বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হলেও এর প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকায় বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে।
শুক্রবার (৩০ মে) ভোর-সকাল-দুপুরে হালকা-মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত এবং দমকা হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। সাগরে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তাল রয়েছে সৈকত তীর।
বৈরী আবহাওয়ায় অনেকে ঘর থেকে বের হতে না পারলেও সৈকতের দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি দেখতে ভিড় জমিয়েছে পর্যটক ও উৎসুক জনতা। অনেকে এ ঢেউয়ের মাঝেই গোসল করতে নেমেছেন। তাদের তীরে ফেরাতে লাইফগার্ড কর্মীরা হাঁকডাক করলেও কাউকে থামানো যাচ্ছে না।
শুক্রবার দুপুর ও বিকেলে গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে। বৃহস্পতিবারও (২৯ মে) একই অবস্থা ছিল সৈকতে।
সরেজমিন দেখা যায়, বৈরী আবহাওয়ার পরও সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টের বেলাভূমিতে ভিড় করেছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। নিয়মমতো পর্যটক ও দর্শণার্থী সেবায় থাকা ঘোড়াসহ নানা অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছেন সেবা দেওয়া লোকজন। চলাচল করছে বিচ বাইকও। অনেক নারী-পুরুষ গোসলে নেমে ঢেউয়ের সঙ্গে খেলছেন। তাদের নিরাপদে নিয়ে আসতে বারবার তাগাদা দিচ্ছিলেন সী সেইফ লাইফগার্ডের কর্মীরা। তবে, ভারি বৃষ্টি ও দমকা বাতাসের কারণে বন্ধ রয়েছে টং দোকানগুলো। এসব ব্যবসায়ীদের চোখে-মুখে হতাশা বিরাজ করছে।
পরিবার নিয়ে সৈকতে গোসলে নামা পর্যটক ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, বেড়াতে চলে এসেছি, কিন্তু সময়টা পড়ে গেছে দুর্যোগপূর্ণ। এরপরও নির্ধারিত সময়ে ফিরে যেতে হবে। তাই সতর্কতার সঙ্গে পরিবার নিয়ে গোসল সেরে নিচ্ছি, কারণ আবার কবে আসা হবে জানা নেই।
বন্ধুদের নিয়ে সৈকতের দুর্যোগময় পরিস্থিতি দেখতে আসা লিংকরোড় এলাকার জুনাইদ ইকবাল বলেন, নিম্নচাপে সাগর উত্তাল হয় এটা আমাদের জানা। তবে, বৃষ্টিতে সৈকতের আবহ অন্যরকম লাগে। শুক্রবার, চাকরিরত বন্ধুরা ছুটি পেয়ে একসঙ্গে সৈকতের অবস্থা দেখতে এসেছি। তবে এসময় সাগরে নামা সমীচীন নয়।
কলাতলী পয়েন্টের টং দোকানি আমীর হামজা বলেন, আজ চারদিন বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঠিকমতো দোকান খোলা সম্ভব হচ্ছে না। এরপরও আয়ের আশায় দোকান স্থলে আসি। সাগরের উত্তালতায় অনেকে ভয়ে বিচ এলাকায় আসছেন না। কিন্তু কিছু উৎসাহী লোকজন সৈকতে এসে উত্তাল ঢেউয়ের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাখছে। আজকেও খালি হাতে ঘরে ফিরতে হবে।
বিচ বাইকচালক আমির উদ্দিন বলেন, নিয়ম মতো সৈকতে এসেছি। লোকজন কিছু থাকলেও কেউ বাইকে চড়ছে না। তেল পুড়লেও এক টাকাও আয় হয়নি এখনো। শূন্য হাতেই ফিরতে হবে হয়ত আজও।
ঝাল মুড়ি বিক্রেতা নজরুল ইসলাম ও সিদ্ধ ডিম বিক্রেতা নাজির হোসেন বলেন, পর্যটক থাকলে ভালো আয় হয়। কিন্তু গত চারদিন পর্যটক নেই বললেই চলে। এরপরও যারা দুর্যোগ মুহূর্ত দেখতে আসছেন তারা অল্পস্বল্প কিনছেন। এতে খরচটা উঠবে, তবে আয় হবে না।
কিটকট, শামুক-ঝিনুকসহ মৌসুমি পণ্য বিক্রেতারা দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন। বালু উড়ছে দেখে চটপটি বা অন্য খাবারের দোকানগুলো খোলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী তিন পয়েন্টে একই অবস্থা বিরাজ করছে।
সী সেইফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, সৈকতের সান্নিধ্যে আসা পর্যটক বা দর্শনার্থীদের বিপদাপন্ন হওয়া থেকে রক্ষার প্রচেষ্টা থাকে আমাদের। দুর্যোগপূর্ণ এ সময়ে সাগরে নামতে নিষেধ করলেও অনেককে মানানো যায় না। যারা গোসলে নামেন তাদের প্রতি বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। তবে নিজের নিরাপত্তা নিজে নেওয়া উত্তম।
সায়ীদ আলমগীর/এমএন/এএসএম