ধানের শীষের টানাহ্যাঁচড়ায় ভারী দাঁড়িপাল্লা, এনসিপিও মাঠে

4 weeks ago 10

অন্তর্বর্তী সরকার সংসদ নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করায় ভোটের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসনে। আসনটি দীর্ঘ তিন যুগ আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। তবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ পতনের পর দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে বেশ শক্ত অবস্থানে জামায়াতে ইসলামী। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থীরা বিভক্ত হয়ে ধানের শীষ প্রতীক পেতে করছেন টানাহ্যাঁচড়া। বসে নেই জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে গড়ে ওঠা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ আসনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী (প্রীতি) লড়বেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

আসনটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪১। যার মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ২৭ হাজার ১৪৮ ও নারী ২ লাখ ১৬ হাজার ২৮৫। এছাড়া ৮ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।

বিগত নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে জানা যায়, আসনটিতে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের দবির উদ্দিন আহমেদ, ১৯৮৬ ও ১৯৯৬ আব্দুল লতিফ মির্জা, ২০০৮ ও ২০২৪ সালে শফিকুল ইসলাম শফিক, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে প্রয়াত এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন। এছাড়া ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে আব্দুল হামিদ তালুকদার, ১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিএনপি থেকে এম. আকবর আলী ও ১৯৯৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে শামছুল আলম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন৷

সম্ভাব্য এসব প্রার্থী এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ইসলামি জলসা, খেলাধুলাসহ সব অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। চষে বেড়াচ্ছেন প্রতিটি গ্রাম, পাড়া-মহল্লা। থেমে নেই অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমের প্রচারও। তারা নিজেদের প্রার্থিতা পরিচয়ে ভোটারদের দোয়া ও সমর্থন চাইছেন। তবে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর গ্রুপিং ও আধিপত্য বিস্তারে সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল হচ্ছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জেলার একমাত্র এ আসনে ভোটের মাঠে বিএনপির শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। তিনি নির্বাচনী মাঠেও বেশ সক্রিয়। সড়ক ও হাটবাজারে ফেস্টুন-ব্যানার এবং পোস্টার সাঁটিয়েছেন তিনি। আসনটিতে এবার জামায়াত চমক দেখাবে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

এ আসনের প্রবীণ ভোটাররা বলছেন, বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য এম. আকবর আলী মনোনয়ন পেলে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তাছাড়া বিএনপির একসময়ের মিত্র জামায়াত খুব সহজেই জয়ী হবে। যদিও বিএনপির শক্তি বিশাল কর্মীবাহিনী। তবে ৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজি, মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, নিজ দলে গ্রুপিং ও দখলের অভিযোগ জনমনে দলটিকে কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

অন্যদিকে ভোটারদের কাছে ক্লিন ইমেজের একক প্রার্থী নিয়ে আধিপত্য দেখাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। এনসিপি নতুন দল হিসেবে তরুণ ভোটারদের কিছুটা নজর কাড়লেও সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতি পায়নি বলে জানান তারা৷

আসনটিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মূল আলোচনায় সাবেক সংসদ সদস্য ও দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এম. আকবর আলী। তিনি ১৯৯১ ও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়ে এলাকার রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সর্বোচ্চ কাজ করেছেন। যার প্রতিদান হিসেবে ভোটাররা তাকে আবারও মূল্যায়িত করবেন তার বিশ্বাস।

ধানের শীষের টানাহ্যাঁচড়ায় ভারী দাঁড়িপাল্লা, এনসিপিও মাঠে
ছবিতে বাম দিক থেকে সিমকী ইমাম, আব্দুল ওয়াহাব, কে. এম শরফুদ্দিন মঞ্জু ও খান সাঈদ হাসান জ্যোতি

এম. আকবর আলী জাগো নিউজকে বলেন, ছাত্রজীবন থেকে এখন পর্যন্ত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে কাজ করে যাচ্ছি। দলের প্রতি আমার ত্যাগ-তিতিক্ষা মিলে দল আমাকে মনোনয়ন করবে-এটা আমি দৃঢ়ভাবে আশা করি।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে এনসিপি সিরাজগঞ্জে পদযাত্রা করেছিল। সেখানে প্রার্থী হিসেবে দলের শীর্ষ নেতারা আমার নাম ঘোষণা করেছিল। ওটা অবশ্য চূড়ান্ত নয়। দল এখনো কাউকেই চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেনি। তবে আমি আমার নিজ এলাকার (উল্লাপাড়া) মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছি।

