট) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন শাজাহানপুর থানা পুলিশ।
হরিদাস চন্দ্রের ছেলে হীরা চন্দ্র দেবনাথের অত্যাচারে মেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন অনেক অভিভাবক। এমনকি হরিদাস চন্দ্রের বাবা সুরেশ চন্দ্র দেবনাথের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ হিন্দু পাড়ার অনেক নারীর।
সরেজমিনে বড় হিন্দুপাড়া গ্রামে গিয়ে বেশ কয়েকটি হিন্দু পরিবারের সঙ্গে কথা হয়। ভুক্তভোগী অরবিন্দু সাহা বলেন, পূজা মণ্ডপে আমাদের পাড়ার বৌ, মেয়ে, বোনেরাই থাকে। তাই আমি গ্রামের ছেলেদের বলেছি পূজা মণ্ডপ এবার মাদকমুক্ত রাখতে। এই কথা কোনোভাবে হরিদাস জানতে পেরে বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে এসে আমার এবং আমার পরিবারের ওপর হামলা করে। এতে আমি, আমার ভাই, আমার স্ত্রী এবং আমার ভাইয়ের স্ত্রী আহত হয়।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় রাতেই গ্রামের বেশকিছু লোকজন নিয়ে থানায় মামলা করতে যাই। কিন্তু থানায় মামলা না নিয়ে সাধারণ ডায়রি নেয়।
গ্রামের অষ্ট চন্দ্র সাহা বলেন, হরিদাস চন্দ্র দেবনাথ পাড়ার মাথায় মুদি দোকান দিয়ে ব্যবসা করেন। নামমাত্র ওই মুদি দোকান মূলত মাদক বিক্রয় কেন্দ্র। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি সেখানে মাদকসেবীরা আড্ডা দেয়। বড় হিন্দুপাড়া গ্রামকে মাদক মুক্ত করা জরুরি।
ওই গ্রামের রমেন্দ্র চন্দ্র সাহা বলেন, হরিদাস চন্দ্র বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে বড় হিন্দুপাড়া গ্রাম জিম্মি করার চেষ্টা করছে। হরিদাস চন্দ্রের ছেলে হীরা চন্দ্র আমার মেয়েকে প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানি করে আসছে। আমার মেয়ে সাবরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। হীরার ভয়ে আমার মেয়ে এখন আর স্কুলে যেতে পারে না। এই গ্রামের বৌ এবং মেয়েরা হরিদাস এবং হীরাদের যৌন হয়রানির ভয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না।
আরও পড়ুন-
- সাতক্ষীরায় নদীর চর দখল করে গড়া রিসোর্ট উচ্ছেদ
- জাতীয় কাবাডির ফাইনালে হামলার অভিযোগ, খেলোয়াড়-কোচসহ আহত ৫
- গোয়াল ঘরে মিললো ৭ কেজি গান পাউডার
ওই গ্রামের এক নারী (৭০) বলেন, আমার ছেলের স্ত্রী মণ্ডপে আরতি করছিল। এসময় হরিদাসের বাবা সুরেশ চন্দ্র দেবনাথ এসে আমার ছেলের স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব দেন। আমার ছেলে শোনার পর প্রতিবাদ করলে তাকে ধরে আটকে রাখেন সুরেশ এবং তার লোকজন।
বেশ কয়েকজন নারী বলেন, হরিদাসের ছেলে গ্রামের অনেক মেয়েকেই তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এতে পুরো গ্রাম আতঙ্কিত হয়ে আছে। হরিদাসের লোকজন বহিরাগতদের নিয়ে বড় হিন্দুপাড়ায় প্রতি রাতে জুয়ার আসর বসায়। এতে মানসম্মান নিয়ে গ্রামে বসবাসের উপযোগী থাকছে না।
জানতে চাইলে আশেকপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য এবং বড় হিন্দুপাড়ার পাশের গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হালিম বলেন, হরিদাস, তার ছেলে হীরা এবং তাদের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা বড় হিন্দুপাড়া গ্রামে মাদক-জুয়াসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে আসছে। যৌন হয়রানির কারণে মেয়েরা ঠিকমতো চলাচল করতে পারছে না। অনেকে বিদ্যালয়ে যেতেও পারছে না। এ ঘটনায় হরিদাসের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রশাসন চাইলে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।
ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন হারিদাস চন্দ্র দেবনাথ ও তার ছেলে হীরা চন্দ্র দেবনাথ।
এ বিষয়ে হরিদাস চন্দ্র দেবনাথ মুঠোফোনে বলেন, ‘জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। আমি মাদক বিক্রি করি না। তবে মাদক (গাঁজা) সেবন করি। যখন যেখান থেকে পাই সেখান থেকেই কিনি। আমি কবিরাজি করি, তাই ওষুধ বানাতে গাঁজার দরকার হয়। আমার ছেলে কোন মেয়েকে যৌন হয়রানি করছে তা আমার জানা নাই। মারামারির পর থেকে বাহিরে আছি। আমার ছেলে হীরাও বাড়িতে নাই। কবে বাড়িতে ফিরবো তা বলতে পারছি না।’
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পূজা সংক্রান্ত বিষয়ে মাদক সেবন না করতে পারে এ বিষয়ে অরবিন্দু সাহা একজনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। সেখানে তিনি কারো নাম উল্লেখ করেননি। এই কথা হরিদাস চন্দ্র জানার পর লোকজন নিয়ে অরবিন্দুর ওপর হামলা করে। তাকে রক্ষা করতে এলে অরবিন্দুর স্ত্রী, ভাই এবং ভাইয়ের স্ত্রীও মারপিটের শিকার হন। তবে আঘাত গুরুতর নয়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
এফএ/এমএস