দাম বাড়ায় নানা পদক্ষেপে আখ উৎপাদন বৃদ্ধি
আখের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর জিল বাংলা সুগার মিলে আখের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর বিপুল পরিমাণ আখ মাড়াই করবে বলে মিল কর্তৃপক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে সারা দেশের ছয়টি সুগার মিল বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। বাকি ৯টি মিল চালু রাখলেও সার, বীজ, কীটনাশকসহ সব উপকরণ বন্ধ করে দেয় সরকার। এতে আখচাষিদের মনোবল ভেঙে যায়। সে সময় আখচাষিরা মিল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। ফলে পরবর্তী সময়ে কয়েক বছর আখের উৎপাদন হ্রাস পায়। মিল কর্তৃপক্ষের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং নানামুখী পদক্ষেপে আখের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর ৬০ হাজার টন আখ মাড়াই করে ৪ হাজার ২০০ টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
গত বছর ৪৫ হাজার টন আখ মাড়াই করে ২ হাজার ৭১৭ টন চিনি উৎপাদন করে। ২০২২- ২৩ অর্থবছরে ৩৫ হাজার টন আখ মাড়াই করে। গত দুই বছরে আখের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আখের মূল্য আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে বর্তমানে প্রতি মণ আখের মূল্য ২৪০ টাকা। গত বছর ছিল ২২০ টাকা। এ বছর মণপ্রতি ২০ টাকা আখের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে গত বছরের তুলনায় এই মাড়াই মৌসুমে ১৫ টন বেশি চিনি উৎপন্ন হবে। এবার ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার চিনি বিক্রি হবে বলে আশা ব্যক্ত করেছে মিল কর্তৃপক্ষ।
আখচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আখের মূল্যবৃদ্ধি সার, বীজ, কীটনাশকসহ অন্যান্য উপকরণসামগ্রী যথাসময়ে সরবরাহ করায় তারা আখের উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের আখচাষি আনারুল ইসলাম জানান, জীবনে কোনোদিন আখের চাষ করিনি। আখের মূল্যবৃদ্ধি করায় এবার আখ রোপণ করেছি। আশা করছি, ভালো টাকা হাতে পাব। তার দাবি, অন্যান্য ফসল বছরে দু-তিনটি করা সম্ভব। কিন্তু আখের চাষ একবার করা যায়। সে তুলনায় আখের মূল্য আরও বৃদ্ধি করা দরকার না হলে মানুষ অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকবে।
একই গ্রামের আখচাষি ওয়াজকুরুনী জানান, আখের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে শুনে এবার প্রথম আখের চাষ করেছি। আমার ৩ বিঘা আখ রয়েছে। আশা করি, ভালো দাম পাব।
কান্দীর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের স্ত্রী মুর্শেদা বেগম জানান, তিনি প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫ বিঘা মাটির আখ রোপণ করেন। অন্য ফসলের অনেক ঝামেলা। আখের চাষ করলে একসঙ্গে টাকা হাতে আসে। সেই মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে সংসারে অন্য কাজে লাগানো যায়। তিনি আরও জানান, ঐতিহ্যগতভাবেই আখ চাষকে ধরে রেখেছেন তিনি।
মিলগেট এলাকার কয়েকজন আখচাষি জানান, প্রতি বছর আখের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকরা এই ফসল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। তারা আবার মিলমুখী হচ্ছেন। আশা করা যায়, আগামী দিনে মিল ঘুরে দাঁড়াবে।
জিল বাংলা সুগার মিলের ডিজিএম সম্প্রসারণ মো. আলাউদ্দিন বলেন, আখ রোপণে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকদের বিভিন্ন উপকরণসামগ্রী এবং ভর্তুকি আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জিল বাংলা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মোশাররফ হোসেন জানান, আজ শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) মিল চালু হবে। প্রায় ৭০ দিন মিল চলবে। আগামী দিনে উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করেই মিলকে লাভজনক করা সম্ভব হবে। মিল যদি ১০০ থেকে ১২০ দিন চালানো যায়, তবে মিলকে লাভজনক করা সম্ভব হবে।