‘দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে জাতীয় ঐকমত্যের বিকল্প নেই’

1 week ago 7
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আগামী নির্বাচনে দেশ থেকে ফ্যাসিবাদকে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করতে হবে। এর জন্য ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক দলকে জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। এখন জাতীয় ঐকমত্যের বিকল্প নেই।  শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বাগেরহাট জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।  বাগেরহাট জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা রেজাউল করীমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মশিউর রহমান ও মাস্টার শফিকুল আলম। সম্মেলনে জেলা নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট মাওলানা শেখ আব্দুল ওয়াদূদ, সেক্রেটারি শেখ মোহাম্মদ ইউনুস, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন, মো. মিজানুর রহমান মল্লিক, অ্যাডভোকেট মুস্তাইন বিল্লাহ, মঞ্জুরুল হক রাহাত, অধ্যক্ষ আব্দুল আলিম, ছাত্রশিবিরের বাগেরহাট জেলা সভাপতি নাজমুল হাসান সাইফ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।  সম্মেলনের শুরুতেই প্রধান অতিথি সেক্রেটারি জেনারেল বাগেরহাট জেলার ২০২৫-২০২৬ সেশনের নবনির্বাচিত জেলা আমির মাওলানা রেজাউল করিমের শপথ বাক্য পাঠ করান। সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, সমাজ পরিবর্তনের মহান দায়িত্ব নিয়ে ইসলামি আন্দোলনের নেতাকর্মীদের কাজ করতে হবে। আগামী নির্বাচন হবে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের ছাত্র-জনতার যে আত্মত্যাগের বিনিময়ে দেশ ফ্যাসিবাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে, সে ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশের বিনির্মাণ দৃঢ় রাখার জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। বর্তমানে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।  উপদেষ্টা পরিষদের নিয়োগের ব্যাপারে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গণ আকাঙ্ক্ষার চাহিদা অনুযায়ী আপনাদের সরকারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই গণ আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করতে হবে। আলেম-ওলামাদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া ফ্যাসিবাদের সহযোগীদের উপদেষ্টা পরিষদে স্থান না দেওয়ার জন্য তিনি সরকার প্রধানের প্রতি আহ্বান জানান।  তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের সহযোগী দেশের অধিকাংশ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের রেখে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। বিচার, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনের ও সংবিধানের সংস্কারসহ ৬টি স্তরে সংস্কারের যৌক্তিক সময়ের পর একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। তিনি দেশে ১১ থেকে ১২ লক্ষ কর্মকর্তাদের অধিকাংশ ফ্যাসিবাদী সরকারের কর্মকর্তাদের পরিবর্তনের পর দেশ ফ্যাসিবাদী জ্বর মুক্ত হবে বলে দাবি করেন।  সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছরের ভোটবিহীন ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে দেশ আজ মুক্ত। দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হলেও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতিটি স্তরে ফ্যাসিবাদের দোসররা বহাল তবিয়তে আসীন রয়েছে। বর্তমান সরকারকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে হলে রাষ্ট্র সংস্কার করার জন্য যৌক্তিক সময় দেওয়া প্রয়োজন। জামায়াত বর্তমান সরকারকে এ কাজে যৌক্তিক সময় দিতে চায়। যৌক্তিক সময় বলে জামায়াত সরকারকে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ বেঁধে দিতে চায় না। বহু রক্ত ও ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে দেশ আজ নতুন করে  চলতে শুরু করেছে।  তিনি জামায়াতের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, দেশে প্রতিটি জনপদে, গ্রাম-গঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইসলামি আন্দোলনের দুর্জয় ঘাঁটি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ঘরে ঘরে জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াত সম্প্রসারণ, তারবিয়াতের মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্য ও ইসলামে কি কল্যাণ তা জাতির সামনে তুলে ধরে নির্বাচনে জনমত সংগ্রহ করা সকল জনশক্তির দায়িত্ব।  সেক্রেটারি জেনারেল সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, একটি জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে সকলে মিলে একসঙ্গে পথ চলতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন মত থাকবেই, ভিন্ন মত ও আদর্শ আছে বলেই দেশে বহু দলীয় গণতন্ত্র চালু আছে। সকল রাজনৈতিক দলই যখন ফ্যাসিবাদ বিরোধী এক দফা আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছে তখন আগামী নির্বাচনে ফ্যাসিবাদকে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। তিনি সকল দলের অভ্যন্তরে সহমর্মিতা, সংহতি, সমঝোতা দলীয় পর্যায়ে আলোচনা করে শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করার জন্য একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ গড়ে তুলতে দল-মত নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রতি আহ্বান জানান।  মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক বলেন, জামায়াতে ইসলামী ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তিতে একটি মানবিক সমাজ কায়েম করতে চায়। আর এ কাজকে গতিশীল ও অগ্রগামী করার জন্য আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে গণমানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে দাওয়াতি কার্যক্রম সম্প্রসারণের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিটি ঘরে ঘরে দাওয়াত পৌঁছাতে পারলেই দ্বীন কায়েমের পথ প্রশস্ত হবে। নিজেদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী সৃষ্টি করার জন্য বেশি বেশি কুরআন, হাদিস ও ইসলামী বই অধ্যায়ন করতে হবে। সফলতার জন্য আল্লাহর সাহায্য চেয়ে তাহাজ্জুদ ও নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ধরণা দিতে হবে। তাহলেই আল্লাহ আমাদের বিজয়ী করবেন। মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাম্প্রতিক আন্দোলনে শহীদরা আমাদের জাতীয় সম্পদ ও গর্বিত সন্তান। তাই শহীদদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। শহীদ পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের সমস্যা সমাধানে যথাযথ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আহতদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সুচিকিৎসাসহ সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অবদান রাখতে হবে। তাহলে দেশ ও জাতির যে কোনো দুর্ভোগকালে নতুন প্রজন্ম সর্বোচ্চ ত্যাগ ও কোরবানির জন্য উদ্বুদ্ধ হবে। তিনি শহীদদের স্বপ্ন ন্যায়বিচার ও সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠায় সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
Read Entire Article