দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ, বিপদে পড়ছে পৃথিবী?

1 hour ago 7

বিজ্ঞানীরা মহাকাশযান এবং নভোচারীদের দ্বারা স্থাপন করা আয়না থেকে লেজার ছুড়ে চাঁদের দূরত্ব পরিমাপ করেন। চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। প্রতিবছর একটু একটু করে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ। গবেষণায় দেখা গেছে, চাঁদ প্রতিবছর প্রায় ৩ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার হারে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তবে এটি হঠাৎই হওয়া কোনো পরিবর্তন নয়। একটি ধীরগতির প্রক্রিয়া রয়েছে এই দূরে সরে যাওয়ার পেছনে, যা কোটি কোটি বছর ধরে চলছে। যার অর্থ হচ্ছে পৃথিবী আর চাঁদের এই দূরত্ব স্থির নয়।

ধারণা করা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে চাঁদ পৃথিবী থেকে অনেকটাই দূরে সরে যাবে। তখন পৃথিবীর কী হবে? হয়তো পৃথিবীতে প্রাণ ধারণই কঠিন হয়ে পড়বে তখন। কারণ পৃথিবীতে প্রাণ ধারণের জন্য যতগুলো বিষয় কাজ করে, চাঁদের অবস্থান এর মধ্যে অন্যতম।

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানী স্টিফেন ডিকারবি জানান, জোয়ার-ভাটার শক্তি ও কৌণিক ভরবেগের কারণে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ। সূর্য ও চাঁদের মহাকর্ষীয় টানের কারণে পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয়। চাঁদের আকর্ষণশক্তির কারণে পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের দিকে থাকে সেখানে সমুদ্রের পানি ফুলে ওঠে। বিপরীত দিকেও একই রকম জোয়ার সৃষ্টি হয়। এতে পৃথিবীর দুই পাশে দুটি জোয়ারের স্ফীতি তৈরি হয়। পৃথিবী তার নিজ অক্ষের ওপর প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার ঘোরে। ফলে এই জোয়ারের স্ফীতি চাঁদের আকর্ষণের চেয়ে সামান্য এগিয়ে থাকে। পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির কারণে এই স্ফীতি চাঁদকে সামনের দিকে ঠেলে দেয়। ফলে চাঁদ অতিরিক্ত শক্তির মাধ্যমে তার কক্ষপথকে সামান্য প্রসারিত করছে।

জোয়ারের স্ফীতি যখন চাঁদকে টেনে সামনে নিয়ে যায়, তখন চাঁদ পাল্টা টানে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির ওপর বিশেষ ধরনের ব্রেক তৈরি করে। এর ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণনগতি ধীরে ধীরে কমে আসছে। এতে দিনের দৈর্ঘ্য প্রতি শতাব্দীতে প্রায় ২ দশমিক ৩ মিলিসেকেন্ড করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই পুরো প্রক্রিয়া পদার্থবিজ্ঞানের কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ নীতির ওপর নির্ভরশীল। এই নীতি অনুসারে, কোনো আবদ্ধ সিস্টেমের মোট কৌণিক ভরবেগ স্থির থাকে। যখন পৃথিবীর ঘূর্ণনগতির কৌণিক ভরবেগ কমে যায়, তখন চাঁদের কক্ষপথের কৌণিক ভরবেগ বেড়ে যায়। আর কক্ষপথের কৌণিক ভরবেগ বাড়লে চাঁদ পৃথিবী থেকে দূরে সরে যায়।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, চাঁদ যে গতিতে দূরে সরে যাচ্ছে, তা নিয়ে আপাতত বিপদের কোনো আশঙ্কা নেই। তবে কোটি কোটি বছর পর এর ফলে পৃথিবীতে দিনের দৈর্ঘ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে। তখন জোয়ার-ভাটার তীব্রতাও কম হবে। এই বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া কেবল চাঁদ বা পৃথিবীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, মহাবিশ্বের অন্যান্য গ্রহ ও তাদের উপগ্রহের মধ্যে এমন প্রবণতা দেখা যায়।

বিজ্ঞানীরা চাঁদের পৃষ্ঠে বিশেষ প্রতিফলক বসিয়ে রেখেছেন। লেজার রশ্মি পাঠিয়ে তারা চাঁদের সঠিক দূরত্ব পরিমাপ করেন। ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো ১১ মিশনে এই প্রতিফলক স্থাপন করা হয়। সেই পরিমাপ থেকেই জানা যায়, চাঁদ ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, চাঁদ যে গতিতে দূরে সরে যাচ্ছে, তা নিয়ে আপাতত বিপদের কোনো আশঙ্কা নেই। তবে চাঁদের ক্রমশই দূরে সরে যাওয়ার এ প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে পৃথিবীর ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা তা নিয়ে গবেষণা চলছে।

সূত্র: এনডিটিভি

Read Entire Article