দৈত্যাকার কচ্ছপের রাজ্য আলডাব্রা

2 hours ago 5

সমুদ্রের অগাধ নীল জলরাশি, ঢেউয়ের দোল খাওয়ার মাঝে এক নিভৃত আশ্রয় আলডাব্রা অ্যাটল। মানব সভ্যতার কোলাহল থেকে বহু দূরে, ভারত মহাসাগরের বুকে যেন প্রকৃতির হাতে গড়া এক স্বর্গ। এখানে সময় থমকে গেছে, প্রকৃতি রয়ে গেছে তার আদিম রূপে। যেখানে মানুষের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। বিস্তীর্ণ প্রবালপ্রাচীর ঘেরা এই দ্বীপমালার বুকে জেগে আছে অনন্য জীববৈচিত্র্যের এক জগত, যা বিশ্বে আর কোথাও নেই।

সেশেলস দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত আলডাব্রা অ্যাটল এক বিস্ময়কর ভূ-গঠন। চারটি প্রধান দ্বীপ মিলে এক বিশাল লেগুনকে ঘিরে রেখেছে, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম অ্যাটল। এখানকার নিস্তব্ধতা যেন এক অব্যক্ত ভাষায় প্রকৃতির মহিমা বর্ণনা করে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে চলে আকাশের বুকে, সাগরের জলে ভেসে বেড়ায় দুর্লভ সামুদ্রিক প্রাণী। সবুজ গাছপালার ছায়ায়, প্রবালপ্রাচীরের নিচে লুকিয়ে আছে এক প্রাচীন ও অকৃত্রিম পরিবেশ। যেখানে প্রকৃতি নিজের নিয়মেই টিকে আছে শতাব্দীর পর শতাব্দী।

আলডাব্রার সবচেয়ে বিখ্যাত বাসিন্দা হলো দৈত্যাকার কচ্ছপ। প্রায় ১ লাখেরও বেশি কচ্ছপের বসবাস এই দ্বীপে। যা পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। অন্য কোথাও এদের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়লেও আলডাব্রার নির্জনতা ও কঠোর সংরক্ষণ ব্যবস্থা তাদের জীবনযাত্রা রক্ষা করে চলেছে। শুধু কচ্ছপ নয়, এখানকার পাখিজগতও অনন্য। ভারত মহাসাগরের শেষ উড়তে না পারা পাখি হোয়াইট-থ্রোটেড রেল, আলডাব্রা ড্রঙ্গো, ফ্রিগেট বার্ড, লাল-পা বুবি এসব দুর্লভ প্রজাতির নিরাপদ আশ্রয় এ দ্বীপ।

জলের নিচেও এক বিস্ময় অপেক্ষা করে। প্রবালপ্রাচীরের নিচে ঘুরে বেড়ায় মান্টা রে, টাইগার শার্ক, এমনকি ডুগং। সাগরের গভীরে যেন লুকিয়ে আছে এক রহস্যময় রাজ্য, যেখানে প্রকৃতি তার সমস্ত সৌন্দর্য উজাড় করে দিয়েছে।

আলডাব্রার এ নির্জনতা আর নিখুঁত বাস্তুতন্ত্র ধরে রাখতে মানুষের প্রবেশ এখানে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে এটিকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছে সেশেলস আইল্যান্ডস ফাউন্ডেশন (এসআইএফ)। পর্যটকদের প্রবেশ সীমিত। শুধু গবেষণার প্রয়োজনে বিজ্ঞানীরা এখানে কাজ করার সুযোগ পান। কারণ পৃথিবীতে এমন নিখুঁত ও মানবহীন পরিবেশ খুব কমই অবশিষ্ট আছে।

কিন্তু এ মনোরম পরিবেশ‌ও ঝুঁকিমুক্ত নয়। জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক উষ্ণতা ধীরে ধীরে এ দ্বীপের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। যদি আমরা এখনই সচেতন না হই, তবে হয়তো একদিন এ প্রাকৃতিক রূপ শুধু ইতিহাসের পাতায় স্মৃতি হয়ে থাকবে।

আলডাব্রা অ্যাটল প্রকৃতির এক জীবন্ত অলৌকিকতা। এটি হারিয়ে যাওয়া এক স্বর্গ। যা আজও টিকে আছে আমাদের ভালোবাসা ও সংরক্ষণের মাধ্যমে। আমরা যদি সচেতন থাকি, তবে হয়তো এ দ্বীপ আগামীর পৃথিবীর জন্যও রক্ষা করা সম্ভব হবে।

তথ্যসূত্র: ইউনেস্কো, সেশেলস আইল্যান্ডস ফাউন্ডেশন, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, বিবিসি আর্থ, উইকিপিডিয়া।

এসইউ/জিকেএস

Read Entire Article