দিনে শতাধিক লিটার দুধ পান ২২ গরুর মালিক

10 hours ago 4

ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান বাজারের মো. রেজাউল করীম। ছোটবেলা থেকেই কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। এ পর্যন্ত লোকসান বা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়নি। এ উদ্যোক্তা প্রথমে দুধের চাহিদা মেটাতে দুটি গাভি পালন শুরু করেন। সেই থেকে আগ্রহ বাড়ে। বর্তমানে তার খামারে ২২টি গরু। এর মধ্যে ১৮টি গাভি ও ৪টি এঁড়ে বাছুর। যার ১৫টি গাভি থেকে প্রতিদিন শতাধিক লিটার দুধ পান। প্রতি লিটার বিক্রি হয় ৭০ টাকা দরে। পরিচর্যার জন্য আছেন ৩ জন শ্রমিক।

মো. রেজাউল করীমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই উদ্যোক্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। উচ্চশিক্ষাও অর্জন করেন। তবে অবসরপ্রাপ্ত বাবার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ইটভাটার অংশীদার হন। ইটভাটায় সাতক্ষীরার শ্রমিকেরা কাজ করতেন। পারিবারিক দুধের চাহিদা মেটাতে শ্রমিকদের সাহায্যে সাতক্ষীরা থেকে দুটি গাভি আনেন। এরপর আগ্রহ বাড়ে গাভি পালনের।

ইটভাটার অংশ ছেড়ে আরও চারটি গাভি কিনে শুরু করেন খামার। স্থান সংকুলান না হওয়ায় নতুন শেড নির্মাণ করেন। সেখানে ছোট-বড় মিলিয়ে ২২টি গরু আছে। সবগুলোই ফ্রিজিয়ান ও জার্সি জাতের। খামারে উৎপাদিত দুধ দিয়ে মিষ্টিজাত পণ্য তৈরি করতে ডাক্তারপট্টিতে দোকান দেন। বাইরের দোকানেও দুধ বিক্রি করেন।

দিনে শতাধিক লিটার দুধ পান ২২ গরুর মালিক

গোখাদ্য জোগানোর জন্য সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করেন। আমন ধান ঘরে উঠলে পর্যাপ্ত খড়-কুটো কিনে রাখেন। খামারের পরিচর্যার জন্য তিনজন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। যাদের প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন দিতে হয়। গত কোরবানিসহ বিভিন্ন সময়ে ১৪ লাখ টাকারও বেশি দামে ১০টি গরু বিক্রি করেন।

রেজাউল জানান, গরুর মল-মূত্র মটারের পানি দ্বারা পরিষ্কার করে একটি ট্যাঙ্কিতে রাখেন। সেটার মাধ্যমে বায়োগ্যাস প্লান্ট করে পাইপের মাধ্যমে গ্যাস নিয়ে পারিবারিক কাজে ব্যবহার করেন। প্রতিদিনের জ্বালানিতে সেই গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে।

চিকিৎসার বিষয়ে তিনি জানান, ১৯৯৮ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে গবাদিপশু পালনের ওপর প্রশিক্ষণ নেওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা নিজেই করেন। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে এনে চিকিৎসা দেন।

দিনে শতাধিক লিটার দুধ পান ২২ গরুর মালিক

সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের চিকিৎসক মিজানুর রহমান বলেন, ‘ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের গাবখান বাজারের রেজাউল করীম গাভির খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি খামারিদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। আমাদের সাধ্য অনুযায়ী যাবতীয় পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা করছি।’

সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফারুক হোসেন বলেন, ‘বর্তমান বাজারে বিদেশি গরু নেই। দেশের খামারিদের গরু বাজারে বিক্রি হয়। দেশে নতুন নতুন খামার সৃষ্টির জন্য উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিয়ে থাকি। রেজাউল করীম দুধ উৎপাদনকারী খামার গড়ে সফল হয়েছেন। তাকে দেখে অনেকেই খামার গড়তে উৎসাহিত হচ্ছেন।’

দিনে শতাধিক লিটার দুধ পান ২২ গরুর মালিক

জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান বলেন, ‘প্রাণিকে রোগমুক্ত বা সুস্থ-সবল করতে পারলে দুধ, মাংস, ডিমের মাধ্যমে জিডিপি অর্জন করা সম্ভব। এতে দেশ ও খামারিরা সচ্ছল ও স্বাবলম্বী হতে পারবেন। বর্তমানে দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। সবাইকে সচেতন থাকার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

মো. আতিকুর রহমান/এসইউ/জেআইএম

Read Entire Article