দুই অ্যাম্বুলেন্সের এক চালক, সিন্ডিকেটে জিম্মি রোগীরা

14 hours ago 5

গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে সিন্ডিকেটের দাপটে এক যুগেরও সময় ধরে ন্যূনতম অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাচ্ছে না এ জেলার বাসিন্দারা। জেলার ৩৫ লাখ মানুষের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র এটি। হাসপাতালটিতে স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও বাড়েনি সেবার মান ও অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীরা।

হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সেবার সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন সেবা গ্রহীতারা। আর এ সমস্যার জন্য চালক সংকটকে দুষছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সরকারিভাবে দুটি অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ থাকলেও চালক মাত্র একজন। কয়েক দফায় চালক ও অ্যাম্বুলেন্সের চাহিদা দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠালেও কোনো কাজ হয়নি। যার কারণে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স মালিকরা সিন্ডিকেট করে রোগীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন।

জানা গেছে, ২৫০ শয্যার গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার ও অবকাঠামো সংকটের অজুহাতে চিকিৎসা নিতে আসা অসংখ্য গুরুতর রোগীকে প্রতিনিয়ত রেফার্ড করা হয় রংপুর, বগুড়া, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সংকটে ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগী ও তার স্বজনদের। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স স্বল্পতার সুযোগে বিভিন্ন ক্লিনিক ও ব্যক্তি ফিটনেসবিহীন মাইক্রোবাসকে মোডিফাই করে তৈরি করেছেন প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স। এসব অ্যাম্বুলেন্সে নেই জীবন রক্ষাকারী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ। সংকটাপন্ন রোগীর জীবন বাঁচানোর তাগিদে সমস্যা জর্জরিত এসব অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন সেবা গ্রহীতারা।

আরও পড়ুন-

এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিপূর্ণ এসব বাহনকে অ্যাম্বুলেন্স সাজিয়ে রমরমা ব্যবসা করলেও প্রশাসন নীরব। এমনকি সরকারি হাসপাতাল চত্বরে পার্কিং নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে হাসপাতাল চত্বরেও রাখা হচ্ছে এসব প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স।

দুই অ্যাম্বুলেন্সের এক চালক, সিন্ডিকেটে জিম্মি রোগীরা

রোগীর স্বজনদের দাবি, হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা না থাকার সুযোগে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকরা প্রতিদিন রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। হাসপাতালের একটি সিন্ডিকেট প্রতি মাসে মাসোহারা পেয়ে থাকে বলে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সংকট জিইয়ে রাখা রয়েছে। ফলে অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি সঠিক সময়ে অ্যাম্বুলেন্স সেবা না পেয়ে প্রাণ হারানোর ঝুঁকি বাড়ছে।

ফুলছড়ি চর সিদাইয়ের বাসিন্দা লুৎফর আলী বলেন, আমার ৭০ বছর বয়সী মাকে হাসপাতালে ভর্তি করাই দুদিন আগে। অবস্থা ভালো না হওয়ায় ডাক্তার জরুরিভাবে রংপুরে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। কিন্তু সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে ‘গলাকাটা’ ভাড়ায় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স নিতে হচ্ছে। জেলার একমাত্র হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকবে না, সেটি খুবই কষ্টকর বিষয়।

গাইবান্ধা নাগরিক মঞ্চের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, জেলার মানুষদের একমাত্র সেবার ভরসাস্থল হাসপাতালটি। সেখানে অ্যাম্বুলেন্সের এ সংকট মেনে নেওয়া যায় না। তাই অবিলম্বে এ সংকট দূর করার আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি এ সংকট তৈরির পেছনে জড়িত সিন্ডিকেট খুঁজে বের করে ধ্বংস করতে হবে। নয়তো হাসপাতালে শতভাগ সেবা মিলবে না।

গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. আসিফ রহমান জাগো নিউজকে বলেন, জেলার এই বৃহত্তর চিকিৎসালয়ে দুইটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক একজন। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ও চালক সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে। এ বিষয়টি দ্রুত সমাধানে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। হাসপাতালে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে কোনো সিন্ডিকেট কাজ করছে কি না তা আমার জানা নেই।

এফএ/এমএস

Read Entire Article