বরগুনার প্রায় ১২ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসাস্থল জেনারেল হাসপাতাল। তবে হাসপাতালটি ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও এখনো বাড়েনি বরাদ্দের পরিমাণ। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক সংকটে ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা। আর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
সংকট কাটিয়ে উঠতে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ.কে.এম নজমুল আহসান।
১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৭ সালে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। পরে ২০০৯ সালে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা করা হয়। ২০১৩ সালে কাজ শুরু করে ২০২১ সালের জুন মাসে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করে। তবে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও হাসপাতালটিতে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকেন ৩০০-৪০০ জন। এছাড়াও বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে চিকিৎসা নিতে আসেন ৭০০ জন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৫৬ জন চিকিৎসকের অনুকূলে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক আছেন মাত্র ২০ জন। সিনিয়র কনসালটেন্ট ১০টি পদের মধ্যে চিকিৎসক আছেন মাত্র ১ জন। আবার জুনিয়র কনসালটেন্টের ১৩টি পদের অনুকুলে আছেন মাত্র ৬ জন। মেডিসিন, শিশু, গাইনি ও অ্যানেস্থেশিয়ার জন্য জুনিয়র কনসালটেন্ট থাকলেও নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। অন্যদিকে কার্ডিওলজি, নিউরো ও জেনারেল সার্জারির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের জন্য নেই সিনিয়র-জুনিয়র কোনো চিকিৎসকই।
সরেজমিনে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, বহির্বিভাগে দীর্ঘ লাইন দিয়ে টিকিট নিচ্ছেন রোগীরা। আবার ডাক্তার দেখাতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই। সিট না থাকায় মেঝেতে ভর্তি করা হয়েছে রোগীদের। অনেক ওয়ার্ডে হাঁটার জায়গা ছাড়া আর কোথাও ফাঁকা নেই। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সেবা দিতে ছুটছেন নার্সরা।
প্যাথলজি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, টেকনিশিয়ান ও যন্ত্রের অভাবে ফিরে যাচ্ছেন অনেক রোগী। যেসব পরীক্ষা করা যায়, সেগুলোও করতে হয় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে। নির্ধারিত সময়ের পরে হাসপাতালে আসা রোগীদের যেতে হয় প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার অথবা বিভাগীয় শহরে।
অন্যদিকে মুমূর্ষু রোগীদের রেফার করা হচ্ছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও ভোগান্তি। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স আছে ৩টি, তার মধ্যে একটি আইসিউ অ্যাম্বুলেন্স। কিন্তু চিকিৎসক সংকটে সেটি বন্ধ। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে যেতে হয় প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে। অন্যদিকে জনবলের অভাবে একদিনও ব্যবহার না করেই ধ্বংস হয়েছে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি।
মোস্তাফিজুর রহমান মুন্না নামের এক রোগীর স্বজন জাগো নিউজকে বলেন, আমি দাদাকে নিয়ে চারদিন ধরে হাসপাতালে আছি। হাসপাতালে চাহিদার থেকে ওষুধ কম দেওয়া হয়। বেশিরভাগ ওষুধ আমাদের কিনতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সামর্থ্যে কুলায় না। হাসপাতালে রোগী বেশি হওয়ায় সাবাইকে ওষুধ কম দিচ্ছে।
নুরুজ্জামান সবুজ নামের এক রোগীর স্বজন জানান, এত বড় একটা হাসপাতালে রোগীর চেয়ে চিকিৎসক কম হওয়ায় তারা আমাদের ঠিকমতো সেবা দিতে পারছে না। ভর্তি রোগীদের দেখতে শুধুমাত্র সকালে একজন চিকিৎসক আসেন। তাও কোনো রকম দেখেই তাকে আবার অন্য রোগীর কাছে যেতে হয়। সারাদিনে আর কোনো ডাক্তার ওয়ার্ডে আসেন না। খুব সমস্যা হলে আমাদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে জরুরি বিভাগের ডাক্তারের কাছে গিয়ে দেখিয়ে আসতে হয়। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, এখানে যাতে আরও ডাক্তার বাড়ানো হয়।
এ বিষয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ.কে.এম নজমুল আহসান জাগো নিউজকে বলেন, যেহেতু এটা প্রত্যন্ত এলাকা, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক সংকট দীর্ঘদিনের। এখানে প্রতিদিন চারশোর বেশি রোগী ভর্তি থাকে। সে হিসেবে এই অতিরিক্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে কষ্ট হচ্ছে। নতুন করে চিকিৎসক পদায়ন হলে আমরা আরও ভালো সেবা দিতে পারবো।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে আমরা আড়াইশো শয্যার হাসপাতালে ১০০ শয্যার বরাদ্দ পাচ্ছি। শুধুমাত্র খাবারে ২৫০ শয্যার পাই। ২৫০ শয্যার ফুল বাজেট পাওয়ার জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখেছি। যদি ২৫০ শয্যার বাজেট পেয়ে যাই, তাহলে সেবার মান আরও বাড়বে বলে আশা করছি।
নুরুল আহাদ অনিক/এফএ/এএসএম