দ্য ফরটি রুলস অব লাভ: একের ভেতরে দুই

1 month ago 11

সাঈদা আক্তার

বই ছাপার অক্ষরে অনুভবের স্তরকে ছুঁয়ে যাওয়ার নাম। তবে মানুষের মনকে প্রশান্তির চাদরে মুড়িয়ে চারপাশের হরেকরকম জটিলতা থেকে আলাদা এবং অন্যরকম ভুবনে ডুবিয়ে দিতে বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। বই একসঙ্গে চোখ, মন এবং মাথা তিনটি জায়গাকে এক বিন্দুতে উপনীত করতে পারে মুহূর্তে। কথা বলবো লেখক এলিফ শাফাকের লেখা সবচেয়ে আলোচিত বই ‘দ্য ফরটি রুলস অব লাভ’ নিয়ে।

আমার মতো বইয়ের নাম শুনে আপনিও ভাবতে বাধ্য নন; এটি ভালোবাসার চল্লিশটি নিয়ম। অদ্ভুত হলেও সত্য, এটি ভালোবাসার চল্লিশটি নিয়ম বা একেকটা তত্ত্ব ঠিক, তবে সেটি আধ্যাত্মিক বন্ধনের। যা হয়তো মানুষের মাঝে প্রতিফলিত হতে পারে নানা রূপে, নানা গল্পে।

বইয়ের সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, বইটি আসলে দুটো বইয়ের মিশেল। আপনি হাতে নিয়ে পড়বেন একটি বই কিন্তু আসলে আপনি পড়বেন দুটো ভিন্ন সময়ের, ভিন্ন গল্পের আলাপন। দারুণ সুন্দরভাবে দুটি কাহিনির সমাপ্তি ঘটেছে একবিন্দুতে। পড়তে গিয়ে ডুবে যাবেন আবার প্রচণ্ড রকমভাবে ভাবতে বাধ্য হবেন। আমি নিজে পড়তে শুরু করে অনেকবার বই বন্ধ করে চুপচাপ বসে থেকেছি। কখনো কখনো মনে হয়েছে, এখনই কারো সঙ্গে কথা বলতে হবে।

শুরুতেই আমরা দেখতে পাই, একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক আমেরিকান গৃহিণী এলা রুবিস্টাইনের খুব সাদামাটা জীবনের ছবি। আর দশটা দম্পতির মতো দীর্ঘদিনের দাম্পত্যের অপ্রেমে পরিচিত আলো-আঁধারের মিশেল এক প্রাত্যহিক জীবনের জলকাব্য। হঠাৎ সেখানে একঝলক রোদের মতো হাজির হয় বোস্টনের এক লিটারেরি এজেন্সির পার্ট টাইম রিডারের কাজ হিসেবে, এ জেড জাহারা নামে একজন লেখকের লেখা একটি গল্প যার নাম ‘মধুর অবিশ্বাস’। এলা নিজেও বুঝতে পারেনি এটি এমন এক বই, যা তার জীবনকেই বদলে দেবে।

বইটি ত্রয়োদশ শতাব্দীর পটভূমিতে। যা একজন ইতিহাসের সবচেয়ে দক্ষ কবি এবং সম্মানিত আধ্যাত্মিক নেতা, দার্শনিক মাওলানা জালাল-উদ-দীন রুমি এবং রহস্যময় দরবেশ শামস তাবরিজের দেখা এবং পরবর্তী সময়কে ধারন করে। একই সঙ্গে এলার জীবন এবং শামসের সাথে মাওলানা রুমির দেখা হওয়ার পরবর্তী সময়গুলো, যেখানে রুমি পরিচিত হলেন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ভালোবাসার অদৃশ্য নিয়মের সাথে। যার কাছে পৃথিবীর আলোর জগৎ এক। বইটি এগিয়ে গেছে সমানতালে দুটো কাহিনিকে সঙ্গে নিয়ে।

বইটির সুগন্ধিমাখা বিশেষত্ব, এখানে প্রতিটি চরিত্র তার নিজের কথা নিজেই বলবে। রুমি যখন কথা বলেছেন, সরাসরি তিনি নিজেই বলেছেন। বইটিতে চরিত্র আছে প্রায় ৩৫-৪০টি। কিন্তু আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে, প্রতিটি চরিত্র অসাধারণ ভাবে যৌক্তিক এবং প্রয়োজনীয়। বইয়ের প্রতিটি লাইন আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে পরবর্তী লাইনে।

এলিফ শাফাক আসলে লেখেননি, তিনি প্রতিটি চরিত্র এঁকেছেন। লেখার মাধ্যমে রঙিন করে আপনার চোখের সামনে ছবির মতো ভেসে আসবে বইটির সমান্তরাল দুটি কাহিনি। পার্শ্বচরিত্র হিসেবে ডেজার্ট রোজ, কিমিয়া চরিত্রগুলো ছুঁয়ে যাবে মনের গহীন অরণ্য। আসলে গল্প কীভাবে বলতে হয়, তা বুঝতে হলে প্রায় ৩৫০ পৃষ্ঠার বইটি পড়তে হবে।

যারা পড়তে পছন্দ করেন; তাদের আসলে একবার হলেও চেষ্টা করা উচিত বইটি পড়ার। সবশেষে বলবো, এলিফ শাফাক বলেই হয়তো আপনি বুঝতেই পারবেন না, আপনি কতগুলো পৃষ্ঠা পড়ছেন। জীবনের ভিন্ন সময়ের সমষ্টি হিসেবে সামনে আসবে এই বই। বলে রাখি ভদ্রমহিলা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে একটি পিএইচডি করছেন।

বই মানে চিন্তার স্বাধীনতা। বই মানে নিজেকে ভালোবাসার উপকরণ। আসুন একটু ঘুরে আসি ‘দ্য ফরটি রুলস অব লাভ’ থেকে।

লেখক: সাবেক শিক্ষক, উদয়ন শিশু বিদ্যালয়, চাঁদপুর।

এসইউ/এএসএম

Read Entire Article