• মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের সঙ্গে যোগসাজশ
• ১০ প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ৬০০ কোটি টাকার টেন্ডার
• যাচাইবাছাই হচ্ছে কাজের ধরণ ও কাজ পাওয়ার পদ্ধতি
খুলনা সিটি করপোরেশন ঘিরে পাহাড় সমান লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে। নিম্নমানের কাজ ও নামে বেনামে সিটি করপোরেশনের টেন্ডারের কাজ করে অঢেল অর্থবিত্ত গড়েছেন তিনি। ৫ আগস্টের পর তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে নজরবন্দি রয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশনের একচেটিয়া উন্নয়ন কাজের টেন্ডার পাওয়া দশটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
দুর্নীতি খুঁজতে তালুকদার আব্দুল খালেকের সহায়তাকারীদের দিকে নজর দিয়েছে দুদক। তবে ঠিকাদারদের অধিকাংশই গাঁ ঢাকা দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে তালুকদার আবদুল খালেক আত্মগোপনে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ এক ডজন মামলা হয়েছে খুলনা মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন থানায়। এছাড়া চলতি বছরের ৯ জুলাই তার বিরুদ্ধে ১৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এবং তার স্ত্রী সাবেক বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী বাগেরহাট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহারের বিরুদ্ধে অসাধু উপায়ে ১ কোটি ৬৬ লাখ ৭ হাজার ৫৩৭ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
খুলনা সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, তালুকদার আব্দুল খালেক নামে বেনামে করপোরেশনের প্রায় ৮০ ভাগ ঠিকাদারি কাজ করেছেন। তিনি নিজে অংশীদার থেকে কিংবা অন্যের লাইসেন্সে কাজ নিয়ে নিজেই তা করেছেন। এজন্য কাজের অনিয়ম ও দুর্নীতি দেখার মতো কেউ ছিলো না। শুধু অর্থ ভাগাভাগি হয়েছে। তার সময়কালে টেন্ডারের কাজ পাওয়া ঠিকাদারদের ও কাজের নথিপত্র চেয়ে দুদক চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে দুদক দশটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে। এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তালুকদার আব্দুল খালেক নিয়ম ভেঙে টেন্ডারের কাজ দিয়েছেন। এসব উন্নয়ন কাজ থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন ও নিম্নমানের কাজ করে তিনি বড় পরিমাণ অর্থ লোপাট করেছেন। তার এসব অনিয়মের সঙ্গে পরিকল্পনা বিভাগের একজন কর্মকর্তা সরাসরি সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। অধিকাংশ দেন দরবার ওই কর্মকর্তা নিজেই করতেন।
আরও পড়ুন:
- বছর ধরে ‘অচল’ নৌ পুলিশের স্পিডবোট, তবুও মাসে বরাদ্দ ২০০ লিটার তেল
- প্রেমের চিঠি এখন অতীত, যা আসে আইনি-তালাক নোটিশ
দুর্নীতি দমন কমিশনের খুলনা জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তালুকদার আব্দুল খালেক মেয়রের দায়িত্ব পালনকালীন সব থেকে বেশি কাজ পেয়েছে এমন দশটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিতদের মধ্যে অন্যতম সেলিম হুজুরের হোসেইন ট্রেডার্স প্রায় ৫২ কোটি টাকার, যুবলীগ নেতা তাজুল ইসলামের তাজুল ট্রেডার্স প্রায় ৪০ কোটি টাকা, আওয়ামী লীগ নেতা আজাদের মেসার্স আজাদ ইঞ্জিনিয়ার্স প্রায় ৪৫ কোটি টাকা এবং রোজা এন্টারপ্রাইজ প্রায় ৩৬ কোটি টাকার টেন্ডারের কাজ করেছে। সবগুলো প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে মোট প্রায় ৬০০ কোটি টাকার টেন্ডারের কাজের ধরন ও সংশ্লিষ্টদের কাজ পাওয়ার পদ্ধতিকে যাচাইবাছাই করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
এ বিষয়ে দুদক খুলনা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রকিবুল ইসলাম বলেন, তালুকদার আব্দুল খালেকের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করা হচ্ছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের সত্যতা আমরা পেয়েছি। তার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাও হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তালুকদার আব্দুল খালেক সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে থাকাকালীন নিজেই ঠিকাদারি কাজ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার সময়কালে কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে তদন্ত চলছে ও সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট অভিযোগের বিষয়েও তদন্ত চলছে।
আরিফুর রহমান/এমএন/এমএস