দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আরিফার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে বড় বাধা অভাব

চরম দারিদ্র্য এবং সামাজিক বাধা- কোনো কিছুই দমাতে পারেনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কিশোরী আরিফাকে। এক চোখে দৃষ্টি একেবারেই নেই, আরেক চোখে সামান্য দৃষ্টি নিয়েই এই বছরের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। এর আগে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাতেও সাফল্য অর্জন করে আরিফা। অদম্য এই কিশোরীর স্বপ্ন চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করা। যশোরের শার্শার দিঘা গ্রামের একটি ভাঙা মাটির ঘরে বসবাস আরিফার পরিবারের। ঘরের ভেতরে ফাটল ধরেছে, টিনের চাল দিয়ে পানি পড়ে। নেই একটি পড়ার টেবিলও। তবুও কেরোসিনের কুপি জ্বেলে রাত জেগে পড়ে আরিফা। এক চোখে আলো নেই, অনেকটা যেন মনের আলো দিয়েই প্রতিনিয়ত লড়াই করছে সে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আরিফার বাবা সোহারাব হোসেন পেশায় একজন ভ্যানচালক। তার দৈনিক আয় মাত্র দুই-তিনশ টাকা, যা দিয়ে পাঁচজনের সংসার চলে। তবে এতো অভাব-অনটনের মধ্যেও মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন সোহারাব। তিনি বলেন, মেয়ে এক চোখে কিছুই দেখে না, আরেক চোখেও খুব কম দেখে। তারপরও তার ইচ্ছা আর পরিশ্রম দেখে আমি হাল ছাড়তে পারি না। ডাক্তার হবে এই স্বপ্নেই বেঁচে আছি। আরও পড়ুনসন্তানের কিডনি রোগ নিয়ে অথই সাগরে প্রতিবন্ধী মা-বাবাগাছ থেকে পড়ে স্বপ্ন ভেঙেছে

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আরিফার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে বড় বাধা অভাব

চরম দারিদ্র্য এবং সামাজিক বাধা- কোনো কিছুই দমাতে পারেনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কিশোরী আরিফাকে। এক চোখে দৃষ্টি একেবারেই নেই, আরেক চোখে সামান্য দৃষ্টি নিয়েই এই বছরের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। এর আগে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাতেও সাফল্য অর্জন করে আরিফা। অদম্য এই কিশোরীর স্বপ্ন চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করা।

যশোরের শার্শার দিঘা গ্রামের একটি ভাঙা মাটির ঘরে বসবাস আরিফার পরিবারের। ঘরের ভেতরে ফাটল ধরেছে, টিনের চাল দিয়ে পানি পড়ে। নেই একটি পড়ার টেবিলও। তবুও কেরোসিনের কুপি জ্বেলে রাত জেগে পড়ে আরিফা। এক চোখে আলো নেই, অনেকটা যেন মনের আলো দিয়েই প্রতিনিয়ত লড়াই করছে সে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আরিফার বাবা সোহারাব হোসেন পেশায় একজন ভ্যানচালক। তার দৈনিক আয় মাত্র দুই-তিনশ টাকা, যা দিয়ে পাঁচজনের সংসার চলে। তবে এতো অভাব-অনটনের মধ্যেও মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন সোহারাব।

তিনি বলেন, মেয়ে এক চোখে কিছুই দেখে না, আরেক চোখেও খুব কম দেখে। তারপরও তার ইচ্ছা আর পরিশ্রম দেখে আমি হাল ছাড়তে পারি না। ডাক্তার হবে এই স্বপ্নেই বেঁচে আছি।

আরও পড়ুন
সন্তানের কিডনি রোগ নিয়ে অথই সাগরে প্রতিবন্ধী মা-বাবা
গাছ থেকে পড়ে স্বপ্ন ভেঙেছে কাঠুরে ইমরানের

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, এক চোখ জন্মগত অন্ধ ছিল আরিফার। তবে আরেক চোখে সামান্য আলো থাকলেও অভাবের কারণে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। স্কুলে যাতায়াতও ছিল যুদ্ধের মতো। বাড়ি থেকে ২ কিলোমিটার দূরে চালিতাবাড়িয়া হাইস্কুলে যেতে তাকে প্রতিদিন একাধিকবার রাস্তা পার হতে হতো। সামান্য দেখার ক্ষমতা থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও ছিল বেশি। তবুও নিয়মিত স্কুলে গেছে। এখন সে কলারোয়া সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। প্রতিদিন যাতায়াত খরচ প্রায় ১০০ টাকা।

আরিফা জানায়, ‘অনেক দিন টাকা না থাকায় ক্লাসে যেতে পারেনি সে। এইচএসসির ক্লাস শুরু হলেও বইগুলো এখনো কেনা হয়নি তার। সহপাঠীদের কাছ থেকে ধার নিয়ে পড়ছে। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী আরিফা। কিন্তু পরিবারের অনিশ্চিত অর্থনৈতিক অবস্থাই তার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা।’

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আরিফার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে বড় বাধা অভাব

আরিফা জানায়, ‘এক চোখে কিছুই দেখি না, আরেক চোখে খুব কম দেখি। তবুও আমি পড়তে চাই, ডাক্তার হতে চাই। বাবা কত দিন পারবেন জানি না। সরকার আর সমাজের সহায়তা চাই। মাঝপথে স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কায় থাকি সবসময়।’

আরও পড়ুন
লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ভ্যানচালক শাহালমের কণ্ঠে বাঁচার আকুতি
টিউমারে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে মা-ছেলের জীবন

আরিফার মা ফিরোজা খাতুন বলেন, প্রতি মাসে মেয়ের জন্য এক হাজার টাকার ওষুধ লাগে। কিন্তু অভাবের কারণে বেশিরভাগ সময়ই কিনতে পারি না।

তিনি বলেন, নিজেদের খাবারের চেয়ে মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়াটাই আমাদের কাছে বড়। অভাবের কারণে মাঝে মাঝে না খেয়েও থাকতে হয় আমাদের। তবুও মেয়ের পড়াশোনায় যেন বাধা না আসে সেই চেষ্টাই করি।

সাতক্ষীরা কাজিরহাট ডিগ্রি কলেজের সাবেক শিক্ষক ও আরিফার প্রতিবেশী আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘আরিফা অত্যন্ত ভদ্র ও মেধাবী। দৃষ্টি শক্তি নেই, তবুও প্রতিটি পরীক্ষা দিয়েছে নিজের প্রচেষ্টায়। ইউনিট টেস্ট থেকে বোর্ড পরীক্ষা সব জায়গায়ই নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে।’

তিনি বলেন, বাবা দিনরাত ভ্যান চালান শুধু মেয়ের স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রাখতে। এই পরিবারটিকে সরকারি সহায়তা পাওয়া জরুরি।

শার্শা উপজেলা প্রশাসক কাজী নাজিব হাসান আশ্বাস দিয়ে বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও আরিফার এমন অসাধারণ সাফল্য সত্যিই অনুকরণীয়। দারিদ্র্য ও শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে উপেক্ষা করে যে দৃঢ়তার সঙ্গে সে এগিয়ে যাচ্ছে, তা আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরিফার শিক্ষাজীবনে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমরা চাই, এ ধরনের মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন কোনো বাধায় থেমে না যাক।

মো. জামাল হোসেন/কেএইচকে/এফএ/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow