ধীরে ধীরে খেলে কি সত্যি ওজন কমে?

3 hours ago 2

আস্তে আস্তে খাও, খাওয়ার মাঝে কথা বলতে হয় না কিংবা মন দিয়ে খাও এই ধরনের কথাগুলো শুনেনি এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে এসব কথা কেন বলা হতো, তা অনেকেই জানেন না। অনেকে ভাবেন ধীরে খাওয়ার সঙ্গে ওজন কমার সম্পর্ক রয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিজ্ঞান কী বলছে? সম্প্রতি বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে ওঠে আসে এসব তথ্য।

খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ লেসলি হেইনবার্গ দীর্ঘ সময় ধরে দ্রুত ও ধীরগতিতে খাওয়ার স্বাস্থ্যগত প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, ধীরে বা সময় নিয়ে খেলে অনেক স্বাস্থ্যগত উপকার পাওয়া যেতে পারে।

এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগবে, ধীরে খাচ্ছি না দ্রুত খাচ্ছি সেটা বুঝবো কীভাবে? এইটা বোঝার জন্য সহজ একটা থিওরি কথা বলেছেন লেসলি হেইনবার্গ। 

তার মতে, খাবার খাওয়ার পর পাকস্থলী থেকে মস্তিষ্কে পেট ভরার সংকেত পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ২০ মিনিট। অর্থাৎ, যদি কেউ ২০ মিনিটের কম সময়ে খাবার শেষ করে, সেটাই দ্রুত খাওয়া হিসেবে ধরা হয়। আর যদি ধীরে, অর্থাৎ অন্তত ২০ মিনিট বা তার বেশি সময় নিয়ে খাওয়া হয়, তবে খাবার ভালোভাবে হজম হয়। সেই সঙ্গে দীর্ঘ সময় পেট ভরা অনুভূতি থাকে। যার ফলে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাড়তি কিছু খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। ফলে সঠিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।

অন্যদিকে দ্রুত খাওয়ার সময় খাবার ভালোভাবে চিবোনো হয় না। ফলে মস্তিষ্কও ঠিক সময়ে পেট ভরার সংকেত পায় না। এর কারণে অজান্তেই অতিরিক্ত খাওয়া হয়ে যায় এবং শরীর ভারী লাগে। দ্রুত খাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে—এর মধ্যে ব্যস্ততা বা কাজের চাপ একটি বড় কারণ। এ ছাড়া মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তাও অনেককে তাড়াহুড়া করে খেতে প্ররোচিত করে।

আবার দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে বা কঠোর ডায়েট মেনে চলার পর অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগে। যার পলে অনেকেই দ্রুত খাবার খান। তবে এতে খাবারকে উপভোগ করার সুযোগ থাকে না। ফলস্বরূপ হজমের সমস্যা দেখা দেয় এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়।

দ্রুত খাবার খাওয়া ফলে শরীরে যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে-

হজমে সমস্যা

পুষ্টিবিদ তাসনিম চৌধুরীর মতে, খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়াটা হজম প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু দ্রুত খাওয়ার সময় মানুষ বড় বড় গ্রাস নিয়ে কম চিবিয়ে গিলে ফেলে। ফলে খাবার বড় টুকরো আকারে পাকস্থলীতে পৌঁছে যায়। এগুলো ভাঙতে পরিপাকতন্ত্রকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়, যার কারণে বিভিন্ন বিপাকজনিত সমস্যা দেখা দেয়।

ওজন বৃদ্ধি

দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস অনিচ্ছাকৃত ওজন বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। ‘হারবার্ড হেল্থ পাবলিকেশন্সের’ এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দ্রুত খান তারা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করেন। কারণ, পাকস্থলী ভরার বার্তা মস্তিষ্কে পৌঁছাতে কমপক্ষে ২০ মিনিট সময় লাগে। ফলে অজান্তেই অতিরিক্ত খাবার খাওয়া হয়ে যায় এবং ওজন বাড়ে।

পুষ্টি শোষণে ঘাটতি

পুষ্টিবিদ তাসনিম চৌধুরীর মতে, দ্রুত খাওয়ার অভ্যাসে শরীর খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যথাযথভাবে শোষণ করতে পারে না। ফলে যতই পুষ্টিকর খাবার খাওয়া হোক না কেন, তার ভিটামিন, খনিজ ও অন্যান্য উপাদান শরীরে সঠিকভাবে কাজে লাগে না।

চলুন জেনে নেওয়া যাক, খাবার খাওয়া সঠিক নিয়ম- 

সময় নিন

খাবারের জন্য অন্তত আধা ঘণ্টা সময় দিন। এতে প্রয়োজনের আগে বেশি খাওয়া না হয়ে তৃপ্তি ও পেট ভরার অনুভূতি পাওয়া যাবে।

ভালো করে চিবিয়ে খান

প্রতিটি গ্রাস ধীরে ধীরে ভালোভাবে চিবিয়ে খান। ডা. হেইনবার্গের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিটি মুখভর্তি খাবার ১৫ থেকে ৩০ বার চিবানো উচিত। প্রতিটি কামড় নেওয়ার পর হাত বা চামচ নামিয়ে রাখুন, যাতে পরবর্তী কামড় নেওয়ার তাড়া না থাকে। খাবার যদি বেশি শক্ত বা শুকনো মনে হয়, চিবানোর সময় সামান্য পানি খান—এতে খাবার সহজেই নরম হয়ে যাবে।

Read Entire Article