দেশে আবার চক্রান্তের খেলা শুরু হয়েছে: ফখরুল

2 days ago 9

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে আবার চক্রান্তের খেলা শুরু হয়েছে। যে চক্রান্তের খেলার কারণে আমাদের নেত্রীকে (খালেদা জিয়া) ছয় বছর জেলে থাকতে হয়েছে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে এখনো দেশের বাইরে থাকতে হচ্ছে। সেই চক্রান্ত আবার শুরু হয়েছে।

বুধবার (১ জানুয়ারি) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আশা প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, একটা নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ন্যূনতম যে সংস্কারগুলো করা দরকার, তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) শুধু সেগুলোই করবেন। যে নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ থাকবে। যে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে। দেশে রাজনৈতিক যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা সমাধানের একমাত্র পথ হতে পারে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন।

তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশে বিশ্বাসী, যারা জোর গলায় বলতে পারে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’, সেই দলের নেতাদের দূরে সরিয়ে রাখতে চাওয়া হয়। ইতিহাসে এমন ঘটনা বহুবার হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এই চক্রান্তকে কখনো সমর্থন দেবে না।

‘বিএনপিকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা বহুবার হয়েছে, কখনোই ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়নি। কারণ, বিএনপি যে রাজনীতি তা এদেশের মানুষ ও জনগণের রাজনীতি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। মানুষের প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে সময়ের প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কার আনতে হবে। তাই বলে সংস্কারের নামে আমরা এমন কিছু হতে দিতে পারি না, যা আমাদের গণতন্ত্রকে বিঘ্নিত করবে।

বর্তমান সংকট থেকে দেশকে মুক্ত করতে কালবিলম্ব না করে অতিদ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ছাত্রদলকে ‘ভ্যানগার্ড’ আখ্যায়িত করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সামনের সারির যোদ্ধা তারা। ছাত্রদলকে এখন নলেজ বেস পলিটিক্স করতে হবে, জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতি করতে হবে। আমাদের একটা সাইবার ওয়ার্ক করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের অবস্থান সবচেয়ে বেশি রাখতে হবে। এটি যদি আমরা করতে না পারি তাহলে এ যুদ্ধে আমরা হারিয়ে যাবো।

ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভিটিস বাড়ানোর অনুরোধ করে তিনি বলেন, দেশ ও দেশের বাইরে ষড়যন্ত্র চলছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের মেধা ও মনন দিয়ে তাদের পরাজিত করতে পারবো, বিশ্বাস রাখি।

সভাপতির বক্তব্য ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সফল হয়েছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের রক্তের ওপর দিয়ে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সময়ে ক্যাম্পাসে কোথাও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের থাকতে দেওয়া হয়নি। আগামী দিনে সারাদেশের ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নতুন ধারার রাজনীতি চালু করবে। কোথাও চাঁদাবাজি ও দখলবাজি থাকবে না।

বক্তব্য শুরুতে গুম-খুনের শিকার ছাত্রদল নেতাকর্মী এবং আন্দোলনে নিহত ছাত্র-জনতাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, গত ১৬ বছর বিদেশে থেকে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ২০২৪ সালেও তার নেতৃত্বে আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশছাড়া হয়েছেন। এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। বিপদ তৈরির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে।

দলটির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, গণঅভ্যুত্থানে শামিল হয়েছে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ। গণঅভ্যুত্থানের পর পৃথিবীর সব দেশেই নির্বাচন হয়। সংস্কার বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকবে। যারা উল্টোপাল্টা কথা বলেন তাদের ইতিহাস পড়া দরকার।

তিনি পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার উদাহরণ দিয়ে বলেন, গণঅভ্যুত্থান করেছে দেশের জনগণ। সুতরাং নির্বাচনের বিকল্প নেই।

অন্তর্বর্তী সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের উদ্দেশে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, গোটা দেশ আপনাদের (ছাত্রদের) দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু হঠাৎ করে কেন ‘মার্চ ফর ইউনিটি’? আপনারা তো বিএনপি মহাসচিবসহ সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ঐক্য করেছিলেন? ঐক্যর আহ্বান জানিয়ে যখন ‘মার্চ ফর ইউনিটি’র কথা বলেন তখন আমাদের কষ্ট লাগে। আপনারদের শুভবুদ্ধির উদয় হওয়া দরকার।

‘কার স্বার্থে মার্চ ফর ইউনিটি করছেন? আমাদের বৃহত্তর স্বার্থে শেখ হাসিনার বিচার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। আমরাও ঐক্য চাই, শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার আমরাও চাই। জাতীয় ঐক্যর ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বির্নিমিত হবে।’

বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, কেউ কেউ বলেছেন আগে সংস্কার পরে নির্বাচন। আরে সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। গণতন্ত্র না থাকলে সংস্কার হয় কিভাবে? দেশের জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। নির্বাচন নিয়ে ছিনিমিনি খেললে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ।

এদিন ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুপুর থেকে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার হাতে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে আলোচনা সভায় যোগ দেন নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের পরনে রংবেরঙের ব্যাজ ও টুপি-গেঞ্জি শোভা পাচ্ছিল। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের বাইরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ছাত্রদলের প্রথম শহীদ চট্টগ্রামের মো. ওয়াসিম আকরাম, মো. সবুক মিয়া, আরিফুর রহমান রাসেলসহ নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্যানার দেখা গেছে।

এছাড়াও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম হওয়া ছাত্রদলের সাবেক নেতা ইলিয়াস আলী, নুরুজ্জামান জনি, মাহাবুবুল হক বাবলু, আবু তাহের দাইয়া, সাজেদুল ইসলাম সুমন, আমিনুল ইসলাম জাকিরকে ফিরিয়ে দেওয়া দাবিতে ব্যানার দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত-জনতার আন্দোলনে ছাত্রদলের নিহত ১৪২ জনের নামে তালিকার বই প্রকাশ করে সংগঠনটি।

দিনটি উপলক্ষে সকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালন করেছে।

ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদলের সভাপতি আবদুর মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আহসান রাজিব, সাবেক ছাত্রদল নেতা কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুমসহ সংগঠনটি অসংখ্য নেতাকর্মী।

কেএইচ/এমকেআর/এমএস

Read Entire Article