দিনভর বৃষ্টিতে দুর্ভোগ, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

3 months ago 24

মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে যশোর শহরের নিম্নাঞ্চল। শনিবার (৬ জুলাই) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এদিন যশোরে ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, মধ্য আষাঢ় পর্যন্ত যশোরে তেমন বৃষ্টিপাতের দেখা মেলেনি। এক সপ্তাহ ধরে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। কখনো হালকা, কখনো মাঝারি বৃষ্টিপাতের দেখা মিলছিল এ সময়ে। সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিন সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত জেলায় চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী কয়েকদিন ধরে এ বৃষ্টি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস রয়েছে।

শহর ঘুরে দেখা গেছে, শনিবারের এ ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে গোটা যশোর শহরের নিম্নাঞ্চল। বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ভারী বর্ষণে শহরের বেজপাড়া, টিবি ক্লিনিক পাড়া, স্টেডিয়ামপাড়া, শংকরপুর, মিশনপাড়া, উপশহর, চাঁচড়া, কারবালা, এমএম কলেজ এলাকা, নাজিরশংকরপুর, বকচর, আবরপুরসহ শহরের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। শংকরপুর, বেজপাড়া, খড়কি, কারবালা, স্টেডিয়ামপাড়ার অনেক বাড়ি পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার ড্রেন ছাপিয়ে উপচেপড়া পানি সড়ক পার হয়ে ঘরের মধ্যেও ঢুকে পড়েছে। ভেসে গেছে বিভিন্ন এলাকার পুকুর ও মাছের ঘের।

যশোর, দিনভর বৃষ্টিতে দুর্ভোগ, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

পাশাপাশি শহরের অন্তত ৩০টি সড়কে পানি জমে আছে। খড়কি এলাকার শাহ আবদুল করিম সড়ক, স্টেডিয়ামপাড়া, শহরের পিটিআই, নাজির শংকরপুর, খড়কি রূপকথা মোড় থেকে রেললাইন, ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে পাইপ পট্টি, বেজপাড়া চিরুনিকল, মিশনপাড়া, আবরপুর ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর, ষষ্ঠীতলা পাড়ার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও শহরের ছোট ছোট সড়কেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব সড়কের দুই পাশের ড্রেনের ময়লা-আবর্জনার নোংরা পানি উপচে পড়ে সড়কে। সড়ক ছাপিয়ে সেই পানির ঢুকে পড়ে বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও। দুপুরের এ বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়ে স্কুল ফেরত শিক্ষার্থীরা। পৌরসভার ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে অনেক মানুষের বসতঘরে পানি ঢুকেছে। জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েন ওই ওয়ার্ডের মানুষ।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান বলেন, কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে সড়কে হাঁটু পানি জমেছে। সড়কের পাশে ড্রেন থাকলেও আবর্জনায় পূর্ণ হওয়ায় পানি উপচে সড়কে প্রবেশ করেছে। সড়কের সেই পানি আবার দোকানে প্রবেশ করেছে।

যশোর, দিনভর বৃষ্টিতে দুর্ভোগ, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

৭ নম্বর ওয়ার্ডের শংকরপুর এলাকার বাসিন্দা গোলাম মাজেদ বলেন, ‘বাড়িঘরে পানি উঠেছে। ঘরের ভিতরে হাঁটু পানি। পরিবার নিয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছি। পয়ঃনিষ্কাশন নালার মাধ্যমে আগে শহরের পানি হরিণার বিল দিয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে যেত। কিন্তু ২০১০ সালে হরিণার বিলে মেডিকেল কলেজ হওয়ার পর আশপাশ আরও স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এতে বিল দিয়ে পানি আগের মতো নিষ্কাশিত হতে পারছে না। ফলে জলাবদ্ধতা হচ্ছে।

শহরের খড়কির শাহ আবদুল করিম সড়কের সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের দক্ষিণ গেট থেকে খড়কি মোড় হয়ে পীরবাড়ি, কবরস্থান পর্যন্ত হাঁটু সমান পানি জমেছে। খড়কি দক্ষিণপাড়া-পশ্চিমপাড়া হাজামপাড়া, খড়কি রেললাইন পাড়ার বাসিন্দাদের বাড়ির উঠানে হাঁটু পানি। এ সড়কে চলাচলকারী রিকশা, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসের যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। আবার এ পানির মধ্যে দিয়ে রিকসা, ইজিবাইক যেতে রাজী না হওয়ায় অনেককে পায়ের জুতা হাতে নিয়ে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যায়।

যশোর, দিনভর বৃষ্টিতে দুর্ভোগ, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

শহরের টিবি ক্লিনিক এলাকা তন্ময় দাস জানান, ড্রেন উপচে নোংরা পানিতে রাস্তায় থৈ থৈ করছে। অনেকের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ড্রেনগুলো পরিষ্কার না করায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এজন্য পানি নামতে না পারায় গোটা বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

শহরের খড়কি এলাকার বাসিন্দা প্রকৌশলী কাজী আবু সাঈদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যশোর পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ড্রেনগুলো অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। আর ড্রেনগুলোও নাগরিকরা ডাস্টবিনে পরিণত করেছে। এগুলো নিয়মিত পরিষ্কারও করা হয়নি। ফলে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শরীফ হাসান বলেন, ‘শহরবাসীর অসচেতনতার কারণেও নালার পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তা, নালা সংস্কার ও নির্মাণের জন্য এমজিএসপি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তেশ্বরীর সঙ্গে সংযোগ খাল স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছি।’

মিলন রহমান/আরএইচ/জেআইএম

Read Entire Article