বছর তিনেক আগেও একদম সুস্থ স্বাভাবিক একজন ছিলেন আঁখি মনি। একটি দুর্ঘটনা অন্ধকার নামিয়ে এনেছে পোষাক শিল্পে কাজ করা ভোলার চরফ্যাশনের এই তরুণীর জীবনে। সুচিকিৎসার অর্থ নেই, পরিবারে জায়গা নেই; আঁখি মনি কষ্ট ভুলে থাকতে আঁকড়ে ধরেছেন খেলাধুলাকে।
বৃহস্পতিবার পল্টন শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে জাতীয় প্যারা টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ। পক্ষাগাতগ্রস্থ আঁখি মনি অংশ নিচ্ছেন এই প্রতিযোগিতায়। প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ শেষে হুইল চেয়ার থেকে নেমে সাধারণ চেয়ারে বসার পর বোঝার উপায় ছিল না আঁখি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন খেলোয়াড়।
২০২২ সালে বাস দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ড ভেঙে যায় আঁখির। এরপর ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। চিকিৎসকেরা বলেছিলেন উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে। বিদেশ যাওয়া তো দূরের কথা, টাকার অভাবে ঠিকঠাক থেরাপিও নিতে পারেননি তিনি।
অভাব-অনটনে ভোগা আঁখির এক পর্যায়ে স্থায়ী ঠিকানা হয় সাভার পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি)। সেখান থেকেই এবার অংশ নিচ্ছেন জাতীয় প্যারা টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে।
টেবিল টেনিসেই নয়, নিয়মিত প্যারা আরচারি ও প্যারা বাস্কেটবলে অংশ নেন আঁখি। ইনডোর স্টেডিয়ামে নিজের দুঃখভরা জীবনকাহিনী বলতে গিয়ে বারবার কণ্ঠ ভারি হয়ে উঠছিল তার। প্রথম রাউন্ড জিতেছেন। খেলায় যখন জেতেন, তখন যেন সব কষ্ট ভুলে যান ভোলার চরফ্যাশনের এই তরুণী।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর বাবা-মা কেউই তার খোঁজ রাখেন না। ইনডোরের এক পাশে বসে আাঁখি বলছিলেন, ‘দুর্ঘটনার পর থেকে আমার পাশে কেউ নেই। বেঁচে আছি না মরে গেছি, পরিবারের কেউ সেই খোঁজ নেন না। বাবাকে ফোন করলে ধরেন না। মায়ের সঙ্গে কথা হয় মাঝেমধ্যে। দুর্ঘটনার পর বাড়ির সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে গেছে। আমাকে পরিবার বোঝা মনে করে।’
খেলাধুলার মধ্যেই জীবনের সব আনন্দ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেন আঁখি। এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যখন খুব কষ্ট লাগে। তখন খেলাধুলায় মনোযোগী হই।’
আঁখির স্বপ্ন প্যারা অলিম্পিক গেমসে খেলার। একক, দ্বৈত ও দলগত এই তিনটি ইভেন্টে এবারের জাতীয় প্যারা টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিচ্ছেন শতাধিক বিশেষভাবে সক্ষম খেলোয়াড়।
আরআই/এমএমআর/জেআইএম