দু’দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের মণপ্রতি দাম বেড়েছে ৫০০ টাকা

1 month ago 7

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে রাজবাড়ীতে পাইকারি ও খুচরা বাজারে অব্যাহত রয়েছে পেঁয়াজের দামবৃদ্ধি। তবে দুই দিনের ব্যবধানে এক লাফে মণ প্রতি বেড়েছে প্রায় ৫০০ টাকা। যার প্রভাব পড়তে যাচ্ছে খুচরা বাজারে।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকালে রাজবাড়ীর বৃহত্তম পাইকারি সোনাপুর পেঁয়াজ বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। এদিন বাজারে প্রকারভেদে কৃষকরা প্রতি মণ পেঁয়াজ ৩ হাজার থেকে শুরু করে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। গত রোববার হাটে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা মণ পেঁয়াজ বেচা-কেনা হয় বলে জানা গেছে।

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। সারা বছরই তারা এই দাম চান। পাশাপাশি তারা এলসিও বন্ধের দাবি জানান।

তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, বর্তমানে এলসি বন্ধ ও কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ মজুদ থাকায় বাজারে সরবরাহ কম। ফলে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজবাড়ি মসলা জাতীয় ফসল পেঁয়াজ আবাদের সমৃদ্ধ একটি জেলা। এ জেলায় সারাদেশের প্রায় ১৬ শতাংশ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় এবং দেশের মধ্যে পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থান রাজবাড়ীর। ফলে এ জেলার উৎপাদিত পেঁয়াজ সারা দেশের চাহিদার বৃহৎ একটি অংশ পূরণ করে থাকে। জেলার ৫ উপজেলায় কম বেশি পেঁয়াজের আবাদ হলেও কালুখালী, বালিয়াকান্দি ও পাংশায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আবাদ হয়। এবছর হালি পেঁয়াজ আবাদের জন্য বীজতলা তৈরি, হালি কেনা, সার-কীটনাশক দিয়ে জমি প্রস্তুত, সেচ, শ্রমিক মুজরিসহ প্রতি বিঘায় প্রায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে চাষিদের।

দু’দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের মণপ্রতি বেড়েছে ৫০০ টাকা

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবছর জেলায় ৩৬ হাজার ২০ হেক্টরের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৩৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় প্রায় ৫ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন।

পেঁয়াজ চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, এ বছর প্রায় ৭০০ মণ পেঁয়াজ পেয়েছি। যার মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০ মণ বিক্রি করেছি। বর্তমান বাজার দরে আমরা খুশি। আজ আমি ৩২০০ টাকা মণ বিক্রি করেছি। এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদে আমাদের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু সে হিসাবে মৌসুমের সময় দাম পাই না। পেঁয়াজের দাম ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা মণ হলে আমরা বাঁচি। আর বাইরে থেকে আমদানিও বন্ধ করতে হবে। এখন আমার ঘরে থাকা অনেক পেঁয়াজে পচন ধরে নষ্ট হচ্ছে। তারপরও একটু বেশি দামে বিক্রির আশায় রেখেছি। একবারে বিক্রি করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। যার কারণে রেখে রেখে বিক্রি করছি।

আরেক চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা চাই পেঁয়াজের মৌসুমের শুরু থেকে আরেক মৌসুম পর্যন্ত ৩ হাজার থেকে ৩৫০০ হাজার টাকা দাম থাকুক। তাহলে কৃষক বাঁচবে। সকল কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি। কিন্তু বেচতে গেলে দাম পাই না। এখন একটু দাম বেশি।

আমজাদ হোসেন নামে আরেক চাষি বলেন, এখন একটু দাম বেশি পাচ্ছি, কিন্তু লাভবান হচ্ছি না। কারণ যার ঘরে দুই মণ ছিল, সে এখন পাচ্ছে দেড়মণ। তাছাড়া এখন পচন ধরেও নষ্ট হচ্ছে পেঁয়াজ। এক মণ পেঁয়াজ উৎপাদন করতে ৩০০০ টাকার বেশি খরচ পড়ে। কিন্তু একটু দাম বাড়লে সবার মাথা নষ্ট হয়ে যায়। আমরা খেটে মরছি, আর অফিসাররা এসি রুমে বসে বাহাদুরি করে। আমরা ন্যায্যমূল্য চাই। এক মণ পেঁয়াজ ৪০০০ টাকার ওপর বিক্রি করলে আমাদের পোশাবে।

বিথি ট্রেডার্সের ইদ্রিস আলী বিশ্বাস বলেন বলেন, বর্তমানে এলসি বন্ধ থাকায় কৃষকরা হাটে পেঁয়াজ কম আমদানি করছে। যার কারণে দাম বেড়েছে। গতবছর কৃষকরা এসময় প্রায় ৪৬০০ থেকে ৪৮০০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করেছে। তাছাড়া এখন কৃষকরা পাট বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে। বাড়তি লাভের আশায় সব মিলিয়ে হাটে পেঁয়াজ কম আনছে কৃষকরা।

মন্ডল ট্রেডার্সের কামরুজ্জামান সুইট বলেন, সর্বনিম্ন ৩০০০ ও সর্বচ্চো ৩৫০০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করছেন কৃষকরা। এই দামে কৃষকরা খুশি। এই বাজারে প্রতিহাটে ৪০ থেকে ৫০ গাড়ি পেঁয়াজ আমদানি হয়। পরবর্তীতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায় এই পেঁয়াজ।

রুবেলুর রহমান/এফএ/এমএস

Read Entire Article