দেশ-বিদেশে থেকে অর্থায়ন করছে আওয়ামী লীগ: ডিএমপি

1 hour ago 3

‎রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল করার সময় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ২৪৪ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এসময় তাদের কাছ থেকে ১৪টি ককটেল ও ৭টি ব্যানার উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অর্থায়ন করা হচ্ছে। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে এ অর্থায়ন করা হচ্ছে। ঝটিকা মিছিলে অংশ নিতে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পালিয়ে যাওয়া নেতাদের ফ্ল্যাটে থাকছেন বলেও দাবি করেছে পুলিশ।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন নজরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

‎রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল করার সময় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ২৪৪ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার

ঝটিকা মিছিল চলাকালে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ২৪৪ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজধানীর উত্তরা, ফার্মগেট, তেজগাঁও এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আজকের (২৪ সেপ্টেম্বর) মিছিল থেকে গ্রেফতাররা বেশিরভাগ ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর ও গোপালগঞ্জ থেকে এসেছেন।

তাদের মধ্যে ডিবি গ্রেফতার করেছে ৫০ জনকে, সিটিটিসি ২৭ জনকে, তেজগাঁও বিভাগ ১০০ জনকে, রমনা বিভাগ ৫৫ জনকে, গুলশান বিভাগ ৫ জনকে, মিরপুর বিভাগ ৪ জনকে এবং উত্তরা বিভাগ ৩ জনকে গ্রেফতার করে। নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে তারা সংগঠিত হচ্ছেন।

ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রেফতার অনেকেই জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন- টাকার বিনিময়ে ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণ করছে।

‎রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল করার সময় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ২৪৪ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার

কোন কোন দেশ থেকে ঝটিকা মিছিলের অর্থ আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অর্থায়ন করা হচ্ছে।

অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সংগঠিত হচ্ছে, অপতৎপরতা চালাচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে। প্রথমদিকে তারা ভোরের দিকে যখন রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকতো তখন মিছিল করতো। এরপর সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে রামপুরার দিকে মিছিল করে। এরপর বিমানবন্দরের গোল চত্বরের দিকে মিছিল করে। এভাবে ধীরে ধীরে তারা সাহস সঞ্চার করছে, মিছিলের উপস্থিতি বৃদ্ধি করছে এবং দেশের বাইরে থেকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা শক্তি সঞ্চার করছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ ব্যর্থ কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোটেই এমন নয়। এক বছর আগে তারা ক্ষমতাচ্যুত হয়। তারা টানা ১৭ বছর এ দেশে ক্ষমতায় ছিল। তাদের বিরাট জনগোষ্ঠী, বিরাট সাপোর্টার আছে। তাদের দলের এক শতাংশ নেতাকর্মী হয়তো দেশের বাইরে আছেন, বাকিরা কিন্তু দেশেই আছে। সেই তুলনায় মিছিল-মিটিং কর্ম তৎপরতা নেহাত কম। বাংলাদেশ পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় আছে বিধায় অপতৎপরতা রোধ করা সম্ভব হয়েছে।

ঢাকা নগরবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজ ২৪৪ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে গ্রেফতারে জনসাধারণ অনেক সহযোগিতা করেছে। এই সহায়তা সামনের দিকে আরও চাচ্ছি। সাধারণ জনগণ দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসা উচিত।

ডিএমপির এই অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, ঢাকার আবাসিক হোটেল, ফ্ল্যাট ও ছাত্রাবাসে নিয়মিত রেইড দেওয়া হয় এবং গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। তবে সব সময় পারা যায় না। ঢাকা শহর অনেক জনবসতিপূর্ণ। অনেক ফ্ল্যাট এখন ফাঁকা। এমনকি অনেক আওয়ামী নেতাকর্মীর ফ্ল্যাটও ফাঁকা। তাদের আত্মীয়-স্বজনের ফ্ল্যাটও ফাঁকা আছে। আমাদের কাছে তথ্য আসছে- এই সমস্ত বাসা-বাড়িতে গ্রাম থেকে অনেক নেতাকর্মী ফ্রি থাকছেন। একটি বিল্ডিংয়ে ১০-২০টা ফ্ল্যাট রয়েছে, সেখানে দুটি ফাঁকা ফ্ল্যাট রয়েছে।

‎রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল করার সময় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ২৪৪ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার

সন্দেহভাজন ভবন-ফ্ল্যাটের তথ্য পুলিশকে দিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে অপরিচিত মানুষদের দেখা যায় -এমন তথ্য আমাদের দিলে পুলিশের কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে। এই তথ্যগুলো পুলিশকে দিলে শতভাগ তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রাখা হবে। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজও করতে পারেন যেকেউ।

ভাড়াটিয়া তথ্য পুনরায় নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি ডিএমপির সিআইএমএস আলাদা সফটওয়ারে আছে। গত মাসেও প্রায় ৫০ হাজার ভাড়াটিয়ার তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে। তথ্য হালনাগাদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

ঝটিকা মিছিল থেকে উদ্ধার ককটেল নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, ককটেল থেকে এখন পর্যন্ত বিপজ্জনক কিছু হয়নি। প্যানিক বা মেসেজ দেওয়ার জন্য মিছিলে ককটেল রাখা হয়। ককটেল নিয়ে বোম ডিজপোজাল ইউনিট পরীক্ষা করে দেখেছে এক্সপ্লোসিভ কিছু নেই। ম্যাচের কাঠির সালফার, পাথর ও সাইকেলের চাকার বল দিয়ে বানিয়ে সাউন্ড ও ধোঁয়া তৈরি করে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে।

আওয়ামী লীগের মিছিল ঠেকাতে না পেরে দায়িত্বে অবহেলার জন্য কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত শুক্রবার আমাদের কাছে তথ্য ছিল নামাজের পর দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বড় ধরনের মিছিল হতে পারে। এজন্য মোবাইল পেট্রোলসহ সব অফিসারদের মাঠে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। প্রয়োজনে খাওয়ার জন্যও পালাক্রমে থানায় এসে খেয়ে যাবে। মনিটর করার জন্য ডিএমপির সিনিয়র অফিসার মাঠে ছিল। আমি নিজেই বিকেলের দিকে মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে দেখি ওসি, জোনাল অফিসার, ইন্সপেক্টর (অপারেশন)সহ কয়েকটি টিম থানায় অবস্থান করছে। তারা সিনিয়র অফিসারের নির্দেশনা অমান্য করেছে। এজন্যই তাদের ডিএমপির সদর দপ্তরে ক্লোজ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ৫ আগস্টের ঘটনার পরপরই কিছু চ্যালেঞ্জ দেখা দিলেও পুলিশ এখন সম্পূর্ণ সক্ষম। শুরুতে মফস্বল শহর থেকে এসে ডিএমপিতে কাজ করতে মফস্বল দেখে ঢাকার অনেক রাস্তাঘাট তারা চেনে না। এক বছর তারা পার করেছেন, তারা এখন রাস্তাঘাট চেনা। এখন পুলিশ বাহিনী পরিস্থিতি সামলাতে সক্ষম।

রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠনের যে কোনো অপতৎপরতা রোধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এস এন নজরুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার শহীদুল্লাহ ও ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

টিটি/এমআইএইচএস/জেআইএম

Read Entire Article