এ আসনে বিএনপির অন্য প্রার্থীরা হলেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সিমকী ইমাম, অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি ও বাংলাদেশ পুলিশ সংস্কার কমিটির সদস্য সচিব খান সাঈদ হাসান জ্যোতি, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কে. এম শরফুদ্দিন মঞ্জু, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহাব ও জেলা শ্রমিক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিয়ামুল হাকিম সাজু।

সম্ভাব্য এসব প্রার্থী এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ইসলামি জলসা, খেলাধুলাসহ সব অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। চষে বেড়াচ্ছেন প্রতিটি গ্রাম, পাড়া-মহল্লা। থেমে নেই অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমের প্রচারও। তারা নিজেদের প্রার্থিতা পরিচয়ে ভোটারদের দোয়া ও সমর্থন চাইছেন। তবে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর গ্রুপিং ও আধিপত্য বিস্তারে সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল হচ্ছে বলে মনে করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সিমকী ইমাম জাগো নিউজকে বলেন, একজন নারী হয়ে রাজপথে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। সবসময় দলের নির্দেশনা মেনে চলেছি। দল আমাকে যখন যে অবস্থায় যেখানে দায়িত্ব দেবে আমি সেটিই করব। তবে আগামীতে মনোনয়ন পাব বলে আশা করছি।

দলটির আরেক প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি খান সাঈদ হাসান জ্যোতি বলেন, ১৯৭৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই ছাত্রদলের ছাত্ররাজনীতি শুরু করেছিলাম। পরে ১৯৮৮ সালে পুলিশ ক্যাডারে প্রথম স্থান অর্জন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে চাকরিতে যুক্ত হই। তারপর রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। কিন্তু ২০১১ সালে জীবনে এক অন্ধকার নেমে আসে। আমাকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় আসামি করা হয়।

এ আসনের প্রবীণ ভোটাররা বলছেন, বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য এম. আকবর আলী মনোনয়ন পেলে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তাছাড়া বিএনপির একসময়ের মিত্র জামায়াত খুব সহজেই জয়ী হবে। যদিও বিএনপির শক্তি বিশাল কর্মীবাহিনী। তবে ৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজি, মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, নিজ দলে গ্রুপিং ও দখলের অভিযোগ জনমনে দলটিকে কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

তার ভাষ্য অনুযায়ী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে অস্বীকৃতি করায় তাকে আসামি করা হয়েছিল। পরে আদালতের আদেশে কারাভোগ ও জরিমানা প্রদানের পর ২০২২ সালের মার্চে তিনি মুক্তি পান। সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তাও আশাবাদী দল তাকে অবশ্যই উল্লাপাড়ার উন্নয়নে মনোনীত করবেন।

উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক শাহজাহান আলী জাগো নিউজকে বলেন, যদি জনপ্রিয়তা, সততা ও আদর্শের দিক দিয়ে বিচার করা হয় তাহলে এ আসনে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের বিকল্প নেই। জনগণ তাকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। তিনি যেখানেই যাচ্ছেন, লোকজন তাকে মৌমাছির মতো ঘিরে ধরছেন। জনগণ এবার দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত স্বচ্ছ ইমেজের প্রার্থীকেই বিজয়ী করবেন।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে কথা হয় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব দ্যুতি অরণ্য চৌধুরীর (প্রীতি) সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে এনসিপি সিরাজগঞ্জে পদযাত্রা করেছিল। সেখানে প্রার্থী হিসেবে দলের শীর্ষ নেতারা আমার নাম ঘোষণা করেছিলেন। ওটা অবশ্য চূড়ান্ত নয়। দল এখনো কাউকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেনি। তবে আমি আমার নিজ এলাকার (উল্লাপাড়া) মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছি।

এমএএম/এসএইচএস/এমএফএ/জেআইএম

Read Entire Article