‘গেল দুই মাসে আমাকে চারবার বদলির আদেশ দেওয়া হয়। এগুলো বিব্রতকর ও অপমানজনক। বারবার এই বদলির ফলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছ।’
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর সুবিচার চেয়ে লেখা এক আবেদনে এ কথা তুলে ধরেন ৩০তম বিসিএসের একজন চিকিৎসক।
হাসিবা মুনতাহা নামের ওই চিকিৎসককে গত বছরের ১১ নভেম্বর রাজধানীর মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পদায়ন করা হয়। মাস না পূরণ হতেই তাকে ৮ ডিসেম্বর কুমিল্লার চান্দিনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়। তারও দুদিন পর ১০ ডিসেম্বর ফের ঢামেকে পদায়নের আদেশ দেওয়া হয়। ১৩ দিন পর ২৩ ডিসেম্বর তাকে বদলি করতে মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ দেওয়া হয়।
শুধু হাসিবা মুনতাহা নন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পদায়ন বা বদলি নিয়ে খামখেয়ালির শিকার হচ্ছেন অনেক চিকিৎসক। অল্প সময়ে একাধিকবার বদলি, বদলির পর তা বাতিল করে পুনর্বহাল, একই আদেশে এক ব্যক্তিকে একাধিক জায়গায় বদলিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। অথচ নিয়মিত ও জরুরি বদলি পদায়নের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও আদেশ পাচ্ছেন না অনেকে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে গত ২৮ নভেম্বর এক আদেশে ৪৭ জন চিকিৎসককে বদলি করা হয়। এর মধ্যে ২০ নম্বর ক্রমিকে থাকা ডা. মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়। এই চিকিৎসক ৫ আগস্টের আগে ছাত্রদের আন্দোলনকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস এবং সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ দাবি করে এর প্রতিবাদে এবং শেখ হাসিনা সরকারকে সমর্থন জানিয়ে শান্তি সমাবেশে নেতৃত্ব দেন। এই চিকিৎসককেও বদলির এক মাসের মধ্যে গত ২৩ ডিসেম্বর ফের ঢাকায় পুনর্বাসন করা হয়। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংযুক্ত রেখে কেরানীগঞ্জের কুন্ডা ২০ শয্যা হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে।
২৩ ডিসেম্বরের একই আদেশে ডা. হারুন-অর-রশিদসহ ৫৭ চিকিৎসককে বদলি করা হয়। এর মধ্যে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি অ্যান্ড অবস) ডা. শামীমা জাহানকে দুই জায়গায় পদায়ন করা হয়। আদেশের ১৩ নম্বর ক্রমিকে তাকে ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংযুক্ত করা হয়। ফের ২০ নম্বর ক্রমিকে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংযুক্ত রেখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ওএসডি করে রাখা হয়।
চিকিৎসকদের সঙ্গে এমন আচরণের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন তদবিরের পাশাপাশি অর্থের বিনিময় এবং ব্যক্তিগত ক্ষোভ ঝাড়তে এমনটা করছেন সংশ্লিষ্ট ডেস্কে নিয়োজিত কর্মকর্তা। অনেকে আবার আর্থিক লেনদেনে সুবিধামতো পদায়ন নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চিকিৎসকদের পুনর্বহালের পেছনে অর্থ ও বিএনপি একজন কেন্দ্রীয় নেতারও নাম উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ডেস্কের দায়িত্বে নিয়োজিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ইকবাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি যেভাবে নির্দেশনা পাই, সেভাবে কাজ করি। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আপনি যেগুলো বলেছেন, সেগুলোর কারণ যারা নির্দেশনা দিয়েছেন, তারা ভালো বলতে পারবেন।’
দুই মাসে চারবার বদলির আদেশ পাওয়া চিকিৎসক হাসিবা মুনতাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার বদলি নিয়ে আমি বেশ বিব্রত। এই মুহূর্তে এমন বদলি অপমানজনক। আমি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর আবেদন করে বিষয়টি জানিয়েছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে নিয়োজিত স্যারদের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারা এ নিয়ে ক্ষুব্ধ। আশা করি, এর ভালো সমাধান পাবো।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা মাসের পর মাস ঘুরে জরুরি প্রয়োজনে বদলি বা পদায়ন পাই না। অথচ ঠিকই একেকজনের নামে এক মাসেই একাধিক অর্ডার হচ্ছে। এসব বদলি পদায়নে রাজনৈতিক সুপারিশ থাকে। এরই ফাঁকে আবার কিছু অসাধু কর্মকর্তাও লেনদেনের মাধ্যমে করে থাকেন।’
এসইউজে/এমএমএআর/এএসএম