চুয়াডাঙ্গায় মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে সাপের কামড়ে এক শিশুসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু জেলার দুটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই অ্যান্টিভেনম। এদিকে রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে গুজব ছড়ালে ব্যবস্থা নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে জেলা পুলিশ।
রোববার (২৩ জুন) আলমডাঙ্গার হারদী, জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
জানা গেছে, চারটি উপজেলা নিয়ে গঠিত চুয়াডাঙ্গা। এর মধ্যে আলমডাঙ্গা ও জীবননগর উপজেলায় নেই অ্যান্টিভেনম। দেশজুড়ে রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্ক শুরু হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনও হাসপাতালগুলোতে কোনো অবস্থাতেই অ্যান্টিভেনমের মজুত খালি না রাখারও নির্দেশ দেন। কিন্তু যখন সর্বত্র সাপ আতঙ্ক সেই পরিস্থিতিতে দুই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনম না থাকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে জনমনে।
তবে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি প্রয়োজন ঠেকানোর মতো অ্যান্টিভেনম রয়েছে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম সরবরাহ আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাফাউল্লাহ নেওয়াজ জানান, বেশ অনেকদিন থেকে অ্যান্টিভেনমের চাহিদা দিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, অ্যান্টিভেনম প্রয়োজন পড়লেই আনা হবে। আমাদের এখানে সাপে কাটা কোনো রোগী এখনও পর্যন্ত আসেনি। রোগী আসলে আমরা অ্যান্টিভেনম আনার ব্যবস্থা করবো।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার হেলেনা আক্তার নিপা জানান, আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি প্রয়োজনে সাপে কাটা রোগীর অ্যান্টিভেনম মজুত আছে। আরও চাহিদা দেওয়া আছে। আশা করছি দ্রুত সময়ে চাহিদা মত অ্যান্টিভেনম পেয়ে যাবো।
আরও পড়ুন
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, আমাদের হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম আছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
চুয়াডাঙ্গার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আউলিয়ার রহমান বলেন, জেলার কোথাও রাসেলস ভাইপার সাপে কেউ আক্রান্ত হওয়ার খবর মেলেনি। যদি কেউ এই সাপে আক্রান্ত হয় দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। আক্রান্ত কাউকে যেন কবিরাজের কাছে নিয়ে কালক্ষেপণ না করা হয়। কবিরাজ সাপে কাটা রোগীর শরীরে ক্ষত তৈরি করে। এতে করে ইনফেকশন হয়। আমাদের পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম মজুত আছে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই সাপের বিষক্রিয়া নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। কিন্তু সাপটি নিয়ে গত কয়েকদিন জেলার স্থানীয় ফেসবুক পেজ, গ্রুপগুলোতে নানা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। শুক্রবার (২১ জুন) সকাল থেকে স্থানীয় কয়েকটি ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপে জেলার জীবননগর উপজেলায়, দর্শনা কামারপাড়ায়, এছাড়া চুয়াডাঙ্গা সদরের বেশ জায়গায় রাসেলস ভাইপারে দেখা মিলেছে এমন কিছু পোস্ট দেখা যায়। এসব পোস্ট দ্রুত ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়িয়ে পরে। এসব ছবি দেখে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে যাচাই করে জানা যায় এসব ছবির কোনোটিই চুয়াডাঙ্গার নয়।
পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান জানান, রাসেলস ভাইপার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ যেকোনোভাবে গুজব ছড়ালে ব্যবস্থা নেবে জেলা পুলিশ। পুলিশের মিডিয়া সেল চুয়াডাঙ্গার সব ফেসবুক পেজ ও গ্রুপসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটিভ ব্যক্তিদের সাপ নিয়ে গুজব না ছড়াতে অনুরোধ করেছে।
হুসাইন মালিক/এনআইবি/জিকেএস