দুর্ঘটনায় পরিবার হারিয়ে ৩৬ বছর ধরে স্বেচ্ছাসেবী ট্রাফিক পুলিশের কাজ

4 hours ago 5
কয়েক বছরের ব্যবধানে পর পর দুটি ঘটনা বদলে দিয়েছে এক ব্যক্তির জীবন। দুর্ঘটনায় পরিবার হারিয়ে ৩৬ বছর ধরে রাস্তায় রয়েছেন তিনি। ট্রাফিক পুলিশ না হয়েও পালন করছেন ট্রাফিক সামলানোর দায়িত্ব। বলছেন, দেহে এতটুকু শক্তি থাকা পর্যন্ত ছাড়বেন না রাস্তা। মানুষকে শিখিয়ে যাবেন ট্রাফিক আইন।  যৌবনের সোনালি সময় পেরিয়ে এখন জীবনের সাঁঝবেলায় দাঁড়িয়েছেন ঝ্যাং আইকিং। এখন তার বয়স ৭৫ বছর। বার্ধক্যে শরীর নুইয়ে গেলেও স্বেচ্ছাসেবী ট্রাফিকের কাজ ছাড়েননি তিনি। এখনো রাস্তায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এদিক ওদিক ইশারা দিয়ে গাড়ির রাস্তা বাতলে দেন।  চীনা সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, ঝ্যাং আইকিং একটি সড়ক দুর্ঘটনায় তার পরিবারের সদস্যদের হারান। তাই রাস্তাকেই আপন করে নিয়েছেন তিনি। চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিংয়ের বাসিন্দা ঝ্যাং ৩৬ বছর ধরে পালন করছেন স্বেচ্ছাসেবী ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব। তিনি চান, আর কেউ যেন তার মতো কষ্ট না পায়। আর কাউকে যেন স্বজন হারানোর বেদনা ভোগ করতে না হয়।  ব্যস্ত রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের সামনেই ঝ্যাংকে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। প্রতিদিন নিয়ম করে ইয়ানান হাসপাতালের বাইরে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ব্যস্ত এই সড়কে ঝ্যাংকে নিবেদিতপ্রাণ ট্রাফিক পুলিশের মতোই কাজ করতে দেখা যায়। সড়ক দুর্ঘটনায় বোন এবং স্ত্রী ও চার সন্তানকে হারিয়ে ঝ্যাং সিদ্ধান্ত নেন, আর কারও বুক খালি হতে দেবেন না। একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সমাজের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। আমি একজন অপেশাদার ট্রাফিক পুলিশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করব। ততদিন দায়িত্ব পালন করব, যতদিন আমার শরীরে শক্তি থাকে। ১৯৯০ সালে প্রথম স্বজন হারান ঝ্যাং। একটি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তার বোন। এর মাত্র ৬ বছর পর আরেকটি দুর্ঘটনায় ঝ্যাংয়ের স্ত্রী ও দুই জোড়া যমজ সন্তানের মৃত্যু হয়। এরপরই শোককে শক্তিতে পরিণত করে, কঠোর সিদ্ধান্ত নেন ঝ্যাং। আর কারও ঘর খালি হতে দেবেন না তিনি। সেই ভাবনা থেকেই ট্রাফিক সেফটি নিয়ে মানুষকে বোঝানোর সিদ্ধান্ত নেন ঝ্যাং। স্থানীয়দের কাছে সড়কে ঝ্যাংয়ের উপস্থিতি খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। অনেকেই তাকে সড়ক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখে বড় হয়েছেন। অবশ্য মাঝে-সাঝে ভুলও করেন ঝ্যাং। কিন্তু তাতে কি, নিজের কাজের স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করায় ঝ্যাংকে সম্মাননা দিয়েছে কুনমিং পৌরসভা কমিটির পাবলিসিটি ডিপার্টমেন্ট। ঝ্যাং মানব পাচার নিয়েও সচেতনতা সৃষ্টি করেন। এ পর্যন্ত তিন শতাধিক চোর ও মানব পাচারকারী ধরেছেন তিনি।   
Read Entire Article